
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে, এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা। বিচার ও সংস্কারের জন্যই মানুষ রাস্তায় নেমেছিল।
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ এনে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সমাবেশ করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার বিকাল তিনটায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট এলাকায় দলটির এ বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। এ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, বিচার চলাকালীন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আইন করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলেছিলাম; জুলাইকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছিলাম; কিন্তু বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে সেই জুলাই ঘোষণাপত্র এখনো আসছে না। ভুলে গেলে চলবে না- জুলাই গণভুত্থানের ফলেই কিন্তু আজকে বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করছে; যারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে; তারা কিন্তু এই শহিদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের ফলেই স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে। ফলে অবিলম্বে এ জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যে জুলাই সনদের কথা বলছি, যে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল পরিবর্তন; শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে মৌলিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে। জুলাই সনদে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথাটি থাকতে হবে।
এই এনসিপি নেতা আরও বলেন, আমরা একটি নতুন সংবিধানের কথা বলছি- সেই নতুন সংবিধানের জন্য আগামী নির্বাচন, আইনসভা এবং গণপরিষদ নির্বাচন একত্রে করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শহিদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধাদের দায়িত্ব নিতে হবে, রাষ্ট্র এবং সরকারকে এবং তাদের মানবিক মর্যাদার নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিবি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন বন্দোবস্ত বিনির্মাণে সংগঠিত হয়েছে। আমরা জানি আমাদের হাতে সময় অল্প কিন্তু আমাদের দায়িত্ব অনেক। সেই জাতি আমাদের ওপর ৫ আগস্ট আস্থা রেখেছিল- আমরা বিশ্বাস করি আগামীতে এনসিপির ওপরেই জনগণ তাকিয়ে আছে এবং সে আস্থা রাখছে। তাই আমরা দ্রুত সংঘঠিত হবো, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই একটি শৃঙ্খলিত দল হিসেবে জনগণের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাব। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যাব, প্রতিদিন দরজায় দরজায় গিয়ে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দেব। বন্ধুরা আপনারা প্রস্তুত হন- জেলায় জেলায়, ইউনিয়নে ইউনিয়নে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আমরা আসছি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য আপনারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ তৈরি করুন। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় আমরা জনতার আদালত তৈরি করব।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, যদি এ সরকার বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় তবে আমরা বসে থাকব না, জনতার আদালতে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিজমের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বন্ধুরা যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু এবং প্রযুক্তির জন্য আমরা একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করব এবং একটি মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করব। প্রিয় বন্ধুরা আমরা বলতে চাই এ ঢাকা বা বাংলাদেশ ছিল এই বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের মিলনকেন্দ্র, বহু সংস্কৃতি, বহু সভ্যতার প্রাণ কেন্দ্র।
নাহিদ বলেন, আমরা সামাজিক মূল্যবোধ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বহু সংস্কৃতির ভিত্তিতে আমাদের নতুন সমাজ গঠন করব এবং ইনশাআল্লাহ ঢাকায় আগামী দিনে এই বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ এশিয়ার কান্ডারি হবে দক্ষিণ এশিয়াকে নেতৃত্ব দেবে।
এর আগে সমাবেশ এনসিপির নেতারা বলেনন, আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে, এই সিদ্ধান্ত জনগণ গত বছরের ৫ আগস্টই দিয়েছে। এরপরও কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে জুলাই যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করবে।