Image description
 

আজকের বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্রমেই মানবিকতা হারিয়ে এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে। অসুস্থ মানুষ যখন ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকে, তখন তার হাতে থাকে না অঢেল টাকা, থাকে কেবল বাঁচার আকুতি। অথচ সেই আকুতির মূল্য নির্ধারিত হয় টাকার অঙ্কে। আজকাল অনেক ডাক্তার রোগীর জন্য উচ্চ ফি ঠিক করেন। একটি গরিব দেশে, যেখানে মানুষ দিনে এনে দিনে খায়, সেখানে এই উচ্চ ফি যেন এক অদৃশ্য শাস্তি। হাসপাতালের খরচ সাধারণ মানুষের জন্য ভয়ংকর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সুলভ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে সেখানে অবহেলা আর দীর্ঘ অপেক্ষা মানুষের ধৈর্য ভেঙে দেয়। অনেক ডাক্তার সরকারি সময় পার করেই ছুটে যান প্রাইভেট ক্লিনিকে। ফলে দরিদ্র মানুষ চিকিৎসার আশায় দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কখনো কখনো দিনের পর দিন। এই অবহেলার নির্মম চিত্র আমরা দেখি জান্নাতের গল্পে। অসুস্থ মাকে বাঁচাতে জান্নাত এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়ায়। কোথাও টাকা নেই বলে ভর্তি নেয় না, কোথাও ডাক্তার নেই বলে অপেক্ষা করায়। সেই অপেক্ষার মাঝেই তার মা নিঃশব্দে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। জান্নাত তখন শুধু তার মাকে নয়, ভেঙে পড়ে পুরো পৃথিবীকে হারিয়ে। এমন আরও কত গল্প আছে! শহরের এক ফুটপাতে রিকশাচালক রফিকের সন্তান জ্বরে কাপছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর বলা হলো, আগে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা জোগাড় করতে গিয়ে রফিক যখন ফিরে এলেন, তখন তার ছেলের নিঃশ্বাস থেমে গেছে। গ্রামের বৃদ্ধা রহিমা খাতুন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার দীর্ঘ তালিকা দিলেন, কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষার খরচ তার সাধ্যের বাইরে। চিকিৎসা না পেয়ে তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে হেঁটে গেলেন। আরও এক নির্মম দৃশ্য- এক গর্ভবতী নারী প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। হাসপাতালে বেড না থাকায় তাকে বারান্দায় ফেলে রাখা হলো। ডাক্তার আসেননি সময়মতো। শেষ পর্যন্ত মা ও নবজাতক দুজনেই প্রাণ হারালেন। তাদের অপরাধ শুধু একটাই, তারা গরিব। 

কানিজ ফাতেমা নূরী