Image description
 

রমজানেও মাঠে সক্রিয় থাকবে বিএনপি। সভা-সমাবেশের মতো কোনো কর্মসূচি না থাকলেও সাংগঠনিক ও ধর্মীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকবে নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রসহ তৃণমূলে ইফতার পার্টি বাড়ানোরও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক সামাজিক অনুষ্ঠানসহ ‘উঠান বৈঠকের’ মতো নানা কর্মসূচি থাকবে। এর মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে জনমত তৈরির পাশাপাশি ভোটের হাওয়া দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়াই টার্গেট। তবে কোনো অপশক্তি যাতে ষড়যন্ত্র কিংবা অপতৎপরতা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা রয়েছে।

রমজানে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনই প্রধান লক্ষ্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের। ইতোমধ্যে ক্লিন-ইমেজের দলীয় সাবেক এমপি ও তরুণ ছাত্রনেতারা এলাকাকেন্দ্রিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনই নির্বাচনের একটা বার্তা। রমজানে সবাই রোজা রাখেন, রাতে ইবাদত-বন্দেগি করেন, এই মাসে ইফতার পার্টির মাধ্যমেই সাংগঠনিক তৎপরতা চালু থাকবে। সর্বস্তরের মানুষ নিয়ে বিএনপির ইফতার পার্টি হবে। বিগত সময়ে ইফতার পার্টিগুলো ভেঙে দিয়েছে স্বৈরাচার সরকার। এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এজন্য রাজধানীসহ সারা দেশের সব পর্যায়ে ইফতার পার্টি করবেন নেতাকর্মীরা।’

সূত্র জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও রোজার প্রথম দিনে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে এতিম ও আলেম-ওলামাদের সঙ্গে নিয়ে ইফতার মাহফিল করবে বিএনপি। ৬ রমজান বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করবে দল। পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতারের আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কর্মসূচিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, প্রতিটি থানাভিত্তিক এবং বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন থাকবে। দেশের সাংগঠনিক ১০ বিভাগ, জেলা, থানা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়েও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিল করবে। অধিকাংশ ইফতার মাহফিলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন এবং দলের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নেবেন।

 

এদিকে রমজানের আগেই দলের বর্ধিত সভার আয়োজন করছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের কথা শুনবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রমজানে বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের করণীয় বিষয়গুলো উঠে আসবে বলেও মনে করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, রমজানে সভা-সমাবেশ না থাকলেও মাসজুড়ে দলের নানা কর্মসূচিতে তৎপর থাকবে। এর মধ্য দিয়েই জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া তৈরি হবে। ইফতার-মাহফিলের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা গুরুত্ব পাবে। বিএনপির জন্য আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবেও দেখছেন নীতিনির্ধারকরা। এজন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান এমন সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাবে। জনগণের কাছে তাদের ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়াতে নানামুখী কাজে তৎপর থাকবে নেতারা। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে রমজানকে সাংগঠনিক মাস ধরে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মাসজুড়েই চলবে সাংগঠনিক শক্তির মহড়া। কোথাও কোনো কোন্দল বা দুর্বলতা থাকলে তা দূর করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সমন্বয়হীনতা দূর হবে বলেও আশাবাদী তারা। এছাড়া কাউন্সিলের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। বিগত সময়ের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি যুগান্তরকে বলেন, রমজান ইবাদতের মাস। রাজনৈতিক বড় কর্মসূচি, সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচিতে যাব না। আমাদের কার্যক্রম থাকবে এতিমদের পাশে থাকা। এতিম ও ওলামা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিকদের সম্মানে ইফতার করা। এছাড়া নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য আমাদের জোরালো দাবি আছে। তবে রমজানে সে অনুযায়ী সাংগঠনিক তৎপরতা থাকবে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল যুগান্তরকে বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি জাতীয় নির্বাচন এ বছরেই হবে। সরকার খুব দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। রমজান মাস উপলক্ষ্যে বিশেষ কোনো কর্মসূচি এখনো দল থেকে ঘোষণা আসেনি। তবে ইফতার পার্টির মাধ্যমে এক ধরনের নির্বাচনি হাওয়া তৈরি হবে বলে মনে করি। বাংলাদেশের জনগণ চাচ্ছে খুব শিগগিরই একটা নির্বাচন হোক। জনগণ নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নেমে গেছেন। নির্বাচনি আবহাওয়া তৈরি হয়ে গেছে। শিগগিরই নির্বাচন না হলে এই জনগণ মাঠ থেকে উঠে যাবে না। তিনি বলেন, রমজান মাসে আমাদের সাংগঠনিক যে কর্মকাণ্ড, নতুন কমিটি, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিগুলো করা-এগুলো থাকবে। সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে সব কমিটি করার জন্য গত জানুয়ারি মাসেই দলের থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। পুরো রমজান মাসে আমাদের প্রত্যেক উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতার পার্টি হবে। পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও চলবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, যারা সম্ভাব্য প্রার্থী তারা বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ইফতারের মাধ্যমে তারা গ্রাম পর্যায়েও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাবেন। বাগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, এলাকায় নিয়মিত সময় দিচ্ছি। হাইকমান্ডের নির্দেশনায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখছি। বিএনপির ওপর জনগণের আস্থা বাড়ছে। আসন্ন রমজানে বিগত সময়ের চেয়ে এবার ইফতার পার্টির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বাড়বে। এর মধ্য দিয়েই সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।