
মুরাদনগরে পরিকল্পিতভাবেই কি বৈষম্য করা হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে? সাজানো ঘটনা আর মামলা দিয়ে কি সুদৃঢ় ভিত্তির বিএনপি কর্মীদের মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে? ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তার শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে যা পারেনি সেটা কি কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে পুনরাবৃত্তির চেষ্টা হবে? মুরাদনগর বিএনপিকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে আদৌ দমানো যাবে? না-কি সর্বজনগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক কালিমালেপনের কোন কূট কৌশলে পুলিশের একাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে মুরাদনগরে? দিন যত গড়াচ্ছে ততই মুরাদনগর থেকে কুমিল্লা এবং রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মহলে এখন এসব প্রশ্নই বড় হয়ে সামনে আসছে।
মুরাদনগরে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করার চেষ্টার নেপথ্যেই বা কি? কেনই বা আওয়ামী লীগের চিহ্নিত লোকদের জেনেবুঝে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিতে ঢোকানো হচ্ছে? মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ও জাহাঙ্গীর আলম সরকারের অনুগামীরা অনেকটাই নির্ভার- এমন আলোচনাও আছে। এর পেছনেই বা কি রহস্য লুকিয়ে আছে? জাতীয় পার্টি ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী গোলাম কিবরিয়ার এনসিপির হয়ে ভূমিকা রাখা কি ইঙ্গিত দিচ্ছে মুরাদনগরের রাজনীতিতে? তবে কি নতুন কাউকে রাজনৈতিক মাটিতে পা রাখার সুযোগ দিতেই মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ কয়েক ডজন নেতার বিরুদ্ধে থানা হামলার সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে?
ঢাকা টাইমস-এর সঙ্গে আলাপকালে মুরাদনগর উপজেলার বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক কামালউদ্দীন ভুইয়া বলেন, গত ২৪ মার্চ একটি পরিকল্পিত ও সাজানো ঘটনার মাধ্যমে থানা হামলার দুটি মামলা দিয়ে বিএনপির অসংখ্য নিবেদিত নেতা-কর্মীকে হেনস্তা করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ একতরফা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। আওয়ামী লীগ ও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীরা একটি বিশেষ চক্র গড়ে তুলতে পারছে- কারণ তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বর্তমান সরকারি প্রশাসন। এদের লক্ষ্য স্থানীয় বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, দুর্বল করা। কিন্তু সাবেক মন্ত্রী, হুইপ ও বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের নেতৃত্বে মুরাদনগরে বিএনপির শেকড় অনেক গভীরে। কোনো ষড়যন্ত্রই মুরাদনগরে জননেতা কায়কোবাদ ও বিএনপির জয়যাত্রা রুখতে পারবে না ।
মুরাদনগর উপজেলা বিনপির সদস্য সচিব মোল্লা মুজিবুল হক গত ৮ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মজিবুল হক অভিযোগ করেন গত ২৪ মার্চ মুরাদনগর এনসিপি নেতা ওবায়েদ উল্লাহ স্থানীয় কোম্পানীগঞ্জে সিরিয়ালের বাইরে সিএনজি নিতে চাইলে সেখানে কর্মরত কেরানী ও চালকরা বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সদর ইউনিয়নের নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীপের সাধারণ সম্পাদক সজীবসহ একদল তরুণদেরকে ডেকে এনে তাদেরকে মারধর করে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ছাত্রলীগের পদধারী কথিত সমন্বয়করা থানার ওসিব সামনে তার রুমে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডবাইক হাতে হত্যার হুমকি দেয়। ওই ঘটনায় ওসি হুমকিদাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সালিশে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। শুধু তাই নয় এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিস্ময়করভাবে গ্রেপ্তারকৃতদের জামিনের বিরোধিতা করে। পুলিশের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী ছিল জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ তমাল ও আওয়ামী লীগ নেতা তানভীর রেজা ফয়সাল।
সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে শ্রীকাইল ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন (আনোয়ার ডাকাত নামে খ্যাত) এনসিপির ব্যানার সজ্জিত গাড়িবহরযোগে এলাকায় ? শোডাউন করলে সাধারণ মানুষের বাধার মুখে পড়েন। কিন্তু ওই ঘটনায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়, আর পুলিশ আনোয়ার ডাকাতের ভাইয়ের করা মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে। ওই মামলার আসামী বিএনপি নেতা-কর্মীরা এখনো কারাগারে।
পুলিশ কি নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে না? কেন এমন অভিযোগ? ঢাকা টাইমস যোগাযোগ করেছিল কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খানের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আইনশৃঙ্খল রক্ষার স্বার্থে যা প্রয়োজন পুলিশ তাই করছে। কোন রাজনৈতিক রং দেখা হচ্ছে না।
তবে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন ঢাকা টাইমসকে বলেন, মুরাদনগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের মনোবল নষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা যেভাবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে সেই একই কায়দায় পুলিশকে ব্যবহার করতে চেষ্টা করছে এনসিপি। অন্তত মুরাদনগরের চিত্রটাই এমন যেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয় এনসিপির সরকার ক্ষমতায়। একদিকে এনসিপি আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের দলে ভেড়াচ্ছে অন্যদিকে পুলিশ বিএনপি কোণঠাসা মিশনে নেমেছে। তবে সাবেক মন্ত্রী জননেতা কায়কোবাদ ও বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভীতরা যতই ষড়যন্ত্র করুক তারা সুবিধা করতে পারবে না।
ঢাকা টাইমস-এর সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া বলেন, মুরাদনগরে বিএনপি নেতা কর্মীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা এর নিন্দা করি, প্রতিবাদ করি। তবে এই নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন সংগ্রামে যাবে।
মোটামুটি এটা সর্বজনবিদিত যে, মুরাদনগরে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বিএনপি। দলটির জনপ্রিয়তা ব্যাপক ও সর্বত্র। যার নেপথ্যে আছেন ৫ বারের সংসদ সদস্য, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও হুইপ কাজী শাহ্ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। তিনি বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ আমলে মিথ্যা ২১শে আগস্ট গ্রেনেড মামলার দিয়ে সম্পূরক চার্জশিটে যাকে আসামী করে সবরকম হয়রানি আর পর্যুদস্তের অপচেষ্টা হয়। কিন্তু তবুও তার জনপ্রিয়তায় ঘুণ ধরানো যায়নি। সাম্প্রতিক পুলিশের তৎপরতায় আদৌ কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরানো যাবে? এ প্রশ্নই সর্বত্র।