Image description

পাখি পোষার শখ কম-বেশি অনেকের মাঝেই আছে। অনেকেই বিভিন্ন রকমের পাখি যেমন-ঘুঘু, ময়না ও টিয়া পোষে। দুষ্টু বালক সাজু। সে চতুর্থ শ্রেণিতে ওঠার পর, নতুন বই পেয়ে বইয়ে পশু-পাখিদের ছবি দেখত। মায়ের কাছে জেনে নিত কোন পাখির কী নাম। 

একবার সে ছবিতে সবুজ রঙের একটা পাখি পছন্দ করেছিল। তার খুব শখ হয় সবুজ রঙের পাখিটি খাঁচায় বন্দি করে পোষার জন্য। সেদিন সাজু বই নিয়ে দৌড়ে মায়ের কাছে ছুটে যায় এবং সবুজ রঙের পাখিটি দেখিয়ে বলে, ‘ও আম্মু, এই সবুজ রঙের পাখিটির নাম কী? এরা কোথায় বসবাস করে?’
 
আম্মু বললেন, ‘এই পাখিটির নাম টিয়া পাখি। এরা সাধারণত বনজঙ্গলে বসবাস করে।’

সাজু সঙ্গে সঙ্গে আম্মুর কাছে টিয়া পাখি কিনে আনার বায়না ধরে। সে বলে, ‘ও আম্মু, আমি এই সবুজ রঙের টিয়া পাখি খাঁচায় বন্দি করে পুষতে চাই। তুমি আব্বুকে ফোন করে বলো না, অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় বাজার থেকে এই সবুজ রঙের টিয়া পাখি কিনে আনতে। আমি এই সবুজ রঙের টিয়া পাখিটি পোষব। আমার খুব শখ এই টিয়া পাখি পোষার।’

সাজুর মুখে টিয়া পাখি পোষার কথা শুনে তার আম্মু ইতস্তত বোধ করলেন। তিনি মনে মনে ভাবতে থাকলেন, যে কি না নিজেকে ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে না। এখনও মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিতে হয়। সে কি না টিয়া পাখি পোষার কথা বলছে। এমনিতেই সারা দিন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। ঠিকমতো পড়ালেখা করতে চায় না। টিয়া পাখি কিনে দিলে তো ওর সবকিছু গোল্লায় যাবে। এদিকে টিয়া পাখি কিনে না দিলে তো আমাদের ওপর অভিমান করবে। ঠিকমতো স্কুলে যাবে না। আমাদের সঙ্গে কথা বলবে না। মুখ গোমড়া করে থাকবে।

অবশেষে বিকালে সাজুর আম্মু ফোন করে বললেন, ‘হ্যালো! সাজুর আব্বু শুনছো, তোমার ছেলে তো কেবলই বায়না করছে।’ 

সাজুর আব্বু উত্তর দিলেন, ‘কী হয়েছে? তোমার কাছে কী বায়না করছে ও?’ 

‘আরে সকাল থেকে টিয়া পাখির জন্য আমার কাছে কান্নাকাটি করছে। তুমি অবশ্যই মনে করে সাজুর জন্য বাজার থেকে একটা টিয়া পাখি কিনে আনবে।’

টিয়া পাখি কিনে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে সাজুর আব্বু রেগে গেলেন। তিনি বললেন, ‘তুমি ফোন রাখো। সাজুকে আমি বাসায় এসে বুঝিয়ে বলব।’

বাসায় ফিরে সাজুকে আদর করে কাছে ডাকলেন আব্বু। বললেন, ‘খাঁচায় বন্দি করে বনের পাখি পোষা উচিত নয়। এতে করে তারা খুব কষ্ট পায়। কখনো খাঁচায় বন্দি থাকা পাখিদের দেখেছ? তারা মাঝেমধ্যে কেমন ডানা ঝাপটায় মুক্ত আকাশে ওড়ার জন্য। কিন্তু বন্দি থাকার কারণে উড়তে পারে না। ওদেরও তো আমাদের মতো স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার আছে। মানুষ হিসেবে আমাদের ওদেরকে পরাধীনতার শিকলে বেঁধে রাখা উচিত নয়। বিষয়টি তুমি বুঝতে পেরেছ?’

সাজু মাথা নেড়ে সায় দিল। হ্যাঁ পেরেছে। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, জীবনে কখনো সে বনের পাখি খাঁচায় বন্দি করবে না। তার বন্ধুদেরও এ বিষয়ে সে সচেতন করবে। জগতে সবারই তো স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে।