
জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশের রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করেছে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জনপ্রত্যাশা পূরণে আত্মপ্রকাশের দিনেই বেশকিছু প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। মাঠের রাজনীতিতে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি, তরুণরা যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন-জনগণ তা ইতিবাচক হিসাবে গ্রহণ করেছেন। তবে অঙ্গীকারগুলো পূরণ করতে তরুণদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। তবে দলটির নেতারা তেমনটি ভাবছেন না। তাদের মতে, দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ দ্বি-দলীয় ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা হয়েছে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জ ফেস করতেই হবে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তরুণরা জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করে যাবে।
এদিকে দল ঘোষণার পর এখনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি গ্রহণ করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি। দলীয় কর্মসূচি ঠিক করতে চলতি সপ্তাহে দলে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হতে পারে। সেখানে কর্মসূচি চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, অতীতের নতুন কোনো রাজনৈতিক দল নিয়ে মানুষের এত বেশি আগ্রহ প্রত্যাশা তৈরি হয়নি। এবার জাতীয় নাগরিক পার্টি নিয়ে যেমনটা তৈরি হয়েছে। আলোচনা-সমালোচনা প্রতিক্রিয়া যেভাবে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে হয়, তেমনটা হচ্ছে এই দল নিয়েও। এই দল নিয়ে মানুষ ভীষণ আগ্রহ দেখাচ্ছে। এজন্য জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শুক্রবার দেশের রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। লাখো তারুণ্যের মহড়ায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এ দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তরুণ নেতারা প্রথম দিনই বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থি রাজনীতি ঠাঁই দেওয়া হবে না। দিনের ভোট রাতে করতে না দেওয়া, পরিবারতন্ত্র রাজনীতি ভেঙে দেওয়ার কথাও বলেন তারা। চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গঠন এবং রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলাসহ বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দেন নেতারা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছেন বলেও জানান দেন। পাশাপাশি নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নতুন দল আত্মপ্রকাশ করেছে। আগামীতে আরও রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হতে পারে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা থাকে। এই চিন্তা-চেতনা থেকে সবাই প্রতিশ্রুতি দেবেন এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনগণের কাছে যাবেন। এমন সুস্থ গণতন্ত্রের জন্যই আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছি। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশকে আমি খুবই ইতিবাচক হিসাবে দেখছি। আশা করছি এটি স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক দল হবে। তারা সব আইন-কানুন বিধি-বিধান মেনে চলবে। এই দলটি অবশ্যই মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। আমাদের এখানে একটা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকে, ভিন্ন মত থাকে। আমি আশা করব সব মতের সমন্বয় ঘটিয়ে দলটি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে সব সমস্যার সমাধান করবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। তারা যে অঙ্গীকার ও ঘোষণা দেন-জনগণ তা ইতিবাচক হিসাবে নিয়েছে। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে উঠে আসা নতুন রাজনৈতিক দল তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ভূমিকা রাখবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ দ্বি-দলীয় ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক ও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে গণতান্ত্রিক চর্চা, মূল্যবোধ ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে আসবেই। তবে তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল সব সমস্যা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবে এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে।