
এ বছরের ডিসেম্বর মাস টার্গেট করেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। কোনোভাবেই ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন চায় না দলটি। দলের এমন অনড় অবস্থানের কথা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সরাসরি তুলে ধরবেন নেতারা। নির্বাচন নিয়ে ১৬ এপ্রিল দুপুরে বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবে। এটিই প্রথম বৈঠক যেখানে আলোচনার একমাত্র বিষয় ভোট। বিএনপি কী কারণে চলতি বছরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছে তার কারণ ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সামনে রেখে বিএনপির নেতারা নিজেদের মধ্যে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছেন। ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন নেওয়ার চেষ্টা হলে তারা বিরোধিতা করবেন, প্রয়োজনে রাজপথে কর্মসূচি পালন করবেন। তবে তার আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানাবে বিএনপি। এ বিষয়ে তাঁর মনোভাব বোঝার পর কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির নেতারা জানান, এবারই প্রথম বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছে। ১৬ এপ্রিল বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণার কথা বলবেন। তাহলে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে যাবে দলটি। আর যদি প্রধান উপদেষ্টার নেতিবাচক মনোভাব মনে হয় তাহলে দ্রুত সময়েই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন কবে হবে তা জানতে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেই সাক্ষাতে কী ফল আসে তার ভিত্তিতেই করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, সবকিছু বিবেচনা করলে দেখা যায় নির্বাচন নিয়ে একটা অনিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। সেটা গণতন্ত্রের জন্য কল্যাণকর নয়। কারণ নির্বাচন যত দেরি হবে, গণতন্ত্র উত্তরণের রাস্তা তত কঠিন হবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করছি। তাই এই সরকারকে কোনোভাবেই বেকায়দায় ফেলতে চাই না। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচন আদায় করা। সেটি নিশ্চিত হলে সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের ঝামেলায় যাব না। কিন্তু এর বিপরীত বিষয় হলে আমাদের অবস্থানও বিপরীত হতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, নির্বাচন পেছাতে চক্রান্ত চলছে। ন্যূনতম সংস্কার এবং আওয়ামী অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচনমুখী হওয়া দরকার।
বিএনপির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে এ নির্বাচন নিয়ে একেক সময় সরকারের একেক জনের বক্তব্যে একেক ধরনের সময়সীমা ঘোষণায় সন্দেহ-সংশয় তৈরি হয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে। বিএনপির নির্বাচনি টার্গেট ডিসেম্বর। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, বড় ধরনের সংস্কার করতে হলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে হতে পারে। আর ছোট আকারের সংস্কার হলে নির্বাচন হতে পারে এই ডিসেম্বরে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের প্রধান লক্ষ্য যে কোনো মূল্যে চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন আদায় করে নেওয়া। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায় করতে না পারলে সংকট আরও বাড়বে। দলকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে হলে নানা সংকট দেখা দিতে পারে। অভ্যন্তরীণ অনেক সংকট তৈরি হতে পারে। যা সামাল দেওয়া কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও মাঠে থাকবে। ডান ও বামপন্থি আরও গুরুত্বপূর্ণ দলের সমর্থন নিয়ে বিএনপি বড় প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টাও চালাচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত হলে দাবি আদায় সহজ হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় নিয়ে সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ বাড়াবাড়িতে গেলে বিএনপি মাঠের কর্মসূচি জোরদার করবে। কর্মসূচি জোরদার করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। ঈদের আগে জেলাপর্যায়ে সমাবেশ হলেও এবার বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার কথা ভাবা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।