
পাবনার সাঁথিয়ায় চুরির অভিযোগে সালিসি বৈঠকের বিচারে দুই ভাইকে জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘোরানোর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার উপজেলার করমজা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লোকমান সরদারের বাড়িতে সালিসি বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই দুই ভাই লজ্জায় এলাকা ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।
জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো ওই দুই ভাই হলেন করমজা ইউনিয়নের আফড়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল মণ্ডলের ছেলে বাবু মণ্ডল (২৭) ও হোসেন মণ্ডল (২৪)।
এদিকে ঘটনার পর থেকে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার আফড়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে রহম আলীর বাড়িতে সিঁধ কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। পরদিন সকাল ৮টার দিকে ইউপি সদস্য লোকমান সরদারের বাড়িতে সালিসি বৈঠক বসে। সেখানে গ্রাম্য প্রধানদের রায়ে ওই দুই ভাইকে জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রামে ঘোরানো হয়। এ সময় অনেকে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেন। ঘটনাটি মুহূতেই ভাইরাল হয়ে যায়।
বাবু মণ্ডল ও হোসেন মণ্ডল গ্রামছাড়া থাকায় এবং মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তাঁদের বাবা আব্দুল মণ্ডল বলেন, ‘আমার ছেলেরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। শত্রুতামূলক মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ইউপি সদস্য লোকমান সরদারের উপস্থিতিতে গ্রাম্য প্রধানেরা তাদের মারধর ও জোড় করে চুরির কথা স্বীকার করিয়ে জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘুরিয়েছে। একসময় সে নিজেও (লোকমান) তো চোর ছিল। ছেলেদের লজ্জায় আমি নিজেও বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। আমি মাতব্বরদের বিচার চাই।’
অভিযুক্ত বাবু মণ্ডলের স্ত্রী কুলসুম খাতুন ও হোসেন মণ্ডলের স্ত্রী পারভিন খাতুন বলেন, ‘তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁরা প্রধানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, তারপরও তাঁদের জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়েছে। লজ্জায় আমাদের স্বামীরা মুখ দেখাতে না পেরে গ্রামছাড়া হয়েছেন। আমরা এই মিথ্যা অপবাদের এবং গ্রাম্য প্রধানদের শাস্তি ও বিচার চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ‘ছেলে দুটা যদি অপরাধ করেই থাকে, তাদের পুলিশে দেওয়া উচিত ছিল। লোকমান মেম্বার নিজেই তো একসময় গরু চোর ছিল। সে তার পাশের গ্রামে অনেক আগে কমল খান নামের ব্যক্তির বাড়িতে গরু চুরি করতে গিয়ে ধরা খাইছিল। সে আবার চোরের বিচার করে, হাস্যকর। এ ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ইউপি সদস্য লোকমান সরদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাতেনাতে কেউ না ধরলেও ওই যুবকেরাই এ ঘটনায় জড়িত বলে বিভিন্নভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এ ঘটনায় আমার বাড়িতে সালিস বসেছিল এবং প্রধান হিসেবে আমি উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর করেছিলাম। কিন্ত জরুরি কাজের জন্য আমি বাইরে চলে গিয়েছিলাম। সালিসে রায়ের সময় আমি ছিলাম না। সালিসের রায় ও জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর বিষয়ে কিছু জানি না।’
তবে ইউপি সদস্য সালিসে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করলেও ভিডিওতে জুতার মালা পরানোর সময় তাঁকে দেখা যায়।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে গ্রাম্য প্রধানেরা এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। জুতার মালা পরিয়ে তাঁদের গ্রামে ঘোরানো উচিত হয়নি।