|
কাজী সিরাজ
|
|
সংকট সমাধানে সরকার কি আন্তরিক?
27 Oct, 2013
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বচনকালীন সরকারের দুটি প্রস্তাব এখন জাতির সামনে। প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার এবং বিরোধীদলীয় নেতার নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব। এ নিয়ে চিঠি চালাচালিও শুরু হয়েছে। শাসকদলের কাছে বিরোধী দলের চিঠি ইতিমধ্যে পৌঁছেছে। কথা ছিল বিরোধী দলের কাছেও সরকারি দলের চিঠি যাবে শিগগিরই। একদলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রতিপক্ষ দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আবেগঘন সহাস্য ফোনালাপও করেছেন। কিন্তু দুই মহাসচিবের পত্রালাপ আর ফোনালাপের ফলাফল নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। কারণ দুই নেত্রীর প্রস্তাব দুটি সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব বিরোধীদলীয় নেতা প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং যথারীতি বিরোধীদলীয় নেতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২২ অক্টোবর দিনাজপুরের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার প্রস্তাব প্রখ্যাখ্যানই শুধু করেননি, তাঁর সম্পর্কে কিছু অবান্তর মন্তব্যও করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কটূক্তি, বক্রোক্তি করে অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের পর সার্টিফিকেট ও ডিগ্রি বনাম শিক্ষা ও সভ্যতার গুণবিচারে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পয়েন্টে এগিয়ে যাবেন।
যাঁরা লিখছেন, বিভিন্ন টক শোতে বলছেন, তাঁরা দুই প্রস্তাবের অস্পষ্টতার কথা বলছেন। বক্তব্যের স্পষ্টতা তো পরিষ্কার হবে মৌলিক বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ও সিদ্ধান্তের স্পষ্টতার ওপর। মৌলিক বিরোধীয় বিষয় তো হচ্ছে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কী হবে? বর্তমান ক্ষমতাসীনদলীয় সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন রূপ, নাকি নির্দলীয় একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার? আমার মনে হয়, দুটি প্রস্তাবের স্পিরিট বিবেচনায় এমনিতে কোনো অস্পষ্টতা নেই। প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবে শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন- এটা না বোঝার কোনো কারণ নেই। সরকারি ও বিরোধী দল থেকে যদি সমানসংখ্যক মন্ত্রীও নেওয়া হয় তাতে কী? বর্তমান ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীই সর্বেসর্বা, মন্ত্রীদের 'ঠুঁটো জগন্নাথই' বলা যায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন মানতে হবে- এটাই তাঁর প্রস্তাবের মুখ্য বিষয়। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতার প্রস্তাব আরো স্পষ্ট। তিনি বলেই দিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে তিনি মানবেন না। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ জনের মধ্যে কয়জন বেঁচে আছেন আর কয়জন মারা গেছেন, কয়জন সুস্থ আছেন আর কয়জন অসুস্থ, কিংবা কয়জন প্রস্তাবিত নির্দলীয় সরকারের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হতে সম্মত বা অসম্মত সেটা বড় কথা নয়। তাঁর প্রস্তাবের মূল সুর হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকারে ওই ধরনের দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিরা থাকতে হবে। যে কয়জন রাজি হবেন, সেখান থেকে নেওয়া যাবে, তাতে না কুলালে বাইরে থেকে দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে একই ধরনের ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নেওয়া যাবে। অর্থাৎ তিনি চাইছেন সংবিধানের বাতিলকৃত ৫৮ অনুচ্ছেদের অনুকরণে একটা কিছু। আর প্রধানমন্ত্রী চাইছেন সংবিধানের এ-সংক্রান্ত সংশোধনীতে অটল থাকতে। দুই নেত্রীই তাঁদের কথা রেখেছেন। নিজ নিজ অবস্থান থেকে কেউ সত্যি সত্যিই একচুলও সরেননি।
যৌক্তিকতার বিষয় বিবেচনায় ডক্টর বদরুদ্দিন উমরের বক্তব্যই যথার্থ বলে মনে হয়। তিনি বলেছেন, 'গত ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের উদ্দেশ্যে সমঝোতা প্রস্তাবের নামে রাজনৈতিক প্রহসন করেছেন। কেউ কেউ মনে করেছিলেন, শেখ হাসিনা তাঁর এই বক্তৃতায় এমন কিছু প্রস্তাব করবেন, যার ফলে পরিস্থিতির মধ্যে পরিবর্তন ঘটবে এবং প্রকৃত সমঝোতার শর্ত তৈরি হবে। কিন্তু সে রকম কিছু হয়নি। আসলে হওয়ার কথাও ছিল না। কারণ আওয়ামী লীগ নেতা প্রতিদিন যেসব বক্তব্য সভা-সমিতি, দলীয় বৈঠক ইত্যাদিতে দিয়ে যাচ্ছেন, তার থেকে এটা মনে করার কোনো কারণ ছিল না যে হঠাৎ করে তিনি এমন কোনো প্রস্তাব উপস্থিত করবেন, যা তাঁদের নির্বাচনী রাজনীতিতে সৃষ্ট সংকট দূর করতে সহায়ক হবে। শাসকশ্রেণীর সংকট, আওয়ামী লীগের দলীয় সংকট এবং সর্বোপরি শেখ হাসিনার জমিদারি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সৃষ্ট যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা থেকে উদ্ভুত সংকট যুক্ত হয়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যার ফলে তাঁদের পক্ষে বিদ্যমান সংকট থেকে বের হয়ে আসার কোনো পথনির্দেশ করা সম্ভব নয়' (দৈনিক যুগান্তর, ২০ অক্টোবর ২০১৩)।
