
ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নদীর পানির ব্যবহার বাড়াতে চার হাজার ৫৯৭ কোটি টাকার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৫ সালে। ১০ বছর পার হয়ে গেলেও প্রকল্পটির কাজ হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ।
নামমাত্র কাজ হলেও প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে চারগুণ। প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকায়। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) এই প্রকল্পসহ মোট ১৫টি প্রকল্প উত্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আজকের একনেক সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ১৫টি প্রকল্প উপস্থাপন করবেন। এরমধ্যে আটটি নতুন এবং সাতটি সংশোধিত প্রকল্প। প্রকল্পগুলোর মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে দুটি, সরকারি অর্থায়নে ৯টি এবং সম্পূর্ণ বিদেশি ঋণে একটি প্রকল্প রয়েছে। তা ছাড়া আরো দুটি প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য উত্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, প্রকল্পটির অনুমোদনের পর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। অর্থ খরচ হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো কাজের দেখা না মিললেও সাড়ে চার হাজার কোটি টারর প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় প্রসঙ্গে জানতে ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কথা বলতে রাজি হননি কেউ।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার হাড়িয়া (মেঘনা নদীর ডান তীর) থেকে প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় মেঘনার পানি ঢাকায় আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
প্রকল্পটির অপরিশোধিত পানির ট্রান্সমিশন লাইন মূলত হাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ হতে সায়েদাবাদ, ঢাকা। পানি শোধনাগার ও স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট : সায়েদাবাদ, ঢাকা। পরিশোধিত পানি সরবরাহ লাইন : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাকরাইল, পল্টন, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ী ইত্যাদি এলাকা।
প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলা।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার নির্মাণ; বিদ্যমান প্ল্যান্ট-১, প্ল্যান্ট-২ ও প্রস্তাবিত প্ল্যান্ট-৩-এর জন্য স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন; (গ) বিদ্যমান প্ল্যান্ট-১, প্ল্যান্ট-২ ও প্রস্তাবিত প্ল্যান্ট-৩-এর জন্য দৈনিক মোট ৯৫ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন ইনটেক পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ; ইনটেক পাম্পিং স্টেশন হতে অপরিশোধিত পানি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পর্যন্ত সরবরাহের জন্য ২৬ কিলোমিটার টুইন র-ওয়াটার ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন।
পয়োশোধনাগারের জমি কিনতে ২১৫৫ কোটির প্রকল্প চট্টগ্রাম ওয়াসার
চট্টগ্রাম মহানগরীর চার লাখ মানুষকে উন্নত স্যানিটেশনব্যবস্থার আওতায় আনতে পয়োশোধনাগার নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ প্রকল্পের জন্য ৭৪ দশমিক ১১ একর জমি কিনতেই দুই হাজার ১৫৫ কোটির প্রকল্প হাতে নিয়েছে সংস্থাটি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, চট্টগ্রামের কালুরঘাটের হামিদচরে পয়োশোধনাগারের জমি অধিগ্রহণের প্রকল্পটি আজ একনেকে উত্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় দুই হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। সরকারি অর্থায়ন হলেও ৮৬২ কোটি টাকা অনুদান আর বাকি এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা চট্টগ্রাম ওয়াসাকে ঋণ হিসেবে দিচ্ছে সরকার।
চট্টগ্রাম মহানগরীর কালুরঘাট ও বাকলিয়া এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই স্যানিটেশনব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পয়োশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রম হলোÑ ৭৪ দশমিক ১১ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, রি-টেইনিং ওয়াল নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও বারবেড ওয়াল নির্মাণ, কালভার্ট নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ এবং রাস্তা নির্মাণ।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, চট্টগ্রাম শহরে পয়োব্যবস্থার সূচনা এবং ক্রমান্বয়ে শহরের সব জনগণকে আধুনিক পয়োব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য পুরো শহরকে পরিকল্পিত স্যানিটেশনব্যবস্থার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এই মাস্টারপ্ল্যানে চট্টগ্রাম মহানগরীর সমগ্র এলাকাকে ছয়টি স্যানিটেশন ক্যাচমেন্টে বিভক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কালুরঘাট অঞ্চলে পাঁচলাইশ থানায় চান্দগাঁও মৌজার হামিদচরে ৩০ হেক্টর (৭৪ দশমিক ১১ একর) ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে উল্লিখিত দুটি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এসটিপি-২ ও এসটিপি-৪ একত্রে নির্মাণের লক্ষ্যে আলোচ্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ভূমি অধিগ্রহণপূর্বক স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া ও কালুরঘাট এলাকার প্রায় চার লাখ জনগণকে উন্নত স্যানিটেশনব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রকল্প প্রস্তাবনায়। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নের প্রকল্পটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
এই প্রকল্প ছাড়াও আরো ১৪টি প্রকল্প আজ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নির্মাণবিষয়ক প্রকল্প। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন পাচ্ছে আজ। ২০১৯ সালে তিন হাজার ৯৮২ কোটি টাকায় অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনীতে বেড়ে পাঁচ হাজার ৪২৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ছয় বছরে প্রকল্পটির কাজ হয়েছে মাত্র ৭২ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ৫৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বেড়ে ৬২২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো বোয়িং ৭৭৭-এর মতো বিমান যাতে নিরাপদে অবতরণ করতে পারে, সেজন্য রানওয়ে ও পেভমেন্টের শক্তি বাড়ানো। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৯৩ শতাংশের বেশি।