Image description

Farhad Mazhar ( ফরহাদ মজহার)


১. জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচনের আগে ‘মৌলিক পরিবর্তন’ চায়। কিন্তু এর মানে কি? এটা কংক্রিট কোন দাবি না। সেটা আরও জট পাকিয়ে গিয়েছে যখন তারা দাবি করছেন, ‘মৌলিক পরিবর্তন’ বা ‘সংস্কার’ মানে হচ্ছে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’। আরও বড় ভুল করবার আগে বিষয়টি পর্যালোচনা দরকার।
মনে রাখতে হবে ৫ অগাস্টে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণক্ষমতা বা গণসার্বভৌমত্ব (Popular Sovereignty) কায়েমের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তার বাস্তবায়ন হয় নি। পুরানা সংবিধানই বহাল রাখা হয়েছে এবং পুরানা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েই সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার গঠিত হয়েছে। ছাত্র-তরুণরা পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে পারে নি, পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ ছিল বাংলাদেশের জনগণকে একটি নতুন গঠনতন্ত্র উপহার দেওয়া।
এখন তাহলে রণনীতি ও রণকৌশলের মূল ক্ষেত্র হচ্ছে কিভাবে সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে গণঅভ্যুত্থানে ব্যক্ত জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায় আমরা বাস্তবায়িত করতে পারি। বুঝতে হবে, এতো মানুষের আত্মত্যাগ এবং এতো মানুষের অঙ্গহানি ও পঙ্গুত্ব বরণের পরও আমরা সেই পুরানা গর্তেই রয়ে গেলাম। এর জন্য জনগণের কাছে যেমন জবাবদিহিতার দায় আছে, তেমনি ইতিহাসের কাছেও ব্যর্থতার কৈফিয়ত দিতে হবে।
দায় শুধু ছাত্র-তরুণদের নয়। বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট সংবিধান ও আইন, আওয়ামি আমলাতন্ত্র এবং লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর ক্ষমতার লিপ্সা বাংলাদেশকে নতুন ভাবে গঠন করা কঠিন করে তুলেছে। এখন গঠন দূরে থাক, এমনকি কোন ইতিবাচক সংস্কার আদৌ এখন করা সম্ভব কিনা সেটা ক্রমশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেখানে দরকার ছিল বাংলাদেশের জন্য নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ণ প্রক্রিয়া শুরু করা, সেখানে আমরা এখন দেখছি লোক দেখানো সংস্কারের ক্যারিকেচার। ‘ক্যারিকেচার’ বলছি কারন এই সরকার যদি সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েই ক্ষমতায় এসে থাকে তাহলে সংবিধান সংস্কারের কোন আইনী এখতিয়ার তাদের নাই। সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার হবার কারনে সরকারের ক্ষমতা নানান দিক থেকে সীমিত।
এই দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতেই রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছে। সরকার যদি সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে ক্ষমতায় এসে থাকে তাহলে বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট সংবিধান অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচন দেওয়াই বৈধ সরকার গঠনের একমাত্র পথ। ছাত্র তরুণদের বুঝতে হবে জনগণ, কন্সটিটিউশান কিম্বা রাষ্ট্র আদৌ ছেলেখেলার বস্তু নয়। অতএব এখন এখানে ওখানে মাইনর কাঁটাছেঁড়া করে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখার চেষ্টা চলছে। শেষাবধি এই চেষ্টাও ব্যর্থ হতে বাধ্য। পুরানা ফ্যাসিস্ট সংবিধানই রাজনৈতিক দলগুলো আসলে বহাল রাখবে কারন এতে লুটপাটের সুবিধা।
আবার দেখুন, তথাকথিত ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা’র নামে ইংরেজ আমলের ঔপনিবেশিক আইন বহাল রাখা হচ্ছে। একটু ভাবুন। আইন ও মানিবাধিকারের দিক থেকে দুনিয়া কোথায়, আর আমরা এখন কোথায়!! আমরা এখনও আছি ইংরেজ শাসনের যাঁতাকলে – ঔপনিবেশিক আইনের বেড়াজালে।
এটা গভীর আশংকার বিষয় যে ছাত্র-তরুণরা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার চরিত্রকে উপেক্ষা ও অস্বীকার করেছে। শুধু তাই নয়, বাজার ব্যবস্থার প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার আদলে গড়ে ওঠা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মতো একটি নির্বাচিমুখি দল বানিয়েছে তারা। এই পথ অবধারিত ভাবেই তাদের লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর অর্থ ও প্রতিপত্তির কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য করবে। করছেও তাই। কারন লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর কাছ থেকে চাঁদা ছাড়া এই ধরণের নির্বাচনবাদি দল চালানো সম্ভব নয়।
ফলে তাদের রাজনৈতিক বয়ানও বদলে যাচ্ছে। বদলে যেতে বাধ্য। ছাত্র-তরুণরা ছিল জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায়ের প্রতিনিধি। কিন্তু সেই নেতৃত্বের জায়গা থেকে স্বেচ্ছায় তারা নেমে এসেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে তাদের মধ্যে লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর দলের আচরণ গড়ে ওঠা স্বাভাবিক। তাদের বুঝতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বল প্রতিযোগী হয়ে কোন লাভ নাই। নিজেদের তারা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মতো একটি ভোটাভুটির দলে পর্যবসিত করেছে।
