Image description
বরগুনার আমতলী, ঠিকাদারির কাজ করেছেন ইউনিয়ন আ.লীগ নেতা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না: ইউএনও, কোনো উদ্যোগ নেই। ৫৬ হাজার মানুষের চলাচলে ভোগান্তি।

বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে ২০০৮ সালে বিভিন্ন খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল ২১টি আয়রন সেতু। এই সেতুগুলো নির্মাণে ঠিকাদারির কাজ করেছিলেন হলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধা। গত আট মাসে এর ১০টি সেতু ভেঙে পড়েছে। এসব সেতু ভেঙে মানুষও মারা গেছে। এতে ইউনিয়নের অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ পড়েছে ভোগান্তিতে। একই সঙ্গে বাকি সেতুগুলো দিয়ে চলাচলেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

আমতলী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর

২০০৭-০৮ অর্থবছরে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন খালে ২১টি আয়রন সেতু নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে। প্রতিটি সেতুতে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই সেতুগুলোর কাজ পান তৎকালীন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে কাজগুলো বাগিয়েছিলেন তিনি এবং কাজগুলো করেছেন দায়সারাভাবে। সেতুতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে এই নেতার বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে সেতু নির্মাণের অনিয়ম তুলে ধরে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুগুলো নড়বড়ে হয়ে যায়। ১৩ বছর ধরে ওই নড়বড়ে সেতু দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন, চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ চলাচল করছে। গত বছরের জুন মাসে সেতুগুলো ভেঙে যাওয়া শুরু হয়। ওই বছরের ২২ জুন বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নিয়ে হলদিয়া হাট সেতু দিয়ে যাওয়ার সময় সেতু ভেঙে ১০ জন নিহত হয়। তবে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রকৌশল অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

হলদিয়া হাট সেতু ভেঙে যাওয়ার ৫ দিনের মাথায় মল্লিকবাড়ীর টেপুড়া খালের সেতু ভেঙে পড়ে। এরপর একে একে বাঁশবুনিয়া, সোনাউডা, হলদিয়া বড় মোল্লা বাড়ী, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া নজরুল সিকদার বাড়ী, কাঁঠালিয়া বাজে সিন্ধুক, কাঁঠালিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন, চন্দ্রা আউয়াল নগর এবং সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে চর রাওঘা সেতু ভেঙে পড়ে।

এদিকে ১০টি সেতু ভেঙে পড়লেও উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও প্রশাসন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যদিকে ভেঙে পড়া সেতুগুলো খালে পড়ে আছে। এগুলো অপসারণের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গত শনিবার হলদিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, সেতুগুলোর ভাঙা অংশ খালে পড়ে আছে। খালের ওপর বিকল্প বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছে এলাকাবাসী।

চাওড়া চন্দ্রা গ্রামের নাসির হাওলাদার বলেন, চাওড়া নদীতে নির্মিত দুটি সেতু আট মাসের মাথায় ভেঙে পড়েছে। এভাবে হলদিয়া ইউনিয়নের অনেক সেতু ভেঙে গেছে। নির্মাণের ১৮ বছরের মাথায় এভাবে সেতু ভেঙে যাবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

জালাল মীর বলেন, পরপর হলদিয়া ইউনিয়নে সেতুগুলো ভেঙে পড়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সর্বশেষ ভেঙেছে চর রাওঘা সেতু। চর রাওঘা গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, ১৫ বছর ধরে সেতুটি নড়বড়ে ছিল। স্থানীয়রা ওই সেতু খেজুরগাছ দিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছে। শুক্রবার রাতে সেতুটির মাঝের অংশ ভেঙে খালে পড়ে যায়।

হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, গত আট মাসে ১০টি সেতু ভেঙে পড়েছে। এতে হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নের অন্তত ৬৫ হাজার মানুষ যোগাযোগে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছে। ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগস্ট থেকে তিনি এলাকাছাড়া। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আট মাস আগে সোনাউডা সেতু ভেঙে পড়লেও উপজেলা প্রকৌশল অফিস কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ওই সেতুগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভেঙে পড়েছে। সেতুর মেয়াদকাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এত কিছু আমি জানি না।’

২০০৮ সালে উপজেলার বিভিন্ন খালের ওপর নির্মাণ করা ২১টি লোহার সেতু। এর মধ্যে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ভেঙে পড়েছে। এতে বাকি সেতুগুলো দিয়ে চলাচলে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। গত শনিবার বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে।