ভারতে পালিয়ে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি; ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করেছে এম ওয়াজেদ মিয়ার সুধা সদনে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ভাঙার ঘটনার মধ্যেই ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বরের একটা ঘটনা সামনে এসেছে।
অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই দিনের স্মৃতি। সেদিন খালেদা জিয়াকে তার স্বামী জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
বেনজিন খান নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, প্রসঙ্গ : ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙচুর। এভাবেই একদিন ১৩ নভেম্বর ২০১০ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটাও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। আর সেই দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখেছিল বিএনপির হাজার লক্ষ নেতাকর্মীরা! কেবল অসহায়ের মতো কেঁদেছিলেন এক বিধবা নারী বেগম খালেদা জিয়া। তখনই মনে হয়েছিল, এই চোখের জলে বিষ আছে। যে বিষে তারা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে একদিন। দেখতে জানলে মানুষ চর্ম চোখেই দেখতে পারে ‘আল্লাহর বিচার’। নিউটনের ‘থার্ড ল’। অথবা বাংলা প্রবাদ ‘যে যতটুকু পানিতে নামবে ততটুকু ভিজবে’। আফসোস, আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না!
রাশিদুল ইসলাম নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে এক কাপড়ে একজন বিধবা, স্বামী ও সন্তানহারা মহিলাকে বের করে দিয়েছিল মনে আছে নিশ্চয়ই...! সে মহিলার চোখ থেকে কত পানি ঝরেছে এখনো মানুষ সেই কথা গুলো ভুলে যায়নি..! ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না । আল্লাহ উত্তম ফয়সালা কারি..!
নাঈম নামে আরেকজন লিখেছেন, বেগম জিয়া কান্না করছিলেন। হাতের টিস্যুটা কবার ভিজেছে ইয়ত্তা নেই। ঝর্ণার মতো চোখ থেকে অশ্রু বইছিল। ৪১টা বছর ওই বাড়িটা ছিল তার স্মৃতি। তিনি বলেছিলেন 'আল্লাহর গজব পড়বে'। যেভাবেই হোক আর যে কারণেই হোক গজব আজ সবাই দেখছে।
এভাবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার ঘটনার মধ্যে খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ এর ঘটনাটি নিয়ে অনেকেই স্মৃতিচারণ করছেন।
ঘটনাবহুল ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সে বছর ৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সরকার সামরিক অঞ্চলে বরাদ্দে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ঢাকা সেনানিবাসের শহিদ মইনুল রোডের খালেদা জিয়ার বাড়িটির বরাদ্দ বাতিল করে।
পরে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে সেই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। বাড়িটিতে প্রায় ৪০ বছর কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ টোকেন মূল্যে ওই ২ দশমিক ৭২ একর সম্পত্তি তাকে বরাদ্দ দিয়েছিল।
কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, তাকে বাড়ি থেকে এক কাপড়ে বের হয়ে আসতে হয়েছে। টেনে হিঁচড়ে সেখান থেকে বের করা হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আমি প্রায় ৪০ বছর এই বাড়িতে কাটিয়েছি। আমার স্বামী জীবন দেওয়ার পর তার অনেক স্মৃতি নিয়ে এই বাড়িতে ছিলাম।
তার বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বেগম জিয়া। তিনি আরও বলেছিলেন, সারাদিন আমাকে কিছু খেতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অথচ তারা মিথ্যা কথা বলছে। আমি নাকি আমার বাড়ি ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি। সব মিথ্যা, বানোয়াট। ‘নিজে যেতে না চাইলে তুলে নিয়ে যাও’ বলেও একজন হুমকি দিয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেছিলেন, তারা জবরদস্তি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। গ্রিল কেটে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছে। আমার লোকজনকে মারধর করেছে। লাথি মেরে মেরে বেডরুমের দরজা ভেঙেছে। আমাকে টানতে টানতে বাইরে এনেছে। আমি বিরোধী দলের নেত্রী। তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, সাবেক সেনা প্রধানের স্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্র প্রধানের স্ত্রী হিসেবেও সামান্য মর্যাদাটুকুও আমাকে দেখান হয় নি। এতেই আমরা বুঝতে পারি এই সরকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে খালেদা জিয়া আরও বলেন, আমি এর বিচারের ভার মহান আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম। দেশবাসীর কাছে ছেড়ে দিলাম।