Image description
অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা

জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে আরেকটি সংগঠন আসছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। পরবর্তী সময়ে ছয় মাসের মধ্যে এটি রূপ পেতে পারে রাজনৈতিক দলে।

জানা গেছে, সংগঠনটির আহ্বায়ক হতে পারেন আলী আহসান জুনায়েদ এবং সদস্য সচিব হতে পারেন রাফে সালমান রিফাত। তারা দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। জুনায়েদ পড়েছেন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে। আর রিফাত পড়েছেন ফার্মেসিতে। তারা দুজনই ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। পরবর্তী সময়ে অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন দুজনই।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া এই দুই নেতা বলছেন, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার জায়গাটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সেটাকে বাঁচিয়ে রাখতেই তাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, গণহত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে থাকবেন তারা।

আলী আহসান জুনায়েদ কালবেলাকে বলেন, মূলত এটা একটা পলিটিক্যাল প্রেশার গ্রুপ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। আমরা এটার প্রয়োজনীয়তা মনে করেছি এজন্য, জুলাই অভ্যুত্থানের যে স্পিরিট, সেটা আস্তে আস্তে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যেও একটা হতাশা তৈরি হচ্ছে। এই অভ্যুত্থানকে আমরা যদি রক্ষা (ডেলিভার্ড) করতে না পারি, তাহলে নতুন রাজনীতি বলতে আমরা যা বুঝেছি তা আর পরিণত হবে না। সুতরাং আমরা মনে করেছি জুলাইয়ের স্পিরিটকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের দাবিকে কেন্দ্র করে একটা প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন।

নতুন এই সংগঠনের কার্যক্রম কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে জুনায়েদ বলেন, আমরা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটা কার্যত অবস্থান নিতে চাই। একই সঙ্গে জুলাই আহতদের নানা দুঃখ-বেদনার কথা শুনছি, শহীদ পরিবারের দুঃখ-বেদনার কথা শুনতে চাই। তাদের এই ব্যাপারগুলো ক্যামেরার সামনে নিয়ে এসে স্যালুট করতে চাই। আমরা তাদের মর্যাদা এবং স্বীকৃতির প্রশ্নটা অর্জন করতে চাই। গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা সরকারকে আরও তৎপর দেখতে চাই। সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এই ব্যাপারে আরও তৎপর দেখতে চাই। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জায়গায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য গঠনে কাজ করতে চাই।

তিনি বলেন, শুধু সাবেক শিবির নয়, সব মতের মানুষের জন্যই এই প্ল্যাটফর্ম উন্মুক্ত থাকবে। শিবির ‘ট্যাগিং’য়ে এনসিপিতে (জাতীয় নাগরিক পার্টি) যাদের জায়গা হয়নি, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ পূরণের সম্ভাবনা না থাকায় যারা এনসিপিতে যোগ দেননি, তাদের নিয়ে হবে এই প্ল্যাটফর্ম।

আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, আন্দোলনে যারা স্টেকহোল্ডার ছিল, তাদের সবাইকেই আমরা রাখব। আন্দোলনে অনেক ধরনের স্টেকহোল্ডার ছিল। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বলি, নারীরা বলি, দিনমজুররা বলি, মাদ্রাসার ছাত্র বলি সবাইকে এনগেজমেন্টে রেখেই স্ট্রাকচারটা আমরা সাজাব। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমরা সবাইকে অ্যাকোমোডেট (অন্তর্ভুক্ত) করে কাজ করতে চাইছি।

নতুন এ সংগঠনের আরেক উদ্যোক্তা রাফে সালমান রিফাত কালবেলাকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে গোটা জনগোষ্ঠীর মাঝে যে আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়েছিল, আমরা নতুন বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছি। যে স্পিরিট ছিল সেগুলো অনেকটা ফিকে হয়ে আসছে। আহত এবং শহীদদের মর্যাদা দেওয়া এবং জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য প্রেশার দেওয়া, বাংলাদেশ পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা এবং পেশিশক্তি নির্ভর রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা এবং দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এটার ওপর প্রেশার দেওয়ার মতো তেমন কেউ নেই। সে জুলাইয়ের স্পিরিটকে সমুন্নত করার জন্যই সমস্ত দল-মত-পথের মানুষকে নিয়েই আমরা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মটা করতে যাচ্ছি। আমাদের মূল ফোকাস থাকবে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা। যে গণহত্যা হয়েছে তার বিচারের জন্য সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে চাপ দেওয়া, যেসব ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনো বিলুপ্ত হয়নি সেগুলো বিলুপ্ত করতে চাপ দেওয়া সাবেক শিবির পরিচয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শিবির করেছি এবং ছাত্রজীবন শেষে বিদায় নিয়েছি। বিদায় নেওয়ার পর জুলাই অভ্যুত্থানে শুধু অংশগ্রহণই নয়, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে। ওই সুযোগটাই মূলত আমাদের বিদ্যমান ক্যারিয়ার এবং চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করে দিয়ে নতুন রাজনৈতিক স্বপ্নের দিকে ধাবিত করছে। পূর্বপরিচয় নিয়ে আমাদের কোনো হীনম্মন্যতা নেই। একসঙ্গে বাংলাদেশে আমরা মধ্যমপন্থি এবং জনমুখী, কল্যাণমুখী রাজনৈতিক ধারার জন্য নাগরিক কমিটিতে যাই, কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা এনসিপিতে যাইনি। এখনো আমরা ওই মূল্যবোধকে ধারণ করেই সামনের দিকে এগোতে চাই।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে যোগ দেন আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত। এরপরই মূলত তাদের দুজনের অতীত রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আসে। জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের ভূমিকার কথাও আলোচিত হয়। এরপর ৯ ডিসেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করা হয়। সেখানে জুনায়েদকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাফেকে যুগ্ম সদস্য সচিব করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদের জন্য জুনায়েদের নাম আলোচিত হয়। রাফে সালমান রিফাতও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন, এমন আলোচনাও তখন ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সেটি হয়নি এবং দল গঠন প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন তারা। এরপর থেকেই তাদের নেতৃত্ব নতুন কোনো প্ল্যাটফর্ম আসার গুঞ্জন ওঠে। অবশেষে তা-ই সত্যি হতে চলছে।