Image description

গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দলীয় নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই হেভিওয়েট নেতাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। প্রয়োজনে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় এবং কোনো মামলায় জামিন না পাওয়ায় তাঁদের এবারের ঈদ কাটছে কারাগারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারাগারে বন্দি নেতাদের জন্য ঈদে থাকছে খাবারদাবারের বিশেষ আয়োজন। ঈদের পরদিন তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা যাবে। ঈদের দিন সকালে কারাগারের পক্ষ থেকে এই নেতাদের সেমাই, পায়েস ও মুড়ি সরবরাহ করা হবে। দুপুরে দেওয়া হবে পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, খাসির মাংস, সালাদ, কোল্ড ড্রিংকস, মিষ্টি, পান-সুপারি।রাতে সাদা ভাত, রুই মাছ ও আলুর দম।

অন্য বন্দিদের মতো ডিভিশন পাওয়া বন্দিরাও ঈদ উপলক্ষে স্বজনদের সঙ্গে দেখা ও ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া ঈদের পরদিন বাড়ির রান্না করা খাবার খাওয়ার সুযোগ মিলবে বন্দি এই নেতাদের। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫৭ জন, কাশিমপুরের চারটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬২ জনসহ ১২৫ জন ভিআইপি বন্দি আটক রয়েছেন।

এদিকে ঈদ উপলক্ষে কারাগারগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা সতর্কতা ও নজরদারি নিশ্চিত করা হচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সশস্ত্র প্রহরার পাশাপাশি পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, হ্যান্ডহোল্ড মেটাল ডিটেক্টর, ভেহিকল সার্চ মিরর, বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার ইত্যাদি নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে। কারাগারে ঈদের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হচ্ছে। কারাভ্যন্তরে কারাবন্দিদের অংশগ্রহণে হবে গান, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, কৌতুক, বক্তব্য ইত্যাদি।

ঈদের দিন সন্ধ্যায় কারারক্ষী ব্যারাকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যার পর কারা স্টাফদের সন্তানদের অংশগ্রহণে কবিতা আবৃত্তি ও গানের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। ঈদ উপলক্ষে কারাভ্যন্তরে ভলিবল খেলাসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।

ঈদ উপলক্ষে সব বন্দি (বিশেষ বন্দিসহ) ঈদের তিন দিনের মধ্যে একবার তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। তিন দিনের মধ্যে একবার পাঁচ মিনিট নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে সরকারি টেলিফোন থেকে কথা বলারও সুযোগ মিলবে তাঁদের। বিশেষ বা ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের একজন কারা কর্মকর্তার সামনে মোবাইল ফোনে কথা বলতে হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজনস মো. জাহাঙ্গীর কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের দিন সব বন্দিকে একই ধরনের খাবার দেওয়া হয়। সকাল থেকে রাত তিন বেলা বিশেষ খাবারের আয়োজন রয়েছে আমাদের। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের দিন কারাগার থেকে পোলাও, মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবার দেওয়া হয়। এ কারণে ঈদের দিন পরিবারের খাবার অ্যালাউ করা হয় না। পরদিন পরিবার থেকে যে খাবার নিয়ে আসে তা খেতে দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী কালের কণ্ঠকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা গণহত্যা করেছে, তারা গণহত্যার ষড়যন্ত্রকারী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করে বলেছি, তারা জামিন পেলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে এবং তদন্তে বিঘ্ন ঘটবে। আমাদের জোরালো ভূমিকায় তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়েছে। তাদের এখন রাজনৈতিক নেতা বলা যাবে না। তারা জনগণের ওপর জুলুম, নির্যাতন করে ক্ষমতায় বসেছিল। তারা ফ্যাসিস্টের দোসর।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একে একে গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এর বইরে সাবেক সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সাবেক মুখ্য সচিব ও উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শাসসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির, একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু, সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রূপা ও প্রধান বার্তা সম্পাদক শাকিল আহমেদ, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, আব্দুস সোবহান গোলাপ, হাজি সেলিম, মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম, সেলিম আলতাফ জর্জ, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, শহিদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক ডিসি মশিউর রহমান, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আবুল হাসান, মাজহারুল ইসলাম, বহিষ্কৃত সেনা অফিসার মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহাইল ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার সাবেক পরিচালক কমোডর মনিরুল গ্রেপ্তার হয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।