Image description

ইস্কান্দার মির্জাকে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের শাসনভার হাতে তুলে নেন আইয়ুব খান। এর পর এক দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন।

 

ইস্কান্দার মির্জাকে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের শাসনভার হাতে তুলে নেন আইয়ুব খান। এর পর এক দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। তার স্বৈরশাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার কারিকর হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) আমলাতন্ত্র ও এলিট সামরিকতন্ত্র। শুধু আইয়ুব খান নন, পাকিস্তানে তার পরে ক্ষমতায় আসা স্বৈরশাসকদেরও ক্ষমতার বড় ভরকেন্দ্র ছিলেন এলিট সিএসপি ও মিলিটারি কর্মকর্তারা।

এমনকি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশেও স্বৈরশাসনের ক্ষেত্রে একই মডেল অনুসৃত হয়েছে, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও শেখ হাসিনার শাসনামল। সরকারি আমলা ও সামরিক বাহিনীর অনুগত এলিটদের সহায়তায় টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড গড়েছেন শেখ হাসিনা। একই কায়দায় এরশাদও ক্ষমতায় ছিলেন টানা সাত বছর।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে অনুসরণ করেন পাকিস্তানের কৌশল, যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেনাবাহিনী ও আমলাদের। এতে বেশ সফলও হন জেনারেল এরশাদ।

 

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বিধি অনুযায়ী আমলা ও সামরিক কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকার কথা। যদিও এ দুই মহলে শেখ হাসিনার অনুগতরা উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনে ভূমিকা রেখেছিলেন অনেকটা দলীয় কর্মীর মতোই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর শাসনামলকে স্বৈরতান্ত্রিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে আমলাদের নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন এইচটি ইমাম। সাবেক এ সিএসপি কর্মকর্তাকে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নিজের জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে দেয়া হয় রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব।

 

এইচটি ইমাম ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলগুলোয় দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দলীয়করণ ও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বরাবরই ছিল তার অগ্রণী ভূমিকা। এক্ষেত্রে কোনো রাখঢাকও ছিল না। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সরকারি চাকরিতে যোগদান প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‌তোমরা লিখিত পরীক্ষায় পাস করে এসো, তারপর আমরা দেখব।’

এমনকি জনপ্রশাসনে অনুগত শীর্ষ আমলাদের দল তৈরি ও তাদের পুরস্কৃত করতে সিনিয়র সচিবের পদ সৃজনের মূল মাস্টারমাইন্ড বলা হয় এইচটি ইমামকে। জনপ্রশাসনের মৌলিক কাঠামোয় প্রকৃতপক্ষে সিনিয়র সচিব বলে কোনো পদ নেই। প্রাইজ পোস্টিংয়ের হাতিয়ার হিসেবে এ পদ সৃষ্টি হয় ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সরকারের এক নির্বাহী আদেশে।

শেখ হাসিনার আমলে জনপ্রশাসনকে রাষ্ট্রের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত করে তোলার ক্ষেত্রে শুরুর দিকে এইচটি ইমামের মূল সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন আরো কয়েকজন সিএসপি কর্মকর্তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সাবেক প্রভাবশালী সিএসপি আমলার মাধ্যমেই আমলাতন্ত্র হয়ে উঠেছিল স্বৈরাচারী কাঠামোর সহায়ক শক্তি।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের পদটি বরাদ্দ ছিল আমলাতন্ত্রে অনুগতদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির জন্য। পতিত বিগত সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে মোট আটজন আমলা সে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য হয়েছেন বিতর্কিতও। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তারা গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছাকেই তারা প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। এর প্রতিদান হিসেবে বিভিন্নভাবে পুরস্কৃতও হয়েছেন। আবার কারো কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওয়ান-ইলেভেনের আগে থেকেই তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য সক্রিয় নানা ভূমিকা রেখেছিলেন।

পাকিস্তানের মতো আইনি কাঠামো ব্যবহার করে ক্ষমতা দীর্ঘায়নের প্রক্রিয়া দেখা গেছে শেখ হাসিনার আমলেও। এরই অংশ হিসেবে দলীয়কৃত প্রশাসন ও জুডিশিয়ারিকে কাজে লাগিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এ নিয়ে ১৯তম প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ২০১১ সালে দেয়া রায়টিই শেখ হাসিনার পরের ১০ বছরের শাসনব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে দিয়েছিল বলে মনে করা হয়।

আইয়ুব খান তার শাসনকে টিকিয়ে রাখতে পশ্চিম পাকিস্তানি আমলাদের ওপর নির্ভর করতেন সবচেয়ে বেশি। এ কারণে সে সময় আমলাতন্ত্রে পশ্চিম পাকিস্তানিদেরই আধিপত্য ছিল বেশি। আবার শেখ হাসিনার আমলে বিসিএস বা অন্যান্য সরকারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কর্মকর্তাদের নিয়োগ পাওয়ার পূর্বশর্ত ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ।

নানাভাবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকেও আমলাতন্ত্রের অংশে রূপ দিয়েছিলেন আইয়ুব খান। এতে শাসনব্যবস্থা হয়ে পড়েছিল অতিকেন্দ্রীভূত। আমলাতন্ত্রের ওপর আইয়ুবের অতিনির্ভরশীলতা সে সময় দুর্নীতিকে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল। সামরিক শাসনের অধীনে নানা অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাধারণ সৈনিকদের তদন্তের অধীনে আনা হলেও রেহাই পেত উচ্চপদস্থরা। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আমলাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য ছিল।

বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় ফেরার পথ প্রশস্ত করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে গত তিন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। তারা তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল আমলাতন্ত্র, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর অনুগত কর্মকর্তারা। এর মধ্যে কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ কমিশনের অধীনেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল সে নির্বাচন।

এর পর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় কেএম নুরুল হুদা কমিশনের অধীনে। সে সময় আমলাতন্ত্র, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীতে শেখ হাসিনার অনুগতদের যোগসাজশে ভোটগ্রহণ শুরুর আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ ওঠে। এ নির্বাচন পরে কুখ্যাতি পায় ‘নিশিরাতের ভোট’ হিসেবে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্যতম সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে সামরিক-বেসামরিক আমলাদের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল স্বৈরশাসকদের। আইয়ুব খানের শাসন থেকে সেটি স্পষ্টত প্রতীয়মান। গণতন্ত্র নয়, উন্নয়নের প্রচারই মুখ্য ছিল আইয়ুব শাসনের। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনেরও মূল বিষয় ছিল উন্নয়ন। তবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে শেখ হাসিনা যেভাবে ধ্বংস করেছে তা আইয়ুব খান করেননি। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে (যদিও ওই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে) ক্ষমতায় এসে সবকিছু ধ্বংস করেছে। এছাড়া সামরিক-বেসামরিক আমলারা শুধুই অংশীজন হিসেবে কাজ করেনি, বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের আনুগত্য শেখ হাসিনা কিনে ফেলেছে। দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে ওই কর্মকর্তারা।’

বিগত বছরগুলোয় আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে দেখা হতো মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে। আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থায় তিনি ঊর্ধ্বতন পদে কাজ করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি সামরিক বাহিনীতে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটান ও ব্যাপক দলীয়করণ করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অনেক মেধাবী অফিসারের ক্যারিয়ারে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ রয়েছে। অনেক গুমের নির্দেশদাতা হিসেবে বিভিন্ন সময় তার নাম আলোচিত হয়েছে। ২০১৯ সালে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া আলোচিত গোপন কারাগার ‘আয়নাঘর’ তৈরিতেও তারিক আহমেদ সিদ্দিক মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে দাবি একাধিক সাবেক সেনা কর্মকর্তার।

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন (দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিজ-অ্যাপিয়ারেন্স) ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে জমা দেয়া রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কমিশন সদস্যরা ১ হাজার ৬৭৬টির মধ্যে যাচাই-বাছাই করেছেন ৭৫৮ জনের অভিযোগ। গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এছাড়া তার সরকারের প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে; যাদের মধ্যে রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদও। ২০১৮ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সময়ে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তিনি। এছাড়া পুলিশের খাতায় অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত নিজের ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি এড়িয়ে রেহাই পেতেও সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আরো অভিযোগ রয়েছে, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তিনি উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি ও তার ভাইরা একযোগে কাজ করেছেন। সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুসও নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে বড় আয়োজন ছিল বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার। ২০১৪-এর নির্বাচন জয়ে ভূমিকা রাখতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের গুম করার অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে অন্তত শতাধিক ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছিল। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিশেষ ওই গোয়েন্দা সংস্থাটির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন লে. জেনারেল (অব.) শেখ মামুন খালেদ।

পরবর্তী সময়েও বিরোধী নেতাকর্মীদের গুমের অভিযোগ বিদ্যমান ছিল। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত আড়াই শতাধিক ব্যক্তি গুম হয়েছেন পরের সময়গুলোয়। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশেষ ওই সংস্থার মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনকে ঘিরে গুমের ঘটনা ঘটেছিল অতীতের অন্য যেকোনো সময় থেকে বেশি। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদীন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠান জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ থেকে মেজর জেনারেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) জিয়াউল আহসান এনটিএমসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি সরকারের হয়ে নাগরিকদের ফোনকল ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন যোগাযোগ অ্যাপে আড়িপাতা এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও ইন্টারনেট অপারেটর নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। এ সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে হেনস্তা, গ্রেফতার, গুম-খুনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হতো বিরোধীদলীয় মতকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কাজী মাহবুবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আইয়ুব খান ও শেখ হাসিনা—উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, সামরিক বাহিনী আর আমলারা মিলে গণতন্ত্রকে পিছিয়ে রাখা অর্থাৎ স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার পেছনে কাজ করেছে। মানুষের অধিকার নষ্ট করা, কথা বলার অধিকার হরণ এবং মৌলিক গণতন্ত্র এনে গণতন্ত্রকে বিবৃত করার দায় আইয়ুব সরকারের। সে সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তানে তেমন কোনো উন্নয়ন করেননি। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে ইসলামাবাদকেন্দ্রিক এক ধরনের উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নের দশকও পালন করেছিলেন তিনি। শেখ হাসিনাও উন্নয়নের কথা জোর দিয়ে বলতেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে কতিপয় সামরিক-বেসামরিক আমলা এক ধরনের সিন্ডিকেশনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামরিক বাহিনী তাকে ক্ষমতায় রাখেনি। অল্পকিছু সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তির শাসন তাকে ক্ষমতায় রেখেছে। তারাই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে।’