শেখ হাসিনার বহুল প্রত্যাশিত ভাষণে জাতীয় জীবনের একটি গভীর সংকট শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর সৎ ও আন্তরিক অভিপ্রায় যে ছিল না, ভাষণের পরপরই তার প্রমাণ মিলেছে। সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ঢাকা শহরে সব সভা-সমাবেশ-মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এমনকি চার দেয়ালের মধ্যেও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। নানা রকম শর্ত মেনে পেশাজীবীরা সম্প্রতি একটি সমাবেশ করতে পেরেছেন গত ২০ অক্টোবর, যাতে খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালেও সভা-সমাবেশ-মিছিল-বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই লেখা যখন ছাপা হবে তখন সারা দেশই হয়তো সরকারবিরোধীদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। অথচ এই বিরোধী দলগুলো এখন দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে। গত ১০ অক্টোবর দৈনিক প্রথম আলোয় একটি খ্যাতিমান জরিপ সংস্থার যে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে, তাতে দেখা যায় একা বিএনপিই এখন দেশের শতকরা ৫০.০৩ শতাংশ জনগণের সমর্থন ভোগ করছে। আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন আছে ৩৬.০৬ শতাংশ জনগণের। ধারণা করা যায়, লীগ সরকারের স্বৈরতান্ত্রিকতা ও লীগ নেতাদের দুরাচারের কারণে তাঁদের প্রতি জনসমর্থন আরো কমেছে। এই জনগণের মতামতকে লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরোপুরিই উপেক্ষা-অগ্রাহ্য করছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে নতুন কোনো কথা ছিল না। নির্বাচনকালীন সরকারে বিরোধীদল থেকে মন্ত্রী নেওয়ার প্রস্তাব তিনি এবং তাঁর দলের মন্ত্রীরা আগেও দিয়েছেন। বিএনপি বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন সর্বদলীয় সরকারের নামে তিনি 'নতুন বোতলে পুরাতন মদই' ঢেলেছেন। তাঁর এই প্রস্তাবও আইন ও সংবিধানসম্মত হয়নি বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যেসব সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে নির্ভেজাল সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়, সেসব দেশে নির্বাচনকালে ক্ষমতাসীন সরকারই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। আমাদের সংবিধানেও তা-ই আছে পঞ্চদশ সংশোধনীর পর। এখানে সর্বদলীয় সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই। সর্বদলীয় সরকার বা জাতীয় সরকার হতে পারে আপৎকালে বা যুদ্ধকালীন অবস্থায়, শান্তিকালীন স্বাভাবিক সময়ে নয়। সর্বদলীয় সরকার করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবও রহস্যময়। বিরোধী দল এতে সম্মত হলে পরে সাংবিধানিক জটিলতার অজুহাতে পিছু হটার পথ তিনি উন্মুক্ত রাখলেন। কারণ ওই রকম একটা সময়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানাতে পারেন। সংসদ না থাকলে সংবিধান সংশোধনের কোনো সুযোগ আর থাকবে না। পর্যবেক্ষকদের অনেকে তাই তাঁর সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবকেও সন্দেহের চোখে দেখছেন। আসল কথা, প্রধানমন্ত্রী তাঁর পূর্ব অবস্থানেই অটল রয়েছেন। সংবিধানের দোহাই দিয়ে মূলত তিনি পঞ্চদশ সংশোধনীর আশ্রয় নিচ্ছেন।
এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের অবস্থান অধিকতর যুক্তিযুক্ত। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন, তা অধিকতর গ্রহণযোগ্য। প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবে সংখ্যার হেরফের ছাড়া সংযোজন-বিয়োজন বা সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। কেননা তা হতে হবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে, যাঁরা সবাই দলীয়। সাংবিধানিক জটিলতার প্রশ্ন তো আছেই। কিন্তু খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে সংযোজন-বিয়োজন এমনকি সংশোধনেরও সুযোগ আছে। তাঁর প্রস্তাবের মৌল উপাদান হচ্ছে সরকারের ধরন বা চরিত্র সম্পর্কিত স্পিরিট। আবারও বলতে হয়, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা কতজন বেঁচে আছেন, কতজন মারা গেছেন, কতজন অসুস্থ আছেন, আর কতজন রাজি আছেন সেটা বড় কথা নয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা কেমন হবেন, তারই একটা ধারণা ব্যক্ত হয়েছে ওই প্রস্তাবে। এমন বৈশিষ্ট্যের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি আমাদের দেশে কি আর নেই? নিশ্চয়ই আছেন, অনেক আছেন। তা ছাড়া ওই দুই আমলের সাবেক উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলে গিয়ে জাতিকে নানা বিষয়ে উপদেশ দিতে পারলে দেশ ও জাতির সংকটজনক একটি সময়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক পক্ষের অনুরোধে জাতীয় দায়িত্ব নেবেন না কেন?
সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান ৫৮ (খ)(গ)(ঘ)(ঙ)তে ছিল, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাতিল করে বর্তমান গভীর রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দিয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। নির্দলীয় তত্ত্ব্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি দুই বছরের আন্দোলন, রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে সর্বদলীয় সম্মতিতেই সংবিধানে সনি্নবেশিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২৫ মার্চ এবং কার্যকর হয়েছিল সে বছরেরই ৩০ মার্চ। সেদিন বিচারপতি হাবিবুর রহমান প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে সংবিধানে সংযোজিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারাটি লীগ সরকার বাতিল করে দিল তাদের একদলীয় সিদ্ধান্তে। সর্বজনগ্রাহ্য সাংবিধানিক ধারাটি এখন দলীয় ধারা দিয়েই প্রতিস্থাপিত বলে বিরোধীদলীয় সমালোচনার কোনো যুৎসই জবাব নেই সরকারের কাছে।
শাসক লীগ বারবার সংসদে গিয়ে বিরোধী দলকে তাদের প্রস্তাব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিল। গত ২৩ অক্টোবর বিএনপি খালেদা জিয়ার নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। শাসক দল সংসদেই তা অসাংবিধানিক বলে চিত্রিত করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছে। শাসক লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিমের বক্তব্য ছিল খুবই আপত্তিকর। বিএনপি ও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য ছিল অশালীন ও অশোভন। প্রতিবাদে বিএনপি ওয়াকআউট করেছে। খালেদা জিয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে অনুকূল সিদ্ধান্ত সরকারি দল না নিলে তারা আর সংসদে যাবে কি না সন্দেহ। সরকারি দলের আগ্রাসী ভূমিকা দেখে মনে হয়, তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল। কাজেই সমঝোতার দরজা সম্পূর্ণই রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সংঘাত যে অনিবার্য, তা অনেক পর্যবেক্ষকই অনুমান করছেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ থেকে তারা দিকনির্দেশনা পেয়ে গেছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলীয় সরকারের অধীনেই তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বলাই বাহুল্য, সে নির্বাচন হবে একদলীয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনী ট্যাবলেট খাওয়ানোর যে চেষ্টা হয়েছিল, সে ট্যাবলেট খাননি এরশাদ। কাজেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নৌকা মার্কা ছাড়া জামানত হারানো দলের ইনু-মেননরা ছাড়া আর কেউ নেই। তেমন নির্বাচন এই পরিস্থিতিতে করা কি সম্ভব? ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজনের উদ্দেশ্যে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন করার যে ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা ছিল, এখন সে রকম কোনো প্রয়োজনীয়তা বা বাধ্যবাধকতা নেই। ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির আগে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে শেষ এই অধিবেশনে এক দিনেই সংবিধান সংশোধন করে সরকার সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারত। কিন্তু তারা পরিষ্কার অবস্থান নিয়ে ফেলেছে যে তা তারা করবে না। এমনকি সংসদ অধিবেশন প্রলম্বিত করার যে পরিকল্পনা- তা-ও ত্যাগ করে তড়িঘড়ি করে সংসদ বিলুপ্তির পথে যেতে পারে, যাতে সংবিধান সংশোধনের আর কোনো সুযোগ না থাকে এবং তখন সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার এবং রাজনৈতিক শূন্যতার ভয় দেখিয়ে সংসদ নির্বাচনের অপরিহার্যতার যুক্তি খাড়া করতে পারে। কিন্তু এবার তা কি এত সহজ হবে? ২৪ অক্টোবরের আলামত কিন্তু তা বলে না।
লেখক : সাংবাদিক
(কালের কন্ঠ, ২৭/১০/২০১৩)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন