Image description

অভ্যুত্থানে ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

বুধবার (১২ মার্চ) রাজধানীর হোটেল জোনাকির কনফারেন্স হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।

ইফতার পূর্ব সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম তার বক্তৃতায় বলেন, গত ১৬ বছর ছিল আমাদের জন্য এক দীর্ঘ চ্যালেঞ্জিং যাত্রা। এই সময়ে আমরা ফ্যাসিজমের করালগ্রাসে শতাধিক ভাইকে হারিয়েছি, ফ্যাসিজমের নির্যাতনে আমাদের অসংখ্য ভাইয়ের শরীর থেকে রক্ত ঝরেছে, আমাদের অনেক ভাই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, হাজার হাজার ভাই গুম হয়েছেন, অনেকে ফিরলেও এখনো ৬ জন ভাই গুম অবস্থায় আছেন। আমাদের অসংখ্য ভাই স্বাভাবিক ছাত্রজীবন কাটাতে পারেননি, অনেকে ছাত্রজীবন শেষ করতে পারেননি। জনশক্তিরা সবসময় ক্যাম্পাসে ভীতিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন। গেস্টরুম, র‌্যাগিং, মানসিক টর্চার—এসব অন্যায়ের শিকার হয়েছেন আমাদের অসংখ্য ভাই। এই সব দমনপীড়নের কথা আমরা কখনো ভুলতে পারব না। অবশেষে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আল্লাহ আমাদের এ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

 

তিনি বলেন, সেই অভ্যুত্থানে ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন। ফ্যাসিজমের পতনের আন্দোলনে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ছাত্র-জনতার সাথে সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি। একটি ইমারত নির্মাণের জন্য অনেক উপকরণের প্রয়োজন হয়। ইমারত নির্মাণে ছোট-বড় কোনো উপকরণকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সবগুলো উপকরণের সংমিশ্রণেই একটি ইমারত নির্মিত হয়। তেমনি জুলাই অভ্যুত্থানও অনেক স্টেকহোল্ডারের সমন্বিত চেষ্টার মধ্য দিয়ে সফল হয়েছে। এজন্য এ আন্দোলনে কোনো একক মাস্টারমাইন্ড নেই, কোনো একক নেতা নাই। আমরা মনে করি, এ আন্দোলনের মূল ক্রেডিট আমাদের শহীদ ও আহত হওয়া ভাইদের। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে জুলাইয়ের সে স্পিরিটের আলোকে নতুন বাংলাদেশ গড়ায় ভূমিকা রাখা।

 
 

তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছি। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে যে ট্রমা তৈরি হয়েছিল, সেই ট্রমা কাটিয়ে উঠা এবং ছাত্ররাজনীতির গুণগত সংস্কার সাধন করে একে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা কাজ করছি। জুলাইয়ের স্পিরিটকে জাগিয়ে রাখার জন্য আমরা জুলাই এক্সিবিশনসহ বিভিন্ন আয়োজন করছি। আমরা ফ্যাসিস্ট আমলের ভয়ের সংস্কৃতি ভেঙে সকলের জন্য বিকশিত হওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে চাই। তাই নিজেদের ব্যাপকভিত্তিক ছাত্রকল্যাণ ও সেবামূলক কাজে নিয়োজিত রেখেছি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ছাত্রশিবির সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা আমাদের এ কাজগুলোকে আরও বেগবান করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

 

দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে সকলের সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। ছাত্রশিবির কর্তৃপক্ষ সম্মানিত অতিথিদের উপস্থিতি ও অনুষ্ঠানের সাফল্যের জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়।

কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির, ডা. শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তাফা হায়দার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধানসহ রাজনৈতিক, সাংবাদিক, সামাজিক, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা।