Image description

মাহমুদুর রহমান

ফ্যাসিস্ট জামানার পনেরো বছরে দেশের সব ভিন্নমতাবলম্বী নাগরিকের নানা ধরনের জুলুম সইতে হয়েছে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মজলুম জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ করে ইসলামপন্থিরা এক বিভীষিকাময় জীবন কাটিয়েছেন। তাদের বলতে গেলে কোনো নাগরিক অধিকারই ছিল না। নিজ দেশে তারা পরবাসী ছিলেন। দীর্ঘ অবৈধ শাসনকালে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিরূপ হলেই শেখ হাসিনা নিয়মিত ইসলামি জঙ্গি কার্ড ব্যবহার করেছেন।

সারা জীবন টুপিদাড়ি ছাড়া আমার বিরুদ্ধেও ২০১০ সালে জঙ্গিবাদের এক মামলা দিয়ে কেন জানি না, হাসিনার সরকার পরে সেটা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ২০১৩ সালে আমি জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় শাপলার গণহত্যা মামলাতেও আমাকে সম্পৃক্ত করে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর পর আদালতে প্রমাণ হয়েছিল যে আমি ৫ মে ২০১৩ তারিখে বন্দি ছিলাম। ফলে পুলিশ প্রশাসন সেই মামলাও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। মিজানুর রহমান আজহারির মতো অরাজনৈতিক এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় তরুণ ইসলামি বক্তাকেও দেশছাড়া করেছিল ফ্যাসিস্ট শাসকরা। গুম না হওয়ার জন্য আমি এবং ড. আজহারি নিজেদের যথেষ্ট ভাগ্যবান বিবেচনা করতে পারি।

সাধারণত গ্রামের দরিদ্র পরিবারের তরুণ সদস্যদের ধরে এনে জঙ্গি সাজিয়ে র‍্যাব-পুলিশ ভুয়া এনকাউন্টারে এবং তথাকথিত জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের নামে নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে গণহারে বোমা মেরে হত্যা করেছে। ছয় মাসের নিষ্পাপ শিশুও এই নির্মম হত্যা থেকে রেহাই পায়নি। ‘স্বজন হারানোর বেদনায়’ সর্বদা কাতর শেখ হাসিনা সেই সব জঙ্গি নাটকের প্রধান রচয়িতা ছিলেন।

তিনি সে সময়ের ইসলামোফোবিক আমেরিকা ও ইউরোপকে দেখাতে চাইতেন যে, বাংলাদেশে ইসলামপন্থা রুখতে হলে তার কঠোর অবৈধ শাসনের কোনো বিকল্প নেই। দীর্ঘ পনেরো বছর তিনি এভাবেই পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে ফ্যাসিস্ট শাসনের বৈধতা আদায় করার চেষ্টা করেছেন।

এমন এক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় শাপলা গণহত্যার পর এ দেশের আলেম সমাজ পরিস্থিতির চাপে অনেকটাই নীরব হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তৎকালীন জালিম সরকার ‘পুরস্কার এবং শাস্তির’ (Carrot and Stick) নীতি ব্যবহার করে অনেকাংশে সফলও হয়েছিল। শাপলা গণহত্যার শোক মেটার আগেই আলেমদের একটি অংশ নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদের এদেশীয় প্রধান এজেন্ট শেখ হাসিনাকে স্নাতকোত্তর সনদের বিনিময়ে লজ্জাজনকভাবে ‘কওমি জননী’ খেতাবও দিয়েছিলেন! আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টিকে শাপলার রক্তের সঙ্গে একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেই দেখেছিলাম। প্রসঙ্গটি নিয়ে হেফাজত নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে নির্বাসন থেকে আমার সমালোচনামূলক লেখার কারণে অনেক আলেম সে সময় ভীষণ রকম অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন।

পাঠকরা অবগত আছেন যে, আমি লেখার সময় কখনো কোনো মহলের সন্তুষ্টি কিংবা অসন্তুষ্টির কোনো পরোয়া করিনি। যতদিন বেঁচে আছি, আমার বিশ্বাস এবং বিচারবুদ্ধি অনুসারে লিখে যাব। আমি তথ্যগত ভুল সচরাচর করি না। আমার বিশ্লেষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা অবশ্যই সব পাঠকের গণতান্ত্রিক অধিকার।

জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের আলেম-ওলামা, এবং মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশে তাদের মর্যাদার সঙ্গে জীবন-যাপনের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। অবস্থার এতটাই নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে যে, সাম্প্রতিক ডাকসু নির্বাচনে মাদরাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করা সাদিক কায়েম এবং এস এম ফরহাদ বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভিপি এবং জিএস পদে বিজয়ী হয়েছেন।

তাদের যারা একচেটিয়া ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন, সেসব ছাত্রছাত্রীর অধিকাংশই বিস্ময়করভাবে বিভিন্ন সেক্যুলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত। এই ছেলেমেয়েরা তথাকথিত প্রগতিশীল প্রার্থীদের পরিবর্তে একসময় ‘অচ্ছুৎ’ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ হিসেবে বিবেচিত মাদরাসার ছেলেদের মহা আনন্দে ডাকসুর নেতা নির্বাচিত করেছেন। এই অপ্রত্যাশিত জয়ে ইসলামপন্থিদের আনন্দে আত্মহারা হওয়ার পরিবর্তে অধিকতর সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়ী তরুণরা বিনয়, সংযম ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে সহজেই নিজেদের মানিয়ে নিতে পারলেও, তাদের চেয়ে অনেক প্রবীণ ইসলামপন্থি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতারা উদ্ধত এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছেন। বিভিন্ন ওয়াজ এবং রাজনৈতিক সভায় এসব নেতার চটুল, অশ্লীল ও বিতর্কিত মন্তব্য আমাদের সুশীল মিডিয়ার চিরপরিচিত ইসলামবিদ্বেষী বয়ানকেই বরং প্রতিষ্ঠিত করছে।

জুলাই বিপ্লবকে ভারত প্রথম থেকেই বাংলাদেশে এক পশ্চাৎপদ ইসলামপন্থি অভ্যুত্থান বলে প্রচার করেছে। তারা ড. ইউনূসের মতো একজন আপাদমস্তক ‘সেক্যুলার ও সুশীল’ ব্যক্তিকে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামপন্থি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। প্রফেসর ইউনূসের আন্তর্জাতিক খ্যাতির কারণে দিল্লির সেই অপচেষ্টা অবশ্য হালে পানি পায়নি। কিন্তু দেশে ইসলামপন্থা নিয়ে অর্ধশতাব্দী ধরে চলমান বিরূপ প্রচারণা থেমে নেই। শেষ পর্যন্ত, একসময় দক্ষিণপন্থি দল হিসেবে সুশীল মিডিয়ায় পরিচিত বিএনপির শীর্ষ নেতারাও ডাকসু নির্বাচনের অপ্রত্যাশিত ফলে ঘাবড়ে গিয়ে দলের জন্মাবধি ইসলামিক চেহারা পাল্টে নব্য সেক্যুলার হওয়ার চেষ্টায় দেশে দক্ষিণপন্থা ও মৌলবাদের কথিত উত্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করে রীতিমতো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছেন।

সম্প্রতি অবশ্য তারা আগামী নির্বাচনে জেতার জন্য ‘ইসলামি মৌলবাদী’র ট্যাগভুক্ত হেফাজতের সঙ্গে বৃহত্তর নির্বাচনি জোট করতে আলোচনা চালাচ্ছেন। এটাই প্রথাগত ভোটের রাজনীতির অতিপরিচিত সুবিধাবাদী বৈশিষ্ট্য! দেশের রাজনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তনের সময় ইসলামি নেতাদের একটি অংশ বেফাঁস ও অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে আবার দেশে ও বিদেশে ইসলামোফোবিয়ার পালে বাতাস দেয়ার কাজটি করছেন। তাদের সেসব সস্তা ও অরুচিকর বক্তব্য মূলধারা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাচ্ছে। এসব ইসলামি বক্তার মধ্যে একজন সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেয়ার মধ্যে সালাতের সওয়াব আবিষ্কার করেছেন এবং অপরজন পীরবাদ ও হাদিসের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।

তাদের অবিমৃশ্যকারিতার ফলে ইসলামবিদ্বেষীরা ইউটিউবে ইসলাম ও ইসলামপন্থিদের হেয় করে নানা স্বাদের ‘কন্টেন্ট’ বানানোর সুযোগ পেয়ে বিষম আহ্লাদিত হয়েছেন। বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে ধর্মভিত্তিক আত্মপরিচয়ের যে ইতিবাচক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তার আদর্শিক বিষয়টি একেবারেই ধরতে না পেরে উল্লিখিত ইসলামি বক্তাদের একটি শ্রেণি অত্যন্ত সংকীর্ণ চিন্তার পরিচয় দিয়ে ইসলামি আন্দোলনের ভয়ানক ক্ষতি করছেন। শুধু বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানই নয়, অতি ইসলামিস্টরা তাদের নির্বোধ কাজকর্মে সমাজে নানা ধরনের ফ্যাসাদও সৃষ্টি করে চলেছেন।

কিছুদিন আগে রাজবাড়ীতে একজন বিকৃত মানসিকতাবিশিষ্ট, বিতর্কিত বৃদ্ধের লাশ কবর থেকে তুলে নিয়ে যে উন্মত্ততার সঙ্গে রাস্তায় পোড়ানো হয়েছে, তার নিন্দা করার মতো ভাষা আমার জানা নেই। যে দুর্বৃত্তরা এই জঘন্য কাজটি করেছে, তাদের কঠোরতম সাজা হওয়া দরকার। গত এক বছরে যেসব গোষ্ঠী কবর, মাজার, কথিত সব পীরের আখড়া ইত্যাদিতে হামলা চালিয়েছে, তারা যে কেবল ইসলাম ধর্মকেই অবমাননা করেছে তা-ই নয়, এই লোকগুলো প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালিয়েছে। ভারত সরকার এবং দিল্লিতে পলাতক শেখ হাসিনা তো এটাই চাচ্ছেন যে, জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে কথিত ‘ইসলামপন্থিদের’ বর্বরতা এবং ধ্বংসযজ্ঞের প্রচারণা যেন বহির্বিশ্বে প্রমাণিত হয়।

এমতাবস্থায়, সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে যারা কথায় কথায় মাজার ভাঙতে যাচ্ছেন, কোনোরকম বিবেচনা ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অথবা মেয়েদের খেলাধুলা বন্ধ করার দাবি তুলে অরাজকতা সৃষ্টি করছেন এবং ওয়াজ মাহফিল ও রাজনৈতিক সভায় বেহুদা বক্তব্য দিয়ে ইসলামকে বিতর্কিত করছেন, তারা বুঝে অথবা না বুঝে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার দিল্লির উদ্দেশ্যই পূরণ করছেন। এটাও অসম্ভব নয় যে, ইসলামপন্থিদের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী ও ভারতীয় দালালরাই এসব কাণ্ড ঘটাচ্ছেন। ফ্যাসিবাদের পনেরো বছরে প্রচুর সুবিধাবাদী তথাকথিত আলেম নামধারীদের দেখা আমরা পেয়েছি, যাদের অধিকাংশই এখন পলাতক।

নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে বিমান নিয়ে আত্মঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে পরিকল্পিতভাবে যে ইসলামোফোবিয়ার ঢেউ উঠানো হয়েছিল, অনেকাংশেই তার অবসান ঘটেছে। গাজায় ইসরাইলের বর্বর বাহিনীর দুই বছরব্যাপী গণহত্যাকালে ইউরোপ এবং আমেরিকায় আমরা ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি যে সহমর্মিতা দেখতে পেয়েছি, সেটি পশ্চিমা দুনিয়ায় ইসলামোফোবিয়া অবসানের ইঙ্গিত বহন করে। সেসব দেশে অবশ্যই কট্টর ইসলামবিদ্বেষী মানুষজন এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আছে। তবে, ইউরোপের অধিকাংশ দেশে গণহত্যার বিরুদ্ধে যে অসংখ্য বিক্ষোভ হয়েছে, সেখানে স্বতঃস্ফূর্ত জনগণের অংশগ্রহণ তথাকথিত ইসলামি বিশ্বের তুলনায় অনেক বেশি মাত্রায় ছিল।

মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি এ বছর ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিছুদিন আগেও এটা অচিন্তনীয় ছিল যে, আমেরিকায় জনমত ইসরাইলের চাইতে ফিলিস্তিনের প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল হতে পারে। কিন্তু এখন সেটাই ঘটেছে। বিশেষত মার্কিন তরুণদের মন গণহত্যাকারী ইসরাইলের প্রতি বিষিয়ে উঠেছে। ভারত যে তাদের দাসানুদাস শেখ হাসিনার পতনকে মেনে নিতে একধরনের বাধ্য হয়েছে, তার পেছনে বিশ্ব ভূরাজনীতির এই নাটকীয় পরিবর্তন কাজ করেছে। যতদিন দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার একমাত্র কৌশলগত মিত্র বিবেচনা করেছে ততদিন বাংলাদেশে ভারতের এক অলিখিত উপনিবেশ কায়েম রাখার সুযোগ ছিল। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের ফলে ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের ওপর ভারতের সেই দাদাগিরির ক্ষমতা অনেকাংশে সীমিত হয়ে পড়েছে। ভূরাজনীতির এই পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংহত করা আবশ্যক। অতি ইসলামিস্টরা তাদের হটকারী কাজকর্মের মাধ্যমে আমাদের সেই উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি করছেন।

ইসলামি শরিয়াহ সম্পর্কে আমার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। আমি প্রধানত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা করে থাকি। বাংলাদেশে যেসব ইসলামিক স্কলাররা ওয়াজে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত কথা বলেন, তাদের অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আমি নারী-পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে অতিমাত্রায়, অনেকাংশে অপ্রয়োজনীয় এবং কখনো কখনো অরুচিকর কথা বলার পরিবর্তে, বর্তমান চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ অনুসারে মানবতা, কল্যাণ ও ইনসাফের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং প্রকৃত মুমিনের চরিত্রের ব্যাখ্যা প্রদানে অধিকতর মনোযোগী হওয়ার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের স্মরণে রাখা দরকার যে, ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান উপমহাদেশের একেবারে পূর্বে অবস্থিত বাংলাদেশে হাজার বছর আগে ইসলাম ধর্মের প্রচারকরা তৌহিদ, ইনসাফ ও সাম্যের বাণী দিয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন।

এটা বিস্ময় জাগানিয়া যে, মুসলিম সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল দিল্লি থেকে অনেক দূরে অবস্থিত বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিলেন, অথচ খোদ রাজধানী দিল্লির মুসলমান সম্রাট ও শাসকশ্রেণির আশপাশের সাধারণ মানুষরা বাংলার মতো করে ধর্মান্তরিত হননি। এই জনতাত্ত্বিক চমৎকারিত্বের নানা ধরনের ব্যাখ্যা ইতিহাসের গবেষক ও সমাজবিজ্ঞানীরা তাদের মতো করে দিয়েছেন, যা নিয়ে আজ আর লিখতে চাচ্ছি না। বুদ্ধিমান মানুষের জন্য নিদর্শনস্বরূপ মহান আল্লাহতায়ালা হয়তো দিল্লির সঙ্গে বাংলার জনগণের এই পার্থক্য রেখে দিয়েছেন।

আশা করি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ওয়াজ মাহফিলের ইসলামি বক্তারা এখন থেকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অধিকতর সচেতন হবেন। আলেমরা অন্তত চটকদার কথা বলে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন, অথবা ‘ভিউ’ বাড়ানোর ব্যবসার পেছনে দৌড়াবেন না। অনুগ্রহ করে বাংলাদেশ, ইসলাম ও নিজেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা থেকে বিরত থাকুন। ফ্যাসিবাদের সমর্থক ‘আগেই ভালো ছিলাম’ গোষ্ঠী আপনাদের অসতর্কতা ও ভুল থেকে ফায়দা লোটার জন্য অপেক্ষা করছে।