Image description

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই মুহূর্তে লন্ডনে অবস্থান করছেন। প্রথমজন চিকিৎসার জন্য, দ্বিতীয়জন রাজনৈতিক কারণে। দু’জনের অনুপস্থিতে বিএনপির রাজনৈতিক কার্ক্রম অব্যাহত থাকলেও দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রত্যাশা দ্রুতই দেশে ফিরবেন তারা। মামলা-মোদ্দমা এবং আদালতের দেওয়া শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ায় খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের দেশ ফেরা এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।

দলীয় সূত্রমতে, ঈদের পরই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থার অবনতি না হলে এবং ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’র চিকিৎসকদের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেলে মধ্য এপ্রিলেই দেশে ফিরবেন তিনি। এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মধ্য এপ্রিলেই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। তিনি দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে আছেন।

শনিবার (২৮ মার্চ) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের পরেই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) দেশে ফিরবেন ইনশাল্লাহ। তার শারীরিক অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো। আমরা তার ফিরে আসার প্রতীক্ষায় আছি।’

অবশ্য রোববার (২৯ মার্চ) খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডামের দেশে ফেরার শিডিউল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সুতরাং তার ফেরার দিনক্ষণ সম্পর্কে এই মূহূর্তে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে গত ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। ৮ জানুয়ারি হিথ্রো বিমান বন্দরে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে সোজা লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাচীন চিকিৎসা কেন্দ্র ‘দ্যা লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি হন তিনি। টানা ১৮ দিন চিকিৎসা শেষ ২৫ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

এদিকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ব্যাপারে সম্ভব্য একটা মাস বা তারিখ নিয়ে দলের দায়িত্বশীল নেতারা কথা বললেও তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না তারা। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা নিয়ে প্রশ্ন করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যখন আমরা মনে করব, তার দেশে ফেরার মতো অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখনই তিনি দেশে ফিরবেন।’

তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ হলে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। অর্থাৎ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই দেশে ফিরবেন তিনি। এর আগে দেশে ফেরাটা নিরাপদ মনে করছেন না। কারণ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুকূল নয় বিএনপির জন্য।

সুতরাং, সব সংশয়-সন্দেহ দূর হয়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না হওয়া পর্যন্ত দেশে ফেরার সম্ভবনা নাই তারেক রহমানের। অর্থাৎ, রাজনৈতিক কারণেই দেশে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। নইলে খালেদা জিয়ার সঙ্গেই দেশে ফিরতেন তিনি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের তথ্যমতে, এক/এগারো সরকার এবং পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মিলে তারেকের বিরুদ্ধে ৮৪-৮৫টি মামলা করা দিয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা, সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিং মামলা, নড়াইলে মানহানির মামলা এবং ঢাকার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর পর্যায়ক্রমে এসব মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি।

এছাড়া, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বাকি ৭৯ মামলাও নিস্পত্তি হয়েছে আইনি প্রক্রিয়ায়। সবশেষ ২০ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তারেক রহমান। এখন তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমানের দেশে ফিরে রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা নেই।

তারেক রমানের দেশে ফেরা সম্পর্কে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা তার একান্ত বিষয়। এ ব্যাপারে আমরা তেমন কিছু জানি না। সবকিছু ঠিক হলে হয়তো তিনি দেশে ফিরবেন। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি দ্রুতই ফিরবেন।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনুকুল পরিবেশ নিশ্চিত হলেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। ওনার ফেরার বিষয়ে আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি। আমাদের যখন মনে হবে, এখন তার ফেরার উপযুক্ত সময়, তখনই তিনি দেশে ফিরবেন।’

উল্লেখ্য, এক/এগারোর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গ্রেফতার হন তারেক রহমান। ১৮ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবার নিয়ে লন্ডনে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন।