ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোট সরকারের নেওয়া বিচার ব্যবস্থাপনা সংশোধনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফের তেল আবিবের রাজপথে নেমেছে লাখো মানুষ। তাদের অভিযোগ, এই পরিকল্পনা দেশটির সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটা চক্রান্ত। পুলিশের বরাতে ইসরাইলি মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, শনিবারের বিক্ষোভে এক লাখের বেশি মানুষ অংশ নেন।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, নতুন এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরাইলের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সিস্টেমকে হুমকির মুখে ফেলবে। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারকদের বাড়াবাড়ি রোধ করার জন্য বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে দাবি করেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার। তবে আইনজীবীসহ অন্যান্য গোষ্ঠী এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ইসরাইলি সমাজে এই পরিকল্পনা ইতিমধ্যে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন প্রশস্ত করেছে।
ইসরাইলের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা সম্প্রতি উন্মোচন করেছেন নতুন ইসরাইলি বিচারমন্ত্রী। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ইসরাইলের পার্লামেন্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলোকে বাতিল করা সহজ হবে।
সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহু সরকারের এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরাইলের বিচারিক স্বাধীনতাকে পঙ্গু করবে, দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করবে, সংখ্যালঘুদের অধিকার নষ্ট করবে এবং ইসরাইলের আদালত ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করবে। ইসরাইলি বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান আভি চিমি বলেন, ‘তারা আমাদের একনায়কতন্ত্রে পরিণত করতে চায়, তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। তারা বিচার বিভাগীয় কর্তৃত্বকে ধ্বংস করতে চায়, বিচার বিভাগীয় কর্তৃত্ব ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক দেশ নেই।’
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকার যদি পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে সফল হয় তাহলে বুঝতে হবে ইসরাইলি গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ এই সংস্কার বিচারিক নিয়োগের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কঠোর করবে এবং সরকারি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রণীত আইনগুলোকে উল্টে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাকে সীমিত করবে।
তারা বলছেন, বিচারকদের স্বাধীনতার হুমকি এবং সরকার ও পার্লামেন্টের তত্ত্বাবধানকে দুর্বল করার পাশাপাশি নেতানিয়াহু সরকারের এই পরিকল্পনা সংখ্যালঘুদের অধিকারকে ক্ষুন্ন করবে এবং আরও দুর্নীতির সুযোগ উন্মুক্ত করবে। সাদা ও নীল ইসরাইলি পতাকা নিয়ে শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে ছিলেন ৬৪ বছর বয়সি আমনন মিলার। তিনি বলছেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। আমরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য ৩০ বছর এই দেশে যুদ্ধ করেছি এবং আমরা এই সরকারকে আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে দেব না।’
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে ইসরাইলের পার্লামেন্টে নতুন সরকার গঠনের বিষয়টি আস্থা ভোটে পাস হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন নেতানিয়াহু। আস্থা ভোটে পার্লামেন্টের ১২০ সদস্যের মধ্যে ৬৩ জন নতুন সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। আর বিপক্ষে ভোট দেন ৫৪ জন।
নেতানিয়াহুর নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় এমন রাজনীতিবিদও রয়েছেন যিনি গত বছরের শেষের দিকে কর ফাঁকির কথা স্বীকার করেছিলেন। এ ছাড়া ৭৩ বছর বয়সি নেতানিয়াহু নিজেও আদালতে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়ছেন এবং ইতিমধ্যেই তিনি ইসরাইলের ইতিহাসে অন্য যে কারও চেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের ইতিহাস গড়েছেন।
নেতানিয়াহু এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি তৃতীয় মেয়াদে ইহুদি এই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।