
গুমের পর ক্রসফায়ারের শঙ্কায় দিন কাটতো বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের। শেখ হাসিনাসহ দেড় যুগে সব গুম-খুনে জড়িতদের বিচার দাবি জানিয়েছেন তিনি। গুমের ১০ বছর পর সময় সংবাদকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ও আওয়ামী লীগের বিষয়েও জানিয়েছেন অবস্থান। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় কিংবা গণপরিষদ ভোটের প্রস্তাবের পেছনে ভিন্ন মতলব দেখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন আতঙ্কে তখন ঘরছাড়া বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী। নেতাদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে। নানা কৌশলে দলের কেন্দ্রীয় বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দিতেন তৎকালীন বিএনপির মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার বন্ধুর বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পরিচয়ে কালোকাপড়ে চোখ ও হাত বেঁধে তুলে নেয়া হয় তাকে।
এরপর দুই মাস রাখা হয়েছিল অজ্ঞাত স্থানে কবরের মতো অন্ধকার ছোট্ট কুঠুরিতে। ঠিক ৬১ দিন পর ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার হন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। এরপর আইনি জটিলতা আর সরকারের রোষানলে দেশে ফেরা সম্ভব হয়নি তার। সরকার পতন হলে দীর্ঘ ৯ বছর পর দেশে ফেরেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। সময় সংবাদকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন, বিভীষিকাময় সেই দিনগুলোতে ভয় গ্রাস করেছিল তাকে। ক্রসফায়ারের শঙ্কায় কাটতো দিন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন,
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে আমাকে হাত ও চোখ বেঁধে গ্রেফতার করে নেয়া হয়। এরপর আমি সব সময় অপেক্ষা করেছিলাম যে তারা হয়ত কোনো এক সময় আমাকে ক্রসফায়ার দেবে। কারণ এটা তাদের জন্য তখনকার সময়ে স্বাভাবিক ছিল।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশেই গুম হন বলে দাবি এই বিএনপি নেতার। দেড় যুগে সব গুম-খুনে জড়িত প্রত্যেকের বিচার দাবি করেন তিনি।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশেই যে এসব ঘটনা ঘটেছে, সেটা জাতিসংঘের প্রতিবেদনে প্রমাণ হয়েছে। প্রতিটি গুম-খুন, আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার এ দেশের মাটিতে হতেই হবে। সেজন্য যত সময়ই লাগুক, যে রকম আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হোক-- তা করতে হবে।
এদিকে দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ও আওয়ামী লীগের বিষয়েও কথা হয় এই বিএনপি নেতার সঙ্গে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় কিংবা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবির পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জনগণ তো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার নির্বাচনের জন্য গণ-অভ্যুত্থান করেননি। গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকার ফেরত পাওয়াই ছিল জন–আকাঙ্ক্ষা। এখানে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। যারা এ ধরনের কথাগুলো বলছেন, তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।
তিনি আরও বলেন,
আওয়ামী লীগ হচ্ছে এ দেশের একটি ‘ফরগটেন হিস্ট্রি’। আমি মনে করি না যে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে কোনো সময় স্বাগত জানাবে। আর জামায়াতে ইসলামী তার নিজস্ব আদর্শিক রাজনীতি করে। তাদের নির্বাচনী কৌশল হিসেবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট করবে কি করবে না, সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমরা রাজনৈতিক অঙ্গনে সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি, পক্ষ বা বিপক্ষ নয়।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে বলেও আশা করেন বিএনপির নীতির্নিধারণী পর্যায়ের এ নেতা।