Image description
 

সেনা সমর্থিত সরকারের রোষানলে পড়ে চাকরি হারান বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমেদ। ২০০৭ সালে চাকরি যাবার পর আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যান তিনি। সর্বশেষ উচ্চ আদালত তার চাকরি ফিরিয়ে দিতে নির্দেশও দিয়েছেন। তবে অজ্ঞাত কারণে চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না মঈনউদ্দিন।

বিমান বাংলাদেশের একসময়ের মেধাবী এই কর্মকর্তা সর্বশেষ সংস্থাটির যুক্তরাজ্যের কান্ট্রি ম্যানেজার ছিলেন।

 

চাকরি ফেরত পেলেন ক্যাপ্টেন মাহবুব, মঈনউদ্দিন আহমেদের ফিরতে বাঁধা কোথায়?
চাকরি ফেরত পেলেন ক্যাপ্টেন মাহবুব, মঈনউদ্দিন আহমেদের ফিরতে বাঁধা কোথায়?

 

 
 

এদিকে আওয়ামী লীগ আমলে চাকরিচ্যুত ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান সম্প্রতি চাকরি ফিরে পেয়েছেন। সর্বশেষ তিনি বিমানের পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ছিলেন। মাহবুবুর রহমান বেতন ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। গাড়ি, চালক ও তেল ফ্রি পাচ্ছেন তিনি। এই পাইলটকে (মাহবুবুর রহমান) ২০২১ সালে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। তবে বিমানের সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমেদের ক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তা না হলে আদালতের নির্দেশের পরও তার চাকরিতে পুনর্বহালে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে কেন- প্রশ্ন সচেতন মহলের।

তবে বিমান বাংলাদেশের দায়িত্বশীলরা ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন, তার (মঈনউদ্দিন) বিষয়টি এখনও কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি। বিস্তারিত জানতে পারলে পরবর্তী ব্যবস্থা সম্পর্কে জানানো হবে।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতা হারালে পরের বছর সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতা নেয়। তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়েন মঈনউদ্দিন আহমেদ। তাকে বাধ্যতামূলক অবসরের নামে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর থেকে আইনি লড়াইয়ে ছিলেন বিমানের এই কর্মকর্তা। যে সময় মঈনউদ্দিন আহমেদের চাকরি যায় তখন তিনি বাংলাদেশ বিমানের যুক্তরাজ্যের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ভিআরএস বা ‘স্বেচ্ছা অবসরে যাওয়া’র নামে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু তখন তার চাকরির বয়স মাত্র ১৬ বছর। সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী কাউকে বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হলে তার চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর হতে হবে। সেই আইনের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মঈনউদ্দিন আহমেদকে জোরপূর্বক অবসরে পাঠায় তৎকালীন সেনা সরকার।

জোর জবর করে চাকরিচ্যুত করা সৈয়দ মইনউদ্দিন আহমেদ চাকরি ফিরে পেতে দীর্ঘদিন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, যখন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় তখন তিনি যুক্তরাজ্যে বিমান বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে তিনি সিভিল অ্যাভিয়েশনের তৎকালীন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছে ন্যায়বিচার চেয়ে আবেদনও করেন। কিন্তু কোন ন্যায়বিচার না পেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে চ্যালেঞ্জ করেন।

অন্য এক প্রশ্নে জবাবে বিমান বাংলাদেশের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বেচ্ছায় অবসরের যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তৎকালীন সরকার জোর করে আমাকে অবসরে পাঠায়। ২০০৭ সালের ১৮ জুন লন্ডনের কান্ট্রি ম্যানেজারের পদ থেকে আমাকে বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ে যোগদানের জন্য যুক্তরাজ্য থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে পাঁচদিনের যোগদানজনিত ছুটি এবং চার সপ্তাহের বৈদেশিক ছুটি ভোগ সাপেক্ষে ঢাকায় বিমানের প্রধান কার্যালয়ে যোগদানের জন্য বলা হয়। সেখানে স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগ কোথায়?’

 

চাকরি ফেরত পেলেন ক্যাপ্টেন মাহবুব, মঈনউদ্দিন আহমেদের ফিরতে বাঁধা কোথায়?
চাকরি ফেরত পেলেন ক্যাপ্টেন মাহবুব, মঈনউদ্দিন আহমেদের ফিরতে বাঁধা কোথায়?

 

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের পরিচালক (প্রশাসন ও মানব সম্পদ) মোহা. আব্দুর রফিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি মইনউদ্দিন আহমেদ নামে কাউকে চিনি না। তার চাকরি ফেরত দিয়ে পুনর্বহালের বিষয়টিও আমার জানা নেই। প্রতিদিন এমন অনেক চিঠি আসে, আসলে সবার নাম বা বিষয় মনে রাখা সম্ভব না।’ বিষয়টি নিয়ে তিনি বিমানের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

সৈয়দ মইনউদ্দিন আহমেদের চাকরিতে ফিরতে বাঁধা কোথায় জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. সাফিকুর রহমানের সঙ্গে। তবে মোবাইল ফোনে তিনি সাড়া দেননি।

 

(ঢাকাটাইমস