Image description

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার চার প্রবেশ পথে হেফাজত ইসলামের অবরোধ কর্মসূচির আগের দিন ৪ মে শাপলা চত্বর দখলের পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। হেফাজতের সঙ্গে যোগসূত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে ফেলে দাবি আদায়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের। এ লক্ষ্যে ৪ মে সমাবেশের ভেন্যু হিসেবে শাপলা চত্বর চেয়ে আবেদনও করেছিল দলটি।

একযুগ আগের সেই ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৫ মে শাপলা চত্বরে কোনো কর্মসূচি ছিল না হেফাজত ইসলামের। বরং ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল শাপলা চত্বরের বিশাল সমাবেশ থেকে ওই বছর ৫ মে ঢাকার চার ‘প্রবেশ পথ অবরোধ’ কর্মসূচি ছিল সে সময়ের আলোচিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজত ইসলামের। তবে, ৫ মে সকাল থেকে ঢাকার চার প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ি, নয়াবাজার ব্রিজ, গাবতলী এবং আব্দুল্লাপুরে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে শাপলা চত্বরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার একটা ‘মাস্টার প্ল্যান’ ছিল হেফাজতের। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাপলা চত্বরেই অবস্থানের পরিকল্পনা ছিল তাদের।

হেফাজতের এই পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল ঢাকা মেট্টপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দেয় বিএনপি। ওই চিঠিতে ৪ মে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমোদন চায় দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা এই সমাবেশ ডেকেছিল। ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে ওই কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিল বিএনপি।

পূর্বঘোষিত সমাবেশের প্রস্তুতি সভা শেষে ২৯ এপ্রিল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা সমাবেশের জন্য শাপলা চত্বর চেয়ে আবেদন করেছি। এরই মধ্যে এই স্থানে বিভিন্ন দলের কর্মসূচি করতে অনুমতি দিয়েছে সরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শাপলা চত্বরে ১৮ দলীয় জোটকে সমাবেশ করার অনুমতি দেবে।’

ওই সমাবেশ সফল করার ব্যাপারে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতাও চান ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের এই সমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলেন। শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে বিকল্প হিসেবে কাকরাইল নাইটেঙ্গল মোড়ে সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি।

কিন্তু, বিএনপি-হেফাজত ইসলামের এই যৌথ পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। বরং রানাপ্লাজা ট্রাজেডির কথা চিন্তা করে পূর্ব ঘোষিত ২ মে দেশব্যাপী ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য ওই হরতাল ডাকা হয়েছিল সাভার ট্র্যাজেডিতে ব্যাপক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে।

ওই সময় বিএনপির সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাদেক হোসেন খোকা, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল মান্নান, বরকত উল্লাহ বুলু, ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খন্দকার, আবদুস সালাম, হারন অর রশীদ, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আসাদুল হাবিব দুলু, মনিরুল হক চৌধুরী, জাফরুল হাসান চৌধুরী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খায়রুল কবীর খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নজরুল ইসলাম খান রাজন, সাখাওয়াত হাসান জীবন, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর শরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, হাফেজ আবদুল মালেক, এম এ মালেক, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, হুমায়ুন ইসলাম খান, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের মতো তরুণ নেতারা। যাদের অনেকেই এখন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছেন। আবার অনেকেই প্রয়াত।

একযুগ আগের সেই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবসময় সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে নেই। সবাইকে সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞও হতে নেই। ২০১৩ সালের ঘটনা নিয়ে এখন কথা বলব কেন? এখন কথা বলব ২০২৫ নিয়ে।’

ড. খন্দকার মোশারর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওই সময় আমরা ভোটাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছিলাম। হেফাজত ইসলামও তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলন করছিল। তাদের কর্মসূচি ছিল ৫ মে, আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম ৪ মে। কিন্তু, কর্তৃত্ববাদী সরকার আমাদের সমাবেশ করতে দেয়নি। ৫ মে গভীর রাতে হেফাজতের ওপর চালিয়েছিল নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। এই নির্মমতা জাতি কোনো দিন ভুলবে না।’