
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ-সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক নেতার ‘কলিজা টেনে ছিঁড়ে ফেলা’ ও তার দল জামায়াতকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিছুর রহমানকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে জেলা বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (১ মে) জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ স্বাক্ষরিত নোটিশ ওই বিএনপি নেতা বরাবর পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আনিছুর রহমানকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে আপনি প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান, অসংলগ্ন ও উত্তেজনাপূর্ণ ভাষায় বক্তব্য প্রদান করছেন এবং একটি রাজনৈতিক দল সম্পর্কে অশালীন ও অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। ভিডিওতে ব্যবহৃত ভাষা এবং বক্তব্য সামগ্রিকভাবে দলীয় শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক সহনশীলতার পরিপন্থি। এ কারণে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা পত্রপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হলো।’
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপি নেতা আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, দল আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি ব্যাখ্যা দেব।
আত্মপক্ষ সমর্থনে এই বিএনপি নেতা দাবি করেন, জামায়াতের ওই ছেলে (রুবেল মিয়া) আমার দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দলের নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছিল। এ ঘটনায় দলের ছেলেরা ওর ওপর উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে আমি ওভাবে ধমক দিয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারছি, যা বলেছি তা ঠিক হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে এমনটা হয়েছে। তবে ওই ছেলে পুরো ঘটনার খণ্ডিত অংশের ভিডিও ছেড়েছে। আমি দলের কাছে জবাব দিয়ে দেব।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ বলেন, অভিযুক্ত আনিছুর রহমানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজারহাট থানা মোড়ে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বায়তুলমাল সম্পাদক রুবেল মিয়াকে আটকে হুমকি দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিছুর রহমান। এ ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে জামায়াত নেতা রুবেলকে উদ্দেশ করে ওই বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘কলিজা টানি ছিড়ি ফেলবো- একবারে টানি ছিড়ি ফেলবো তোমার, চেনো তুমি -এ চেনো! খুব পাওয়ার দেখাও জামায়াতের, একবারে নিশ্চিহ্ন করি দিবো জামায়াত। চেনো বিএনপি!’ পরে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
ভুক্তভোগী রুবেল মিয়ার অভিযোগ, গত ২১ এপ্রিল উপজেলা ভূমি অফিসে আমাদের দুজন কর্মীকে মারপিঠ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। আমি এর প্রতিবাদে ‘এক স্বৈরাচারের বিদায় হয়েছে, নব্য-স্বৈরাচারের সূচনা হওয়ার উপক্রম’ এমন একটি লেখা ফেসবুকে পোস্ট দেই। এছাড়াও মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) স্থানীয় চান্দামারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন নিয়ে অভিভাবক সমাবেশ হয়।
ওই সমাবেশ থেকে স্থানীয় ব্যক্তি অ্যাডভোকেট আহমদ আলী (উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি) ভাইকে সভাপতি করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু বিএনপির লোকজন উপজেলা থেকে শো-ডাউন করে স্কুলে গিয়ে ওই নাম কেটে দেয়। তারা তাদের প্রার্থীদের নাম দিয়ে চলে যায়। আমি এর প্রতিবাদ করি। এই দুই ঘটনায় তারা আমাকে বিকেলে তুলে নিয়ে থানা মোড়ে একটি মেডিসিনের দোকানে নিয়ে অমন বাজে আচরণ করে। চড়-থাপ্পড় মারে। প্রাণনাশের হুমকি দেয়। জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দেয়।