Image description

Faham Abdus Salam( ফাহাম আবদুস সালাম)


বিএনপির কোনো রাজনীতি নাই - এই কথাটি আমি ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি। আগে আওয়ামী লীগের আর বাম্পন্থী লোকেরাই কথাটা বলতো। এখন নিশ্চই আরো অনেকে বলবেন। কথাটা কৌতুককর। পীড়িত মানুষদের কনফিডেন্স জাগানিয়া কথা।
৮০‘র দশকে দেখেছি - মানুষ অনেক আশা নিয়ে সালসা খেতো। তারা সম্ভবত জাদু আশা করতো।
গ্রামের ব্রাজিলের ফুটবল সাপোর্টারদের দেখবেন আর্জেন্টিনা ফুটবল পারে না টাইপ কথা বলে তারা একটা প্রশান্তি পায়। এহসাস-এ কমতরি ভয়ানক জিনিস কিন্তু এর সাথে মূর্খতা যুক্ত হলে আমি দেখেছি এক ধরনের দেখনদারি কনফিডেন্স তৈরী হয়।
আমি লক্ষ্য করেছি মফস্বলের লোকেরা (মফিজ) বামপন্থা শিখলে কিছু মুখস্থ কথা বলে বাহবা কুড়াতে চায়। একটা নাটকে দেখেছিলাম এরকম একজন মফিজ শিক্ষক আলাপ শুরু হলে আঙ্গুল দিয়ে চতুর্ভুজ এঁকে কথা বলে। তারা কিছু শেখানো কথাকে গভীর দর্শনের কথা বলে মনে করেন ও বারবার বলেন। আমার শুনতে ভালো লাগে।
বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল না - এর কোনো ন্যারেটিভ নাই। তাহলে এই দলের এতো জনপ্রিয়তা কেন? রাজনীতি না করেই একটা দল এতো বড় হোলো কীভাবে? কোনো ন্যারেটিভ যদি না থাকে - তাহলে গত ১৫ বছরের প্রায়-কেয়ামতি অবস্থায় টিকে থাকলো কীভাবে? এর উত্তরে রাজনীতি সচেতন মফিজ বলবেন যে - বিএনপি আসলে এন্টি ইন্ডিয়া ও এন্টি আওয়ামীদের প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশে অন্তত ৭০% লোক এন্টি আওয়ামী ও অন্তত ৯০% কোনো না কোনো মাত্রার এন্টি ইন্ডিয়া মানসিকতা বহন করে বলে আমার অনুমান। তো এই এন্টি ইন্ডিয়া ও এন্টি আওয়ামীদের প্ল্যাটফর্ম অন্য কেউ বানাতে পারলো না কেন? ইসলামিস্টদের তো পারার কথা ছিলো সবার আগে। আপনার তো রেডী মেইড টাইমলেস এপিল আছে ইসলামের। বাংলাদেশের সবচাইতে কড়া ডোজের এন্টি ইন্ডিয়ানদের জোগাড় করে একটা পলিটিকাল পার্টি বানান। দুনিয়ার যেখান থেকে পারেন - টোকায় নিয়ে আসেন। এলেকশানে পাৰ্টি দাড়া করান। পুরা দেশ থেকে ১টা সীট পাবে না। গাওসিয়া মার্কেটে দাড়ায় পাদ মারলে যতো লোক গন্ধ পাবে - পুরা দেশে ততোগুলো ভোট নাও পেতে পারে এই পার্টি।
সিরিয়াসলি। এটা তো একটা দার্শনিক প্রশ্ন। বিএনপিই কেন এন্টি আওয়ামী লীগদের প্ল্যাটফর্ম?
আসলে আপনি যদি লেনিনিষ্ট আইডিয়োলজি পড়ে রাজনীতি করেন - পৃথিবীতে কোনো রাজনীতিকেই আপনার রাজনীতি মনে হবে না। কারণ ঐ রাজনীতি এমনই স্ট্রীম-লাইনড - বিশেষ করে বাংলাদেশে - যে আপনার হবে যেই দলের সেন্ট্রাল লীডারের কথায়, কর্মীরা হারিকিরি করে না; কিংবা পার্টি লীডারের তদবীরে কর্মীর চাকরি হয় না - সেইটা কোনো পার্টিই না। আপনি অনেক সময় দেখবেন যে অল্প বয়সে যে মেয়ের ডিভোর্স হয়েছে সে তার বান্ধবীদের ডিভোর্সের সুফল বর্ণনা করে। তার চোখে যে ছেলে নাক ডাকে - সে হয়তো স্বামী হওয়ার যোগ্য না। কারণ তার চোখে ডিভোর্সই বিয়ের একমাত্র গ্রহণযোগ্য পরিণতি। তার চোখে যে দাম্পত্য ডিভোর্সের প্রস্তুতি না - সেইটা আসলে দাম্পত্যই না। আপনি হেফাজতে ইসলামীর কর্মীকে জিজ্ঞেশ করে দেখেন - তার চোখে যে মেয়ে শাড়ী পরলে ব্লাউজের একটা স্লীভ দেখা যায় - সেই শাহবাগী।
পৃথিবীতে এমন কোনো বড়ো রাজনৈতিক দল নাই - যার মধ্যে স্ববিরোধিতা নাই। রাজনৈতিক দল এমন এক ধরনের সংগঠন যার মধ্যে স্ববিরোধিতা থাকতেই হবে। কারণ একটা রাজনৌতিক দল ব্যবসা করে না - যার লক্ষ্য মুনাফা। তার কিছু ব্রড প্রিন্সিপাল থাকে কিন্তু মূলত তাকে একটা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি রিএক্ট করতে হয়। জনগণ একেক সময় একেক জিনিস চায়। এবং রাজনৈতিক দল ও একেক সময় একেক জিনিস চায়। তাই রাজনৈতিক দলকে স্ববিরোধী হতেই হয়। প্রশ্ন হোলো এই স্ববিরোধিতা কি জনগণের পক্ষে যায় না শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে যায়? যদি এই স্ববিরোধিতা শুধুমাত্র শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে যায় - আপনাকে আওয়ামী লীগের ভাগ্য বরণ করতে হবে।
অনেকেই যেটা বুঝতে পারেন না - সেটা হোলো একটা মধ্যপন্থী দল
কোনোদিনও ন্যারেটিভের দখল নিতে পারে না। মধ্যপন্থার কিছু ইনহেরেন্ট অসুবিধা ও সুবিধা আছে। অসুবিধা হোলো যে একজন একই সাথে মধ্যপন্থী ও রেবেল রাউজার হতে পারবেন না। ফলে ন্যারেটিভের মাঠে কোনোদিনও মধ্যপন্থার জয় হবে না। আপনি যদি বলেন যে জামাতীদের/হিজবুতদের ভরে দাও, গুড়িয়ে দাও - কী বললে বিরোধী শিবিরের মানুষ খুশী হবে?
শাহবাগীদের ভরে দাও, গোসল দাও।
মধ্যমপন্থী হলে আপনাকে বলতে হবে - ভাই আপনারা কেউ কাওকে ভরে দিয়েন না - পিলিজ লাগে! দরকার নাই। কিন্তু এই কথা বললে কি মার্কেট পাওন যাইতো? নেভার। আপনি মধ্যপন্থা দিয়ে কোনোদিনও বাংলাদেশে ন্যারেটিভ দখল করতে পারবেন না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ন্যারেটিভে এক্সট্রিমিজম লাগে। এটাই বাস্তব। অন্তত ২০২৫ পর্যন্ত।
কিন্তু মধ্যপন্থা দিয়ে আপনি ভোট পাবেন। খালেদা জিয়া তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আজকে নাহিদকে সেই তাচ্ছিল্য করা হয় না - যেই তাচ্ছিল্য ২০০০ সালে খালেদা জিয়াকে নিয়ে করা হতো বাংলাদেশের মিডিয়ায়। ভোট কিন্তু তিনি পেতেন, বিএনপিও পেতো।
মধ্যপন্থার স্ট্রেংথ কী - আজকে আপনি বুঝবেন না। বুঝবেন নির্বাচনের পরের দিন। ইন ফ্যাক্ট আমি বলবো যে এনসিপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখানেই। আপনি বিএনপি থেকে আলাদা হবেন কীভাবে?
আমি বলতে পারবো না শুরু থেকে কতোটা বুঝে এই জিনিসটা হয়েছে - কিন্তু বিএনপির রাজনীতির জিনিয়াস হোলো সে কোনোকিছুতেই ওভারকমিট করে না। তার পলিটিকাল বয়ান মধ্য ডানের একটা বড় জায়গা জুড়ে। সে এতোটাই ফ্লেক্সিবল যে তার এলাকায় এসে এনসিপি যাই বলুক - বিএনপি বলতে পারে - আমি এর পক্ষে। আমি তো তাই বলছি ১৯৭৮ থেকে। বয়ানের ক্ষেত্রে বিএনপি থেকে কনট্রাস্ট করতে হলে আপনাকে মধ্যবামের দিকে - অথবা অতি ডানের দিকে ঝুকতেই হবে। আর ওখানে গেলেই বিএনপির লাভ।
বিএনপি অনায়াসে বলতে পারে আমি ৭১ এর পক্ষে আবার আমি ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষে। কিন্তু আমি ইসলামী আইন এন্ডোর্স করি না। আপনি গালি দিতে পারেন - শালা তোগো কোনো ক্যারেক্টারই নাই। গ্রেট! নির্বাচনের পরের দিন বুঝবেন এই স্ট্যান্সের জোর কোথায়? কারণ এটাই বাংলাদেশের সাধারণ একটা মানুষ। সে কোনো কিছুতেই কমিটেড না। সে একটু ভালো থাকতে চায়। এতোটুকুই তার চাওয়া।
বিএনপিকে আপনি রাজনীতির ময়দানে হারাতে পারবেন না। এই সেন্সে যে কেউ না কেউ ঠিক এই রাজনীতিটাই বাংলাদেশে করবে। করতেই হবে। বিএনপির গোমাসা করতে পারে কেবল সে নিজে কিংবা কোনো সুপার পাওয়ার। সে যদি গভর্ন্যান্স ডেলিভার করতে না পারে - তার গোমাসা হবে কিংবা সুপার পাওয়াররা একাট্টা হয়ে পিছে লাগে - তাহলেও তার গোমাসা হবে। কিন্তু পলিটিকাল ন্যারেটিভের জায়গায় সে এমন একটা সুইট স্পট ধরে রেখেছে - যেখানে আপনি তাকে পরাস্ত করতে পারবেন না। সে আপনাকে খেয়ে ফেলবে কারণ তার ফার্স্ট মুভার এডভ্যান্টেজ আছে।