অনেক সূর্যের আশায় দেশের মানুষ তরুণদের নেতৃত্বে বুক বেঁধেছিল, বহু জীবন গেল অকাতরে। তবু মেলেনা মুক্তি, মেলেনা জীবনের হিসেব কিতাব।
কর্মক্ষম উদ্যমী যুবক কর্মহীন, সংসারের ঘানি টানা বৃদ্ধ-বণিতা শঙ্কায়, কারখানার শ্রমিক, মাঠের কৃষক, দিনমজুর সকলেই আজ পর্যুদস্ত, বেঁচে থাকার সংগ্রাম প্রতিদিন। অর্থনীতির মন্থর গতিতে আয় রোজগার কমে গেছে অথবা নেই।
আর্থিক টানাপড়েনে দম ফুরিয়ে আসছে, বাঁচার উপায় কী!
গত দুবছর ধরে সংগ্রাম ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে চলছে দেশ। জ্ঞানী-গুণী অসাধারণ মানুষদের নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নোবেল জয়ী বিশ্বের অন্যতম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ সরকারের প্রধান। দারিদ্র দূরীকরণে যার নীতি ও কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত, সেই ব্যক্তির নেতৃত্বে পরিচালিত দেশের মানুষ ক্রমশ দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত হচ্ছে এটি তার জন্য সম্মানের নয়।
দৈনন্দিন অর্থনীতি স্থবির, মানুষের জীবন উপার্জনের অভাবে কাতর। পট পরিবর্তনের পর আশা ছিল সুবাতাস বইবে সহসাই, দুঃসময় থেকে আমরা পৌঁছাবো সুসময়ে। আশা ছিল জীবন বাজি-রাখা বিজয়ী নবীন প্রবীণ রাজনীতিবিদরা আমাদের প্রতিদিনের অর্থনৈতিক সংগ্রাম সহজ করার কাজ এগিয়ে নেবেন। কিন্তু দেরি হচ্ছে অনেক, এখন তারা প্রতিদিন আইন কানুন সংস্কারে এবং নিজেদের দলীয় রাজনীতি ও ক্ষমতার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পিছনে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের রাজনীতিবিদরা আজ দারুণভাবে বিভাজিত। অথচ সবকিছুর মূল দায়িত্ব তাদেরই।
সাধারন মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের কি হচ্ছে, কীভাবে বেঁচে থাকবে দৈনিক রোজগারি দিনমজুর পরিবারগুলো, এমনকি নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো, সে খেয়াল কোথায়। আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত কথা আছে ‘লাঠি আনতে আনতে কিল ঘুষিতে শেষ’।
যাদের উপলক্ষ করে এত দীর্ঘ সময় ধরে সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় আইন কানুন তৈরি হচ্ছে তাদের জন্য খেয়ে পরে ততদিন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
মাঝে মাঝে ধন্দ লাগে এ কেমন রাজনীতি! কথিত সুধীদের অর্থ সহায়তায় দিব্যি চলছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা, এখানে নতুন পুরাতন অনেকে এক কাতারে। সেজন্য অর্থনীতির চাপ তাদের গায়ে লাগে না।
পতিত সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী কল-কারখানার মালিকরা ব্যাংকের টাকা নিয়ে পলাতক অথবা লুকিয়ে আছেন, টাকা পাচার হয়ে গেছে । তাদের শিল্প কারখানা ব্যবসা বাণিজ্য অচল, ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কর্মীরা কর্মহীন, বেশিরভাগ নিয়মিত বেতন ভাতা পাচ্ছে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে ব্যাবসা— বাণিজ্য ও নতুন বিনিয়োগ তেমনটা হয় না এটাই স্বাভাবিক কিন্তু পুরনোগুলোও থমকে আছে এটাই বিপদ। স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার প্রক্রিয়া চলছে খুব ধীর গতিতে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন অচল হয়ে পড়েছে, সঞ্চয় প্রায় নিঃশেষিত। বাড়ছে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের বোঝা যা দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য এক গভীর সংকট তৈরি করছে। আমাদের নেতারা কি চিন্তা করছেন প্রান্তিক মানুষেরা কীভাবে দিনপাত করছেন!
দ্বীনের নামে, দুনিয়ার নামে, দিনমজুরের নামে রাজনীতি আছে কিন্তু এখনও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত অধরাই রয়ে গেছে।
নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি শুরু হয়েছে, সব চলছে পুরোনো তরিকায়। যারা সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তাদের অনেকের বড় বড় গাড়ি বাড়ি চলছে ঠিকমতোই বরং কোন কোন ক্ষেত্রে আরো রমরমা অবস্থায়। এর শেষ কোথায়!
তবু মানুষ চায় যথা শীঘ্র একটি নির্বাচন হোক, ভালো নির্বাচন, দীর্ঘ দিন যাবৎ মানুষ একটি ভালো নির্বাচন দেখেনি। তারা চায় একটি পূর্ণাঙ্গ ভালো সরকার আসুক, অর্থনীতির হাল ধরুক, দৈনন্দিন উপার্জনে যাদের জীবন চলে তাদের কাজে ফেরার ব্যবস্থা করুক।
দেশের মানুষ রাজনীতি ভালবাসে, প্রতিদিন রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে। পড়ার টেবিলে, চায়ের আড্ডায়, পার্কের বেঞ্চে, সর্বত্র রাজনীতির আলাপ, সে মানুষদের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করুন।
হাজার হাজার গাড়ি বহরের রাজনীতি সাধারণ মানুষের মুখোমুখি এসে দাঁড়াক এটি কাম্য নয়।
উচ্চমার্গীয় চিন্তা ভাবনা করুন ক্ষতি নেই কিন্তু রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস যেন উঠে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের ব্যবস্থা নিন।
এম এস সেকিল চৌধুরী