২. এই পরিস্থিতিতে জনগণ তাদের ভবিষ্যৎ নতুন করে ভাবতে বাধ্য। কিভাবে ভাববে? সেই ভাবনা একটি সহজ প্রশ্ন তোলার মধ্য দিয়ে শুরু হতে পারে। যেমন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় গণক্ষমতা বা বাংলাদেশের জনগণের ক্ষমতা বিকাশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি কারা? মোটাদাগে একদিকে রয়েছে সেকুলার ও ধর্মীয় জাতিবাদী ফাসিস্ট শক্তি, তার পাশাপাশি আছে লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর শক্তি। সেকুলার এবং ধর্মীয় জাতিবাদী ফ্যাসিবাদ একই মুদ্রার দুই দিক। উভয়কেই ছাত্র-তরুণদের আদর্শিক ও রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে হবে। কোন শর্টকাট রাস্তা নাই।
জাতিবাদী সংকীর্ণতা এবং পরিচয়সর্বস্বতা বাদ দিয়ে আমাদের ভাবতে হবে বাংলাদেশ নামক ভূগোল এবং রাজনৈতিক পরিসরে ছোট বড় নানান জাতিগোষ্ঠি এবং বিভিন্ন ধর্ম, বিশ্বাস বা মতের মানুষ রয়েছে। এই বাস্তবতায় আমাদের ঐক্যের প্রধান ক্ষেত্র ও মানদণ্ড কি হতে পারে? সেটা ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরোধিতা এবং বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিশাবে গড়ে তুলবার সংকল্প। এই সংকল্পের মধ্য দিয়েই আমরা ‘জনগণ’ হয়ে উঠি, যেখানে আমাদের সকলের নৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক স্বার্থ অভিন্ন। আমাদের ধর্মবোধ ও সাংস্কৃতিক উপলব্ধির মধ্যে ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য থাকলেও আমরা এক ও অভিন্ন। এই রাজনৈতিক ঐক্য ও অভিন্নতা উপলব্ধির মধ্য দিয়ে আমরা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে নিজেদেরকে গঠন করতে পারব। কারন আমাদের মূল লড়াইটাই হচ্ছে সকল প্রকার ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ের আলোকেই সকলে মিলে আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যে নতুন আর্থ-সামাজিক, আইনী এবং নৈতিক-আদর্শিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
পারস্পরিক ইতিবাচক নির্ভরতার ভিত্তিতে নতুন আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক এবং সার্বজনীন নৈতিক, আদর্শিক, সাংস্কৃতিক, পরিসর আমরা গড়ে তুলতে চাই যেখানে সকলে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং আমাদের রাজনৈতিক বন্ধন দৃঢ় হয়। আমরা রাজনৈতিক ভাবে অন্য কোন পরাশক্তি বা বাইরের কোন শক্তির দ্বারা পদানত থাকতে চাই না। সর্বোপরি নতুন আর্থ-সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আমাদের একটি শক্তিশালী জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যেন আমরা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শক্তিশালী অবস্থান দ্রুত অর্জন করতে পারি।
নিজেদের রাজনৈতিক সত্তা ও ইতিহাসের কর্তা হিশাবে চিন্তা করবার এই পদ্ধতি নিজেদের ‘রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি’ হিশাবে চিন্তা করবার তরিকা। জাতিবাদ ও পরিচয়বাদের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন এসেছে পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের যুগ। এ যুগে কর্পোরেট পুঁজি ও টেকনলজির আধিপত্য এবং যুদ্ধব্যবস্থা বা হত্যার ইনডাস্ট্রির বিরুদ্ধে লড়ে টিকে থাকতে হলে আমাদের নিজেদের ‘জাতি’ হিশাবে নয়, ভাবতে হবে ‘রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে। কারন এটা এখন আমাদের বাঁচামরার বিষয় হয়ে উঠেছে। ‘রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি’ হয়ে উঠতে হলে বাংলাদেশের জনগণকে তাহলে সেকুলার জাতিবাদ, ধর্মীয় জাতিবাদ এবং লুটেরা মাফিয়া শ্রেণীর বাজারি ও লুটপাটের মতাদর্শের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম চালাতে হবে।
যদি তাই হয় তাহলে জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ কথাটাকে আমরা কিভাবে বুঝব? অনেকে বলবেন ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ কথাটা বিদ্যমান সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে। সেটা আংশিক সত্য। কারন বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ কথাটার রাজনৈতিক তাৎপর্য ব্যাপক। ফলে তা মারাত্মক বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। সেকুলার জাতিবাদ, ধর্মীয় জাতিবাদ এবং নিউ লিবারেল ইকনমিক পলিসির যুগে লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর লুটপাটের অর্থনৈতিক আদর্শ ও কর্পোরেট শক্তি -- এই তিন শক্তির সঙ্গে ক্ষমতার ভারসাম্য? ক্ষমতার ভাগাভাগি? নাকি আমাদের কর্তব্য বরং এই তিন শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই-সংগ্রাম আরও তীব্র করা? জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা যদি আমলে রাখি তাহলে পরিষ্কার ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ কথাটা ভুল রাজনীতি পয়দা করবে এবং আমরা এখন যে গহ্বরে আছি তার চেয়েও গভীর খাদে আমাদের নিক্ষিপ্ত করবে। কারণ আমরা তথাকথিত ক্ষমতার ভারসাম্য চাই না।
