Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠনের লক্ষ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ডানপন্থি রাজনৈতিক দল বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামী জোট গঠনের উদ্দেশ্যে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে নেই বামপন্থি দলগুলোও। ডানপন্থি দলগুলোর বাইরে বাম দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ঈদের পর বৃহত্তর বাম দলগুলোর জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।

শুধু বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নয়, পাশাপাশি প্রগতিশীল ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো মিলিয়েই একটা বৃহত্তর জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জোট গঠনের জন্য কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঈদের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের মধ্য দিয়ে জোটের নাম ও রূপরেখা ঘোষণা করা হতে পারে। এ জোট প্রধানত নির্বাচন কেন্দ্রিক হবে। পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক যুগপৎ আন্দোলনও করবে। ত্রয়োদশ নির্বাচনে জোট থেকে ৩০০ আসনেই মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। 

রবিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের বাসায় বামপন্থি নেতারা মিলিত হয়েছিলেন। সেখানে বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক জোট নিয়ে কথা হয়েছে। সেখানে সিপিবি, বাসদ, গণফোরামসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ড. কামাল হোসেনের বাসায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, বৃহত্তর ঐক্য গঠনের জন্য আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছি। আমাদের অভিজ্ঞ ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের সঙ্গেও কথা হয়েছে।

রুহিন হোসেন প্রিন্স, ছবি: সংগৃহীত

রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, আমরা চাই চলতি বছরই নির্বাচন হোক। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন নিয়ে যতই কালক্ষেপণ করবে, দেশে ততই নানা জটিলতা বাড়বে। আমাদের বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং অন্যান্য বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচন করব। বৃহত্তর জোট গঠনের মধ্য দিয়ে  আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি।

জানা গেছে,  বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্তর্ভুক্ত ৬টি রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার অন্তর্ভুক্ত ৭টি রাজনৈতিক দল এই জোট গঠনে কাজ করছে। গণতন্ত্র মঞ্চ জোটের একাধিক শরিকও জোটে থাকতে পারে। গণফোরাম, ঐক্য ন্যাপ, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মতো দলগুলো আসতে পারে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, পাহাড়ি সংগঠন, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের যেসব সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় যারা আছেন, তাদেরও এই জোটে টানার প্রক্রিয়া আছে। এরই মধ্যে কোনো কোনো দল ও জোটের সঙ্গে একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

বাম গণতান্ত্রিক জোট হচ্ছে বামপন্থি রাজনৈতিক আদর্শের ছয়টি রাজনৈতিক দলের জোট। ছয়টি দলের ভেতরে দুটি দল সিপিবি ও বাসদ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত। বাকি চারটি দলের নিবন্ধন নেই। সে দলগুলো: গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)।

অন্যদিকে, ফ্যাসিবিরোধী বাম মোর্চার ৭টি বামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন হলো: বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, কমিউনিস্ট ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ।

সূত্র মতে, নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হলে এবং বিদ্যমান পদ্ধতিতে ভোট হলে জোটের ব্যানারে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। নির্বাচনে দলীয় নেতাদের পাশাপাশি বাম ও প্রগতিশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। 

বজলুর রশীদ ফিরোজ, ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাইরে সমমনা দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের আলাপ-আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরামসহ অন্যান্য দল নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামি দলগুলো ছাড়াও নতুন দল এনসিপি আছে, তাদের বাইরে একটি বৃহত্তর জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। এ সব দলের বাইরে একটি বিকল্প ধারা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। জোটের নাম এখনো ঠিক হয়নি। আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট,  এমন নাম আলোচনা চলছে। দলের রূপরেখা ও নাম চূড়ান্ত হলে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে সমাবেশ করে তা ঘোষণা দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নাগরিক ঐক্য এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেও ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে  কয়েক দফা  বৈঠক করেছেন বাম নেতারা। পাশাপাশি গণফোরামের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। বাম নেতারা মনে করেন, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি শরিকদের খুব বেশি আসন ছাড় নাও দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলো তেমন সুবিধা পাবে না বলে আলাদা অবস্থান নিতে চাইবে। তাই প্রগতিশীল ধারাতেই যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে তাদের।

সুব্রত চৌধুরী, ছবি: সংগৃহীত

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাম দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশ শাসন করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল, যারা মূলত ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে। যে কারণে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এজন্য বুর্জোয়াদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই জোরদার করতে বাম-প্রগতিশীলদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম জরুরি। সেই তাগিদ থেকেই বৃহত্তর জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে সবকিছু এখনও চূড়ান্ত হয়নি। 

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, বৃহৎ একটি জোট গঠনের উদ্যোগ আছে। আমরা আলোচনা শুরু করেছি। সিপিবি, বাসদ, গণফোরামের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, উদারনৈতিক দলকে নিয়ে এ ধরনের একটি জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। জোটের রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আশা করি, শীঘ্রই আমরা জোট সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারব।