
বিপ্লব, সংস্কার, নির্বাচন-এ তিন ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলকে একমঞ্চে আনার চেষ্টা করছে ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংস্কার কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ঠিক এ সময়ে আওয়ামী লীগের কথিত পুনর্বাসন ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ যথেষ্ট ঘোলাটে। নতুন এ ইস্যুতে সেনাবাহিনীকেও জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
এ সুযোগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠ গরমের চেষ্টা করছেন। বিদেশে যারা পালিয়ে আছেন তারা দেশে থাকা কর্মীদের উসকে দিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ মুহূর্তে সমাজমাধ্যমে নানা অপপ্রচার চলছে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একটি মহল নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। সে কারণেই নতুন নতুন ইস্যু সামনে আনছে। কিন্তু এ মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কোনো গুরুত্ব নেই। তাদের ঠেকাতে কর্মসূচি দিয়ে গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)-এর প্রেসিডেন্ট ড. কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সরকারের কোনো পরিকল্পনাই নেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার। তবে যেসব নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিচার চলবে এবং তাঁরা আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবেন।’ প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘ড. ইউনূস, আওয়ামী লীগ ৫ আগস্টেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ওপেন করার চেষ্টা করে লাভ নেই।’ এ ছাড়া অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নানাভাবে।
হাসনাতের স্ট্যাটাস ঘিরে বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে শুক্রবার রাত ৮টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এ ধরনের বক্তব্যের আমরা নিন্দা জানাই। জুলাই গণহত্যা ও পিলখানা হত্যাকাে র বিচারের আগে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাক্সিক্ষত। বিচারের আগে আওয়ামী লীগের যে কোনো ধরনের তৎপরতা ফ্যাসিবাদ পুনর্বহালের নামান্তর। মাফিয়া লীগের রাজনীতির যে কোনো ধরনের তৎপরতা প্রতিরোধ করা হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল।’
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা প্রভাবশালী বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশগুলো কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। একই সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ দাবি করেছেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে দেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম হতে শুরু করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ যদি ভুল স্বীকার করে নতুনভাবে ক্লিন ইমেজের লোক দিয়ে রাজনীতি করতে চায় তাহলে কোনো বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করবে কি না সেটা দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনবার্সন করা হবে কি না তা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সরকারের কার্যক্রম ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলে দেবে। আর এ সিদ্ধান্ত দেশে স্থিতিশীলতা আনবে নাকি নতুন সংঘাতের জন্ম দেবে তা সময়ই বলে দেবে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্য আসন্ন নির্বাচনের জন্য একটি কৌশল হতে পারে। সরকারের এ অবস্থান হয়তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করার জন্য। তারা চায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করেও রাজনৈতিক মেরুকরণ বজায় রাখতে। এ প্রসঙ্গে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মো. হাছানাত আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ন্যূনতম যতটুকু সংস্কার না করলেই নয় তা করে যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দিকে দেশ ধাবিত করা যাবে ততই মঙ্গল। আমাদের এমন কিছু কারও পক্ষেই করা উচিত হবে না যাতে কি না দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়, চব্বিশের চেতনা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং স্বৈরাচারের দোসররা লাভবান হয়। এজন্য আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।