
গত বুধবারের মন্তব্য-প্রতিবেদনে দিল্লিতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু নিয়ে আমার বিশ্লেষণ জানিয়েছিলাম। প্রথমে ইচ্ছা ছিল একই লেখায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা করব। কিন্তু লিখতে বসে দেখলাম দুই বিষয়ের অবতারণা করতে গিয়ে লেখাটা বেশ দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে ভেবে আলোচনাটি এক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে দিয়ে আজকের জন্য রেখেছিলাম। আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ-বিষয়ক যেকোনো লেখা তার অতীত ইতিহাস দিয়ে শুরু না করলে পাঠক বাংলাদেশের রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহ সঠিকভাবে ধরতে পারবেন না। তাই কিছুটা অতীত চর্চা করা আবশ্যক।
আওয়ামীপন্থি সুশীল লেখক-বুদ্ধিজীবীরা প্রায়ই গর্ব করে বলে থাকেন, ‘হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল, কারণ তার জন্ম ১৯৪৯ সালে হয়েছিল।’ আমার এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, সেটির সঙ্গে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দলটিকে যুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই। মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন সরকারি দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের মোকাবিলায় যে আদি দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান যথাক্রমে ছিলেন সেই দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানী তার দলের মার্কিনপন্থি পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতা করে নিজেরই প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে খানিকটা চীনঘেঁষা বামপন্থি দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন। ১৯৬২ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে রূপান্তরিত হলে শেখ মুজিব সংগত কারণেই দলের নাম বদলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি একনায়ক শেখ মুজিব একদলীয় বাকশাল গঠন করলে দেশের অন্যান্য দলের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও অবলুপ্ত হয়। সেদিন দেশের সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে তবেই স্বৈরাচারী প্ল্যাটফর্ম বাকশালের উত্থান ঘটেছিল।
অতএব ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যে দলটির জন্ম হয়েছিল, তাকে শেখ মুজিব নিজেই ১৯৭৫ সালে কবরস্থ করেন। কাজেই দাফনকৃত একটি রাজনৈতিক দলের মালিকানা অথবা উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা দাবি করতে পারেন না। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ ২৩ জুন যে তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে থাকে, সেটি এক ধরনের জালিয়াতি। একদলীয় বাকশাল সরকার পতনের পর এ দেশের জনগণ রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেলে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নতুন দল আওয়ামী লীগেরও জন্ম হয়। মজার ব্যাপার হলো, ১৯৭৭ সালে আওয়ামী লীগ (মালেক), আওয়ামী লীগ (মিজান) প্রভৃতি নামে একাধিক ব্র্যাকেটবন্দি আওয়ামী লীগ জন্ম নিয়েছিল। সেই সময় শেখ হাসিনা ছোট বোন রেহানাসহ তার পরিবারের সব সদস্য নিয়ে দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধী সরকারের আশ্রয়ে ছিলেন। শেখ হাসিনা দিল্লিতে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের মালেক উকিল অংশের নেতা ড. কামাল হোসেন এবং অন্য কয়েকজন মিলে দলীয় কোন্দল মেটানোর জন্য তাকে দলের সভানেত্রী করেন। দলের সভানেত্রী হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়া সরকারের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। সুতরাং বর্তমান আওয়ামী লীগের বাংলাদেশের প্রাচীনতম দল হওয়ার দাবি ধোপে টেকে না। ইতিহাসের সঠিক পর্যালোচনায় হাসিনার আওয়ামী লীগের জন্ম বিএনপির সঙ্গে ১৯৭৭ সালেই হয়েছিল। এর পরও আওয়ামী লীগের প্রাচীনত্বের ব্যাপারে তাদের সমর্থকরা এঁড়েতর্ক করতে চাইলে মুসলিম লীগকে বাংলাদেশের প্রাচীনতম দলের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠতে পারে। সেই ব্রিটিশ আমলে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাকালও আওয়ামী লীগের অনেক আগে ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ আমলে। আশা করি, ইতিহাসমনস্ক পাঠক আমার ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত হবেন।
নাতিদীর্ঘ ইতিহাস চর্চার পর এবার বর্তমানে ফেরা যাক। ২০১৪ সালে দিল্লির সরাসরি হস্তক্ষেপে হাসিনা একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অবক্ষয় আরম্ভ হয়েছিল। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এর পর থেকে হাসিনা ‘ডিপ স্টেট’ ও ‘ওলিগার্কি’র ওপর অধিকতর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে থাকেন। তারপর এক একটি ভুয়া নির্বাচন গেছে এবং দলের পরিবর্তে ‘ডিপ স্টেট’-এর ওপর হাসিনার নির্ভরতা আরো বেড়েছে। অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার বিনিময়ে শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অধস্তনদের সব ধরনের জুলুম ও বেশুমার দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এর ফলে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একে একে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো প্রকৃত রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে ক্রমেই সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা কব্জা করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে বাংলাদেশকে এক মাফিয়া স্টেটে পরিণত করেছিল। মাফিয়া কুইন শেখ হাসিনা রাষ্ট্রকে বিরোধী দলশূন্য করতে গিয়ে নিজের অজান্তে আওয়ামী লীগকেই বিরাজনীতিকরণ করে ফেলেছিলেন। অব্যাহত অনাচারের ফলে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী পুলিশ ছাড়া রাস্তায় নেমে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে মোকাবিলা করার মনোবল বহু আগেই হারিয়েছিল। এই কারণেই মাত্র ছত্রিশ দিনের মহান বিপ্লবে হাসিনার সিংহাসন ভেঙে পড়েছে। যে মুহূর্তে সেনাবাহিনীর তরুণ অফিসাররা তাদের আন্দোলনরত ভাইবোনদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী মাঠ ছেড়ে পালিয়েছে। কেবল দলটির অস্ত্রধারী পান্ডারা ৫ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশের খুনি বাহিনীর পাশে থেকে গণহত্যায় অংশ নিয়েছে। ওই দিন দুপুরে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী গুন্ডারাও যে যার মতো দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছে।
ফ্যাসিস্ট শাসনের ১৫ বছরে আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনা দিল্লির সমর্থনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলেন। তার আজ্ঞাবহ পুলিশ দেশের কোথাও জামায়াতে ইসলামীর কোনো অফিস চালাতে দেয়নি। এমনকি দলটির ঘরোয়া সভা থেকেও নেতাকর্মীদের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের ভুয়া অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে ভয়াবহ নির্যাতন করার পর তাদের বছরের পর বছর কারাগারে রেখেছিল। একই পুলিশ বিএনপির নয়াপল্টনের প্রধান কার্যালয়ে কিছুদিন পরপর বোমা উদ্ধারের নাটক করেছে, বেআইনিভাবে অফিস তালাবদ্ধ রেখেছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে, লাখ লাখ মামলা দিয়েছে। বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে পুলিশের পোশাকে হাসিনার ব্যক্তিগত খুনি বাহিনীর সদস্য মেহেদি, বিপ্লব ও হারুনদের জনসমক্ষে অভব্য আচরণের দৃশ্য টেলিভিশনে সারাদেশের মানুষ দেখেছে। জামায়াত ও শিবিরের নেতাদের ওপর পুলিশ রিমান্ডে যে অসহনীয় নির্যাতন চলেছে, তার কিছু ঘটনা আমি নিজে ডিবিতে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় দেখেছি। জেলেও কোনো কোনো নেতা আমাকে তাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ কাহিনি বর্ণনা করেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী এত জুলুম সত্ত্বেও দল দুটি আজও আপন মহিমায় যার যার আদর্শ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেও সময়-সুযোগ পেলেই জনসভাগুলোয় তারা নিয়মিতভাবে লাখ লাখ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম ঘটাতে পেরেছিল। বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী নানারকম শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে পার্টি অফিসে মাসের পর মাস অবরুদ্ধ থেকেও প্রায় প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সংগ্রামের ইতিহাসের বিপরীতে আওয়ামী লীগ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? মনে হচ্ছে ৫ আগস্ট এক দিনেই সারা দেশ থেকে দলটি নেতাকর্মীসহ কর্পূরের মতো উবে গেছে।
আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয় পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখেনি। অসংখ্য মানুষের অবরুদ্ধ ঘৃণার বহিঃপ্রকাশে ভবনটি গণশৌচাগারে পরিণত হলেও সেটি দেখভাল করার জন্য একজন নেতাকর্মীকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাদের সিদ্দিকী অথবা রোকেয়া প্রাচীর মতো গুটিকয়েক ব্যক্তি ৩২ নম্বরে ঘোরাফেরা করলেও দলের অফিসে যাওয়ার সাহস কারো হয়নি। মোদির আশ্রয়ে পালিয়ে থেকে শেখ হাসিনা নিয়মিত প্রলাপ বকলেও দেশের অভ্যন্তরে বিএনপির রিজভীর মতো একজন নেতাও এগিয়ে এসে বলছেন না যে, তিনি এই দুঃসময়ে দলের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করবেন। অথচ সরকার এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেনি। শুধু কেন্দ্রীয় নেতারাই নয়, দলের গ্রাম পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও জনরোষের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেশে দেশে ফ্যাসিস্টদের এমন পরিণতির দেখাই মিলবে। এই পরিস্থিতিতে দেশের ও বিদেশের অনেক ব্যক্তি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের দাবি তুলছেন। দেশের বৃহত্তম দল বিএনপিও আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে বলেই তাদের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্যে প্রতীয়মান হচ্ছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম দল জামায়াতে ইসলাম সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই এ বিষয়ে তাদের অবস্থানে ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছে। জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদের সহযোগী দলগুলো আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে তাদের পাশে চাইবে বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। একমাত্র তরুণদের নতুন দল এনসিপি শেখ হাসিনা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে না বলে জানিয়ে রেখেছে।
তর্কের খাতিরে আমরা যদি ধরেও নিই যে, আওয়ামী লীগকে দলীয়ভাবে নৌকা মার্কা নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে, তা হলে আমার প্রশ্ন হলো—এত দুষ্কর্মের পর দলটির কোন নেতা জনগণের মুখোমুখি হওয়ার সাহস করবেন? কে বা কারা দলের প্রার্থী নির্বাচন করবেন? পলাতক গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে দলীয় সভানেত্রীর পদে বহাল রেখে আদৌ কি আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্ভব? দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, এখন পর্যন্ত দলটির কোনো শীর্ষ নেতা তাদের কুকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, কোনো অপরাধ স্বীকারই করেননি। বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে রাষ্ট্রের সংস্কার নিয়ে এত কথা হচ্ছে, কই কেউ তো নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সংস্কারের কথা বলছেন না! কোনোরকম অনুশোচনাবিহীন একটি গণহত্যাকারী ও জালিম দলকে জনগণ এত তাড়াতাড়ি নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে যেন ১৫ বছর ধরে দেশে কিছুই হয়নি! আশাটা একটু অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে না?
আমি মনে করি, শেখ হাসিনা ও তার খুনি, লুটেরা ও মাফিয়া সহযোগীদের দল থেকে বহিষ্কার না করে এবং দলটির অভ্যন্তরীণ সংস্কার ব্যতীত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেওয়া হলে মহান জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মৃতিকে অবমাননা করা হবে। আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চাইলে দলটির তৃণমূল নেতাদের উচিত কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং দলে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ফেলা। দুর্ভাগ্যবশত আত্মশুদ্ধির কোনো লক্ষণ আওয়ামী লীগে এখনো দৃশ্যমান হয়নি। সময় কিন্তু তাদের জন্য দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। প্রফেসর ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য সাপেক্ষে ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আগামী এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে আওয়ামী লীগের দেশি-বিদেশি শুভানুধ্যায়ীদের উচিত হবে, শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের সব সদস্য এবং লুটপাট ও গণহত্যায় অভিযুক্ত সব নেতাকে দল থেকে এখনই বহিষ্কারের পরামর্শ দেওয়া। নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে দলীয় সংস্কারশেষে পুনর্গঠিত আওয়ামী লীগকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে, সুযোগ পেলে আবার তারা স্বৈরাচারী শেখ মুজিবের বাকশাল কিংবা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দানবীয় আওয়ামী লীগে ফিরে যাবে না।
আওয়ামী লীগ চরিত্রগতভাবে সন্ত্রাসী, লুটেরা ও আত্মবিধ্বংসী এক আজব দল। স্বাধীন বাংলাদেশে দলটি এরই মধ্যে তিনবার ইন্তেকাল করেছে। তাদের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ইনিংস যথাক্রমে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠা, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একনায়ক মুজিবের পতন এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগকে চতুর্থ ইনিংস খেলতে হলে নতুন নেতৃত্বে সাফসুতরো খেলোয়ার নিয়ে মাঠে নামতে হবে। শেখ হাসিনার মতো কুৎসিত ও পচা মাল তরুণ প্রজন্মের বিপ্লবী বাংলাদেশে আর চলবে না। পুনর্জন্মপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নতুন ক্যাপ্টেনের চেহারা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।