
নেতাকর্মীদের একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য আর শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ছিল শুরুতেই। ছিল দুর্নীতির অভিযোগও। ফলে ইমেজ হারাতে বসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। প্রথমে এসব আমলে না নিলেও পরে নড়েচড়ে বসে দলটির হাইকমান্ড। তৃতীয় সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গঠন করা হয় শৃঙ্খলা কমিটি। নির্দেশ দেওয়া হয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার।
দলটিতে অভিযোগের পাল্লা ভারী যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে পাঠ্যপুস্তক ছাপানোয় কমিশন বাণিজ্য, জেলা প্রশাসক নিয়োগে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপসহ একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে এনসিপি। একই সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
কালবেলাকে এনসিপির একটি বিশ্বাসযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, তানভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে দল বিব্রত এবং নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে অনেকটা প্রমাণিত হয়েছে। দলের বড় একটি অংশের মত, তাকে দলে না রাখার পক্ষে। সূত্রটি বলছে, সবকিছু বিবেচনা করে তানভীরকে স্থায়ী বহিষ্কার করার সম্ভাবনাই বেশি।
এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা কালবেলাকে বলেন, তানভীরের দায়ভার এনসিপি নেবে না। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাকে দলে না রাখার। দলের সাধারণ সভায়ও তাকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে। যারা গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে প্রশ্রয় দিয়েছে, তারাও এখন আর তার দায়ভার নিতে রাজি না।
তানভীরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য এবং দলের যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক। তিনি বলেন, তানভীরকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
দু-এক দিনের মধ্যেই অভিযোগের জবাব দেবেন বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন তানভীর। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আসা সব অভিযোগই অমূলক। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। তিনি বলেন, এত বেশি ন্যারেটিভ ছড়িয়েছে যে, আমার দল বিব্রত, এটা স্বাভাবিক। আমার বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধে মামলাও করেছি।
জানা গেছে, তানভীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব খাটিয়ে কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে বাণিজ্য করেছেন। কোটি কোটি টাকা নিয়ে ডিসি নিয়োগের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক বিতর্ক ওঠে। বাধ্য হয়ে সরকার ঘটনা তদন্তে তিন উপদেষ্টার সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে।
এরপর মার্চে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ‘বাণিজ্যে’ নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে বই ছাপানোর কাগজ কিনলেই কেবল বই ছাপার ছাড়পত্র দেন তিনি। না কিনলে ছাড়পত্র মেলেনি। আর ওই কাগজ কিনতে টনপ্রতি ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে। এর বাইরেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
১২ সদস্যের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে যেন আমাদের জানায়। এরই মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই এসব দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’