Image description

সম্প্রতি ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে আওয়ামীলীগের পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তার সেই পোস্টের পর থেকে দেশে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়।

 

প্রসঙ্গক্রমে হাসনাতের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন এবং কার প্রস্তাবে তিনি ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন। জবাবে তিনি বলেন, ১১ মার্চের মিটিংয়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। সেখানে অপরপ্রান্তে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছিল। সেনাবাহিনীকে মেজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিছুদিন আগে সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্য আপনারা দেখেছেন। এটিকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অসমীচীন হিসেবেই ধরা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানকে যেভাবে এড্রেস করা হয়েছে, যেভাবে আওয়ামীলীগসহ অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ইঙ্গিত করা হয়েছে এসব সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য আহবান করা হয়েছে। আমার স্ট্যাটাসে স্ট্রেটফরওয়ার্ড রয়েছে।  

‘ক্যান্টনমেন্টের’ এই ঘটনাকে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বলছেন হাসনাত। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সেখানে (রাজনীতিতে) সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করছে না, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের যে আলোচনা হয়েছে, সেটিকে আমরা রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা মনে করছি। রাজনীতিবিদরাই রাজনীতি নির্ধারণ করবে। সেটি তাদের হাতেই থাকা উচিত। সে জায়গায় আমরা সন্দিহান বলেই গতকালকে স্ট্যান্ড নিতে হয়েছে।  

এ ঘটনার পর একাধিক স্থানে মৃত্যু ঝুঁকির কথা বলেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমরা ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছি। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। যতক্ষণ ছাত্র-নাগরিক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো এক রয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা বোধ করছি না।

পোস্টে কী জানিয়েছেন হাসনাত 

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে ভারতের পরিকল্পনায় সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ।

১১ মার্চ তিনিসহ আরও দুজনকে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব কথা ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি তুলে ধরেন।

পোস্টে তিনি লিখেন, আমিসহ আরও দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায়। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়, ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনারা দেখবেন গত দুইদিন গণমাধ্যমে আওয়ামীলীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।

তিনি লিখেন, আমাদেরকে আরও বলা হয়, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে। আমাদেরকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করার কথা জানাই। উত্তরে আমাদের বলা  হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।

হাসনাত পোস্টে লিখেন, আলোচনার এক পর্যায় বলি-যে দল এখনো ক্ষমা চায়নি, অপরাধ স্বীকার করেনি, সে দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম এন্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। (তোমরা কিছুই জানো না। তোমদের প্রজ্ঞা আর অভিজ্ঞতার অভাব আছে। আমরা এখানে ৪০ বছর ধরে আছি। ) তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে না।

তিনি আরও লিখেন, এর উত্তরে বলি, আওয়ামীলীগের সঙ্গে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামীলীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। পরে মিটিং অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয়।