
মদ্যপান বা অ্যালকোহলের নেশা সর্বনাশা! সারা বিশ্বে এই আসক্তির কারণে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। প্রতি ২০টি মৃত্যুর মধ্যে একটি মদ্যপানের কারণে ঘটে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, নৃশংসতা, অপরাধ প্রবণতা, নির্যাতন, নানা রোগ ও অসুস্থতা এর জন্য দায়ী।
মদ্যপান বা অ্যালকোহল মস্তিস্কে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক, ব্রেন, মুড বা আচরণ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, ড্রাগের উপর নির্ভরতা বাড়ায় এমনকি বেহুঁশ হয়ে মানুষ কি করছে তা অনুধাবন করতে পারে না। অ্যালকোহল বা মদ পান করে গাড়ি চালানোর প্রত্যক্ষ কুফল হিসেবে অনেক লোক মারা গেছে!
রসায়নে মদ বা অ্যালকোহল বলতে এমন সব জৈব যৌগকে বোঝায়, যাদের হাইড্রক্সিল কার্যকরী গ্রুপটি একটি অ্যালকাইল বা অ্যারাইল গ্রুপের কার্বনের সাথে একটি বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রেই অ্যালকোহল বলতে ইথাইল অ্যালকোহলকেই বোঝানো হয়েছে। অ্যালকোহল বা ইথাইল অ্যালকোহল মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। লিভারের উপর অ্যালকোহলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমরা প্রায় সকলেই জানি।
মদ্যপানের সঙ্গে যে রোগটি সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে, সেটি হল ক্যানসার। গবেষণায় দেখা গেছে সালে যে ৩০ লক্ষ মানুষ মদ খেয়ে মারা যায়, তার মধ্যে ২৮ শতাংশ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কোনও না কোনও দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন, ২১ শতাংশ পেটে সমস্যার কারণে মারা গিয়েছেন, ১৯ শতাংশ হার্টের সমস্যার কারণে প্রয়াত ও বাকিরা ছোঁয়াচে রোগ, ক্যানসার বা মানসিক রোগের কারণে মৃত বলে জানানো হয়েছে এই রিপোর্টে।
মদ্যপান বা অ্যালকোহলের যথেচ্ছ ব্যবহারে মানুষের যক্ষ্মা, এইচআইভি ও নিউমোনিয়ার মতো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মদ্যপানের দিক থেকে গোটা বিশ্বের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ইউরোপ। তার পরেই স্থান আমেরিকার। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়ার দেশগুলোতে মদ্যপানের হার অনেকটাই কম।
অন্যদিকে অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। সময়ের সঙ্গে মদ্যপান থেকে দীর্ঘকালীন রোগ হতে পারে। অতিরিক্ত মদ্যপান করলে ফ্যাটি লিভার, অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস এবং সিরোসিস হতে পারে। এমনকি, মদ্যপান থেকে লিভারের ক্যানসারও হতে পারে। চিকিৎসকেদের মতে, মদ্যপান ত্যাগ করলে ধীরে ধীরে লিভার আবার সুস্থ হয়ে ওঠে।
মদ্যপান থেকে লিভার সিসোসিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। চিকিসকেরা জানিয়েছেন, মদ্যপান বন্ধ করলে সিরোসিস না-ও সারতে পারে। কিন্তু রোগী মদ্যপান ত্যাগ করলে, অতিরিক্ত ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কমে যেতে পারে।
সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে পারলে লিভার ভাল থাকে। আপেল, আঙুর, পালং শাক এবং গাজর আমাদের লিভারের পক্ষে ভাল। পাশাপাশি, ব্রাউন রাইস এবং ওট্স ও খাওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত মশলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভাল।