Image description

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর পেন্টাগন ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধ্বংসাবশেষ থেকে ধোঁয়া তখনো নিভে যায়নি, তার মধ্যেই ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা একে ওপরের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করে। একপক্ষ প্রশ্ন তোলে জর্জ ডব্লিউ বুশ কি আল কায়েদার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্কীকরণ বুঝতে পারেননি? অন্যপক্ষের দাবি, বিল ক্লিনটন কি সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়কে বিকাশের অনুমতি দেয়ার জন্য দায়ী ছিলেন না? সত্যি কথা হলো বল দুজনের কোর্টেই। ক্লিনটনের কাছে আফগানিস্তান জয়ের বিষয় ছিল না। তাই, নেতৃত্ব দেয়ার পরিবর্তে তিনি পছন্দ করেছিলেন বিষয়টিকে দৃষ্টির বাইরে রাখতে। ইসলামপন্থী দলগুলো আমেরিকার প্রতি তাদের ঘৃণা প্রদর্শন  করলেও সাংবাদিক এবং নীতিনির্ধারকরা হাজার হাজার মাইল দূরে আরবি এবং পুশতুন নামের বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। 

এদিকে সেক্রেটারি অব স্টেট ম্যাডেলিন অলব্রাইট তালেবানদের সম্পৃক্ত করতে চেয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে খারাপ প্রবৃত্তিকে নিবৃত্ত করতে পেরেছিলেন। বিশ্বস্ত কূটনীতিকরা বিশ্বাস করেছিলেন যে, তারা তালেবান ও ওসামা বিন লাদেনকে পৃথকীকরণে এবং তার সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবির বন্ধ করতে রাজি করাতে পেরেছিলেন।

১৫০০ মাইল দূরে বাংলাদেশে এখন সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে বিক্ষোভকারীরা দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা এবং একটি মুসলিম দেশের প্রথম নারী নেত্রীদের একজন। শেখ হাসিনা সময়ের সাথে সাথে ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছিলেন এবং ছাত্ররা বিশেষ করে তার পদত্যাগের পর খুশি হয়েছিল। বেশিরভবাগ বাংলাদেশিদের বুঝতে খুব একটা সময় লাগেনি যে, তারা যে ‘শয়তান’কে চিনত তা এখনের থেকে অনেক ভালো। দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়ে ২০০৬  সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্বমঞ্চে খ্যাতনামা বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনিও বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিয়েছিলেন। হাসিনার পতনের পর ৮৪ বছর বয়সী ইউনূসের হাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘প্রধান উপদেষ্টা’ পদের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়। সম্ভবত রাজনৈতিক ক্ষোভ  ইউনূসকে অন্ধ করে দিয়েছিলো, অহমবোধ তাকে ঘিরে রেখেছিলো। কিন্তু আজ তিনি ক্রমবর্ধমানভাবে একটি ইসলামপন্থী এবং সন্ত্রাস আলিঙ্গনকারীদের সমর্থন দিয়ে চলেছেন। জামায়াতে ইসলামী দেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল, যার পাকিস্তানি শাখা সেই দেশের সবচেয়ে উগ্র দলগুলোর মধ্যে একটি, দ্রুত বাংলাদেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করছে। শেখ হাসিনা ও তার ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর প্রথম সপ্তাহে সংখ্যালঘু এবং উদারপন্থীদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে।  বাইরের দেশগুলো বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলোতে বাংলাদেশ খবরের শিরোনাম হচ্ছে, ১৭৫ মিলিয়ন মানুষের দেশটি বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিরাপদ আশ্রয়স্থলে রূপান্তরিত হয়েছে। ঠিক যেমন কয়েক দশক আগে আমেরিকান সাংবাদিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বুঝতে পারেননি  ইসলামপন্থী দলগুলোর দ্রুত বিস্তার ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, হরকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামী-বাংলাদেশ পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈয়বার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, যারা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার নেপথ্যে ছিল। জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করার জন্য তার নতুন নিরাপদ আশ্রয়স্থলকে ব্যবহার করছে। এর একটি শাখা, নিও-জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ, সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের পরিপূরক হিসেবে যোদ্ধাদের নিয়োগ করছে। 

শুধুমাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিদেশিদেরও তারা লক্ষ্যবস্তু করছে। বাংলাদেশের বর্তমান নতুন শাসন ব্যবস্থায় হিযবুত তাহরীর এবং খেলাফত-ই-মজলিস সন্ত্রাসীদেরও জেল থেকে বের করে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ আজ অনেকটাই ২০০০ সালের আফগানিস্তানের মতো। বাংলাদেশে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারের অধীনে খেলাফতে মজলিস, আল্লাহর দল এবং আহলে হাদীস আন্দোলন বাংলাদেশ এখন একত্রিত হয়েছে। তাদের স্লোগান, ‘বাংলাদেশ হবে আফগানিস্তান, আমরা হবো তালেবান’।

বিন লাদেন নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনের ওপর সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন কারণ ক্লিনটন ও বুশ উভয়েই সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদের দিকে বাংলাদেশের দ্রুত অবতরণকে উপেক্ষা করে জো বাইডেন এবং ডনাল্ড ট্রাম্প তাদের পূর্বসূরিদের ভূমিকাগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করছেন। প্রধান পার্থক্য হল বাংলাদেশে একটি সন্ত্রাসী ঘাঁটি দু’টি কারণে আরও বিপজ্জনক হতে পারে। প্রথমত, বাংলাদেশ হলো বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ। গুহা, পর্বতের গোপন আস্তানা, শহুরে বস্তি থেকে সন্ত্রাসীদের বের করে আনা কঠিন। দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তান ছিল স্থলবেষ্টিত, কিন্তু বাংলাদেশের সীমানা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল এবং সেখানে সমুদ্র দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বড় সুযোগ রয়েছে। ইসলামিক স্টেটের নতুন সাম্রাজ্য আরও সুসংহত হওয়ার আগে তাদের পথ রুদ্ধ করার সময় এসেছে।

লেখক:ওয়াশিংটন এক্সামিনারের বেল্টওয়ে কনফিডেন্সিয়ালের একজন অবদানকারী। তিনি মধ্যপ্রাচ্য ফোরামের বিশ্লেষণের পরিচালক এবং আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র ফেলো। 

সূত্র: ওয়াশিংটন এক্সামিনার