Image description

কামাল উদ্দিন সবুজ

 

‘মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে কিন্তু কখনো পরাজিত হয় না।’ মার্কিন ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কালজয়ী এ কথা কিংবদন্তি রাজনৈতিক নেতা বেগম খালেদা জিয়ার জীবনকর্মে প্রস্ফুটিত। তার মহাপ্রয়াণ হয়তো নিয়তি; তবে এ মৃত্যুও অপরাজেয়। তিনি সারা জীবন বলেছেন ‘বাংলাদেশ ভালো থাকলে, আমি ভালো থাকি। এ দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই, এ দেশই আমার ঠিকানা।’

মা-মাটির সান্নিধ্যেই ছিলেন সারা জীবন। খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নয়, ছিলেন জনগণের নেত্রী। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম ও আপসহীনতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠে।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর একজন গৃহবধূর রাজনীতিতে পদার্পণ। এরপর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষায় অদ্বিতীয় নেতৃত্ব দেন।

সরকার পরিচালনা, বিরোধী দলের নেতৃত্ব এবং দেশের অখ-তা রক্ষায় তার প্রয়াসে বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী হয়েছে। নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের প্রতি কঠোর ভর্ৎসনার মধ্য দিয়ে তিনি দেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন এবং মহাজোট সরকারের অধীনে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণের বিরোধিতায় অব্যাহত সংগ্রাম চালিয়েছেন। দীর্ঘদিন কারাভোগ ও অসুস্থতার মধ্য দিয়ে যাওয়া, গণঅভ্যুত্থানের পর মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি লাভ সব মিলিয়ে তার জীবনসংগ্রাম এক চিরস্মরণীয় অধ্যায়। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। খালেদা জিয়ার এ প্রস্থান বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

বেগম জিয়ার দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়া, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রক্ষায় নেতৃত্ব দেওয়ার দিক দিয়ে তিনি ভারতের ইন্দিরা গান্ধী বা যুক্তরাজ্যের মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনীয়। যেমন ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী নারী নেতৃত্বের প্রতীক ছিলেন, খালেদা জিয়াও বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্র বিনির্মাণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তেমনি মার্গারেট থ্যাচারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার দক্ষতা দেশ ও দলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তার সাহস, সংগ্রামী মনোভাব এবং দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক স্থিতি বিশ্বরাজনীতির ঐতিহাসিক নারী নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমান্তরাল দৃশ্য সৃষ্টি করে।

খালেদা জিয়া শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই নয়, বরং বিরোধী দলের নেতৃত্বেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ স্থান অধিকার করেছেন। ১৯৯৬ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী অবস্থান থেকে তিনি সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দলনেত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। দলীয় ঐক্য বজায় রাখা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা সবক্ষেত্রেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব স্বতন্ত্র ও অবিস্মরণীয়।

২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপির নেতৃত্বে দলীয় ঐক্য বজায় রেখে দেশের রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছেন। সরকারের নীতিগত ও সাংবিধানিক পদক্ষেপের প্রতি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা, মানবাধিকার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে তার অবদান বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তার দমবন্ধ করা সংগ্রাম, আপসহীন নেতৃত্ব ও ব্যক্তিগত আত্মত্যাগ পুরো দেশের জন্য শিক্ষণীয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তার নাম একটি আদর্শের প্রতীক। খালেদা জিয়া হঠাৎ উঠে আসা রাজনীতিক নন, আবার উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতায় আসা সুবিধাভোগী শাসকও নন। তিনি উঠে এসেছেন ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে, রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন, সামরিক শাসনের অন্ধকার ও গণতন্ত্রহীনতার দীর্ঘ রাত পেরিয়ে।

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশের রাজনীতি যখন দিকহারা, তখন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ধারার সূচনা করেন। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মে, চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ড বাংলাদেশের রাজনীতিকে আবারও গভীর অন্ধকারে ঠেলে দেয়। সে সময় একজন গৃহিণী, যিনি কখনো সক্রিয় রাজনীতির ময়দানে ছিলেন না তবু সময়ের প্রয়োজনে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে যান। দল, আদর্শ এবং সর্বোপরি একটি দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ রক্ষার দায়িত্ব নেন তিনি।

১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসন জারি হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়, সংবিধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ঠিক সেই সময় খালেদা জিয়া নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন গণতন্ত্রের কণ্ঠস্বর হিসেবে। ৩ জানুয়ারি ১৯৮২ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে সদস্যপদ গ্রহণ করেন। এরশাদের ‘এমএলআর ৮২’ নামে জারি করা সামরিক ফরমানের মাধ্যমে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করার পরও তিনি সাহস হারাননি।

১৯৮৩ সালের মার্চে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন এবং ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় প্রথম বক্তৃতা দেন। বিচারপতি সাত্তারের অসুস্থতার কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তার উদ্যোগে ৭-দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয় এবং এরশাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু হয়। ১০ মে ১৯৮৪ সালে তিনি দলীয় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং তার নেতৃত্বে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে পূর্ণ বিকাশ লাভ করে।

এরপর শিক্ষানীতিবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গড়ে ওঠে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ সালের সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে বহু শিক্ষার্থী শহীদ হন। খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে যান এবং আন্দোলন সমর্থনে সভা-সমাবেশে অংশ নেন। ১৯৮৪-৮৫ সালে এরশাদের প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত এবং সামরিক শাসনবিরোধী কর্মসূচিতে তিনি একাধিকবার গৃহবন্দি ও গ্রেপ্তার হন। ১৯৮৬ সালে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু না হওয়ায় তিনি পাঁচ দফা দাবিতে আপসহীন অবস্থান নেন এবং নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন।

১৯৮৭ সালে ‘এরশাদ হটাও’ আন্দোলন শুরু হয়, যা তীব্র আকার ধারণ করে। বিএনপি ও মিত্র জোট দেশব্যাপী হরতাল, মিছিল ও সমাবেশ চালায়। ছাত্রদল নেতা মাহবুবুল হক বাবলু হত্যার পর আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৮৮ সালে এরশাদ ঘোষিত একতরফা নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দেন খালেদা জিয়া। তিন জোটই নির্বাচন বর্জন করে; কিন্তু সরকার প্রহসনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে বিজয়ী ঘোষণা করে। ১৯৯০ সালে ছাত্রনেতা জেহাদের শাহাদতের পর সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গড়ে ওঠে। খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বে এ গণআন্দোলনই পরবর্তীকালে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পথ প্রশস্ত করে। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০-এ এরশাদ পদত্যাগ করেন এবং নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

তিনি কোনো সমঝোতার পথে যাননি। বারবার কারাবরণ করেছেন, আন্দোলন করেছেন, রাজপথে থেকেছেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ এই দীর্ঘ সময়টিতে তিনি আপসহীনভাবে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করেন একজন নারী ইতিহাস গড়ার শক্তিও রাখেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনি শুধু ক্ষমতায় আসেননি, তিনি ক্ষমতার কাঠামো বদলানোর সাহস দেখিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থা থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন ছিল তার নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি। ক্ষমতা কুক্ষিগত না করে তিনি সংসদের শক্তি ফিরিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহির আওতায় আনেন।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতে বিজয়ী হন এবং সরকার গঠন করেন। ২০ মার্চ তিনি ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। পঞ্চম জাতীয় সংসদে একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী পাস হয়। একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের কর্মকান্ড বৈধ ঘোষণা করা হয় এবং দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, নারী ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও পরিবেশ খাতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। জাতীয় নির্বাচনে পাঁচবার অংশ নিয়ে চারবার পাঁচটি করে এবং একবার তিনটি আসনে বিজয় অর্জন করেন। নির্বাচিত আসনে কখনো পরাজিত হননি। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সংগ্রামী নেত্রী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দেখান গণতন্ত্র তার কাছে ক্ষমতার চেয়েও বড়।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এ সময় তার সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন, নারী শিক্ষা, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি সম্মানিত হন। কিন্তু এ সময়েই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় পরিকল্পিত অপপ্রচার। রাজনীতিকে ব্যক্তি আক্রমণে নামিয়ে আনার এক দীর্ঘ প্রকল্প শুরু হয়।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য আরেকটি অন্ধকার দিন। জরুরি অবস্থার নামে রাজনৈতিক অধিকার স্থগিত করা হয়। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়, মিথ্যা মামলায় বন্দি করা হয়। তার বাড়ি ঘিরে রাখা হয়, সন্তানদের হয়রানি করা হয়। এ সময় তার বয়স, শারীরিক অবস্থা কোনো কিছুকেই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি। একজন সংগ্রামী মানুষের মতো তিনি এ দুঃসময় পার করেছেন।

২০১৪ সালের পর থেকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে তাকে কারাদন্ড দেওয়া হয় এমন মামলায়, যেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। চিকিৎসার সুযোগ থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়। কারাগারে থেকেও তিনি হয়ে ওঠেন গণতন্ত্রের প্রতীক। এই দীর্ঘ সংগ্রামে তার ব্যক্তিগত জীবনের ত্যাগও কম নয়। স্বামী হারানোর পর সন্তানদের মানুষ করা, রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন এবং শেষ পর্যন্ত তারেক রহমানকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারক হিসেবে গড়ে তোলা এটি সহজ কাজ ছিল না।

১৯৯৬ সালের পর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এবং বিশেষভাবে ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেতা হিসেবে সংসদে এবং দেশের রাজনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবন ছিল আপসহীন। মিথ্যা মামলা, কারাবাস, পরিবারের ব্যক্তিগত শোক সবকিছু সত্ত্বেও তিনি কখনো গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থ থেকে সরে আসেননি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি স্টেট সিনেট ২০১১ সালে তাকে ‘গণতন্ত্রের যোদ্ধা’ উপাধিতে ভূষিত করে। নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা প্রসারে বিশ^ব্যাপী তিনি একটি অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের পর, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুক্তি লাভ করেন। একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে যিনি ক্ষমতার জন্য নয়, আদর্শের জন্য লড়েছেন। যিনি কারাগারে থেকেও মাথানত করেননি। যিনি বারবার হারিয়েছেন, কিন্তু পরাজিত হননি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র যতদিন থাকবে, খালেদা জিয়ার নাম ততদিন উচ্চারিত হবে। তার অবদান বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, নারী নেতৃত্ব এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ তারেক রহমান যখন গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের কথা বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখান এর পেছনে রয়েছে খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক শিক্ষা এবং সংগ্রামের উত্তরাধিকার।

লেখক : সম্পাদক, দেশ রূপান্তর