আমরা চাই জনগণের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা। গণসার্বভৌমত্ব নীতির ভিত্তিতে নতুন ভাবে বাংলাদেশ গঠন করা। রাজনীতির এখনকার মূল প্রশ্ন হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা আমরা কিভাবে আবার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেব, অর্থাৎ কিভাবে জনগণকে ইতিহাসের কর্তা হিশাবে হাজির রাখব এবং গণসার্বভৌমত্ব নীতির আলোকে নতুন বাংলাদেশ গঠন করব।
৩. গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম। যার তোড়ে শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছে। ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বেই গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল। তখন কি ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ রক্ষার কথা উঠেছিল? তখন কি ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর সঙ্গে তথাকথিত ভারসাম্য রক্ষা বা আপোষের রাজনীতির কথা ছাত্র-তরুণরা বলেছিলেন? তাহলে এখন ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ কথাট আসছে কেন? বিদ্যমান সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রেও ক্ষমতার ভারসাম্য কথাটা অর্থহীন। কারণ মূল প্রশ্ন হচ্ছে সংবিধান বা গঠনতন্ত্র কিভাবে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’ ধারণ করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি হতে পারে সেটা নিশ্চিত করা। ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’ কথাটা বিদ্যমান সংবিধানেই রয়েছে। আশা করি ছাত্র-তরুণরা ভেবে দেখবেন।
বাংলাদেশে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র বাহাত্তর সাল থেকেই কায়েম রয়েছে। সংবাদপত্রের দাবি হচ্ছে ‘মৌলিক সংস্কার’ বলতে এনসিপির শীর্ষ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কিছু প্রস্তাবের কথা বলছেন। সকল প্রস্তাবই নাকি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা। বেশ। কিন্তু এই সুযোগ বন্ধ করলেই ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটবে না। ছাত্র-তরুণরা খুব পিচ্ছিল পথে হাঁটবার চেষ্টা করছেন। গণঅভ্যুত্থানের মূল মর্ম হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব কায়েম। অর্থাৎ গণসার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ণ এবং বাংলাদেশকে নতুন ভাবে গঠন। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি আদৌ কলোনিয়াল ইংরেজের পার্লামেন্টারি সরকার ব্যবস্থা, গণবিরোধী পুলিশ ও আমলাতন্ত্র বহাল রাখব? লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণীর পাহারাদার হিশাবে সৈনিকদের মর্যাদা এবং সৈনিকতার গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ করব? ইত্যাদি। তালিকা দীর্ঘ।
প্রেসেডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ গণসার্বভৌমত্বের দিক থেকে ফালতু ও অন্তঃসারশূন্য তর্ক। বরং প্রশ্ন হচ্ছে গণসার্বভৌমত্বের নীতির ভিত্তিতে আমরা যে রাষ্ট্র গড়তে চাই সেখানে গঠনতান্ত্রিক সংকট তৈরি হলে জনগণের রায় নেবার প্রক্রিয়া কি হবে? অর্থাৎ গণসার্বভৌমত্বের মর্ম ও রূপ কি হবে? জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায়ই যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি হয়ে থাকে তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে সেই অভিপ্রায়ের আইনী তাৎপর্য কি? গণঅভ্যুত্থান ইতোমধ্যেই সেটা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। সেটা হোল ক্ষমতা সবসময়ই জনগণের ক্ষমতা – সেটা কোন প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বা সেনাবাহিনীর প্রধানের ক্ষমতা হতে পারবে না। ক্ষমতাকে সবসময়ই জনগণের ক্ষমতা হতে হবে। গণক্ষমতাকে (Popular Sovereignty) আইন, প্রশাসন এবং বিচার বিভাগসহ সকল দিক থেকেই বর্তমান বা হাজির রাখতে হবে। এতোকাল জনগণকে নয়, রাষ্ট্রকে সার্বভৌম গণ্য করে রাষ্ট্রীয় আইন ও নিপীড়নের হাতিয়ার দিয়ে জনগণকে দমন ও নিপীড়ন করা হয়েছে। তাহলে এটা বুঝতে হবে গণসার্বভৌমত্ব মানে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নয়। সেটা জনগণের সার্বভৌমত্ব, জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা। একই যুক্তিতে পার্লামেন্ট বা জাতীয় সংসদও সার্বভৌম নয়, হতে পারে না। জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায়ই সদা সর্বদা সার্বভৌম। গণঅভ্যুত্থান এই চেতনা ও শিক্ষা আমাদের দিয়েছে।
আশা করব ছাত্র-তরুণরা ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন।