
জুলাই গণহত্যা সংঘটিত করে গণপ্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা, তার দল আওয়ামী লীগ ও দোসর রাজনৈতিক দলগুলোর মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপিদের ফ্যাসিবাদী ঘোষণা করে তালিকা প্রকাশ করেছে ফ্যাসিবাদ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে গণঅবস্থানকারী ছাত্র-জনতা।
তারা বলছেন, তালিকাভুক্তদের গ্রেফতার করে ৭ থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করতে হবে। এমনকি তাদের নির্বাচন করার অধিকারও বাতিল করতে হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় গণঅবস্থানের ১০ম দিন উপলক্ষে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
তালিকা ঘোষণা করেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিলোপে আমরা এ গণঅবস্থান থেকে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেছি। এর তৃতীয় দফার আলোকে আমরা আজ ফ্যাসিবাদী মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপিদের তালিকা প্রকাশ করেছি।
ফজলুর রহমান বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী রেজিমের মন্ত্রিসভার সব সদস্য ও উপদেষ্টাকে ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী ঘোষণা করছি। তাদের সবাইকে গ্রেফতার ও ফ্যাসিস্ট হিসেবে ১৪ থেকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার দাবি জানাই। যারা উগ্র ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী ছিলেন তাদের ১৪ বছরের কারাদণ্ড হবে। যারা বিতর্কিত নয় এবং তুলনামূলকভাবে কম খারাপ তারা স্রেফ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার কারণে সাত বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবেন। এরা কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। জনপরিসরে, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে বক্তৃতা করতে পারবে না।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের এই নেতা আরও বলেন, তালিকায় যেসব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও উপদেষ্টার নাম রয়েছে আমরা তাদের সবাইকে গ্রেফতার ও বিচার দাবি জানাই।
ফ্যাসিবাদীদের তালিকা প্রকাশের সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান, সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান ও আব্দুস সালাম, সদস্য মাহমুদুল হাসান ফয়সাল।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মো. ফরহাদ আহমদ আলী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা মো. ওমর ফারুক ও আবু সাঈদের অনশনের মধ্য দিয়ে রাজু ভাস্কর্যের চলমান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনশনে যোগ দেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা।
১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তরার শহিদ রানা তালুকদারের পরিবার এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালানোর আহ্বান জানান। তার অনুরোধে অনশন ভেঙে লাগাতার গণঅবস্থান শুরু হয়।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ। দাবিগুলো হলো-
১. গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, তাদের মিত্র ১৪ দল ও মহাজোট এবং এসব দলের সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. সব ফ্যাসিবাদী দল ও সংগঠনের কার্যালয় ও সব সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করে তা ফ্যাসিবাদী আমলে নির্যাতিত অসহায় মজলুমদের পুনর্বাসনে ব্যবহার করতে হবে।
৩. ২০০৯-২০২৫ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট সরকারগুলোর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সব মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সব এমপি, সব জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যকে ডেজিগনেটেড ফ্যাসিস্ট ঘোষণা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৪. ফ্যাসিবাদ ধারণ করে গড়ে ওঠা নব্য ফ্যাসিবাদী বা একই চরিত্রের যেকোনো দল ও সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫. ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিধান সংবিধানে সংযুক্ত করতে হবে।