Image description
এত আমদানির পরও কমেনি চালের দাম

চলতি অর্থবছরে দেশে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৫ লাখ টনের বেশি চাল আমদানি করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও আমদানি হয়েছে পৌনে ৩ লাখ টনের বেশি। এতে বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দেশের বাজারে সব ধরনের চালের দাম এখনো চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী বোরো মৌসুমের আগে চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। এ ছাড়া চারটি দেশ থেকে আমদানি চুক্তি করা হয়েছে ৯ লাখ টন। এই সময়ে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার টন। যেখানে বেসরকারি পর্যায়ে গত অর্থবছরে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল শূন্য। এ ছাড়া সরকারের গুদামে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মজুত রয়েছে ৯ লাখ ৪৯ হাজার টন চাল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে চালের আমদানি ২০৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

তবে এত চাল আমদানির পরও দেশের বাজারে চালের দাম কমছে না। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি চিকন (নাজির বা মিনিকেট) চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইজাম ও আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া স্বর্ণা বা চায়না ইরি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে।

গত বছরের আগস্টে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়। এরপর বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির অনুমতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময় ১৮ লাখ টন চাল আমদানির জন্য অনুমোদন নেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছিলেন তার চেয়েও অনেক কম পরিমাণ চাল আমদানি করেছেন। অবশ্য ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি কম করলেও সরকারিভাবে চাল আমদানির পরিমাণ বিগত যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

এ ব্যাপারে খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের একজন কালবেলাকে বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে ৯ লাখ টন চাল আমদানি করছি। টেন্ডার করেছি ছয় লাখ টন, আড়াই লাখ টন জিটুজি এবং আরও প্রায় ৫০ হাজার টন মিলে মোট এ চাল আনা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক এসেছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে জাহাজের জট হয়ে গেছে। আমরা খালাস করতে হিমশিম খাচ্ছি। দুই বন্দরে আটটি জাহাজের চাল খালাস কার্যক্রম চলমান।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামে চালের দাম বেশি হওয়ার কারণে অনুমতি নেওয়ার পরও তারা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে চাল আনতে পারছেন না। তবে এখন পর্যন্ত যে চাল এসেছে তা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি।

রংপুরের একজন চাল আমদানিকারক বলেন, ৩৫ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি থাকলেও ১০ হাজার টন আমদানি করতে পেরেছি। ভারতে চালের দাম বেশি। ওই চাল এনে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। এজন্য চাল আমদানি বন্ধ রেখেছি।

তার মতো আরও কয়েকজন আমদানিকারক জানান, আমদানি করা চাল স্থানীয় বাজারে লাভজনক নয়। এ কারণে পুরো পরিমাণ চাল আমদানি করেনি তারা। তবে আমদানি যে পরিমাণে হয়েছে, সেটা বাজারে ছেড়েছেন। বিশেষ করে ভারত থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিকন চাল এনে বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী সেলিম শেখ বলেন, দেশের মোকাম, আড়ত, পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে কোথাও চালের সংকট নেই। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরেও দেখা যায়, সেখানে ভারতীয় কয়েকটি ব্র্যান্ডের চাল রয়েছে। যেগুলো ৮০, ৮৫ এবং ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি দোকানেই এসব চাল কমবেশি রয়েছে।