
১২ আগস্ট, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ সন্তান, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক আরাফাত রহমান কোকোর জন্মদিন। রাজনীতিবিদ পরিবারের সন্তান হয়েও সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় না হয়ে তিনি নিজেকে নিবেদন করেছিলেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে।
১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট কুমিল্লায় জন্ম নেন কোকো। এক বছরের কম বয়সে পিতার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, অল্প বয়সে পাকবাহিনীর বন্দিদশা, মাত্র ১১ বছর বয়সে পিতৃহারা হওয়া শৈশব-কৈশোরে নানা কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছিলেন তিনি। জীবনের প্রথম দশ বছরেই বন্দিদশা ও পিতৃহারা হওয়ার বেদনায় গড়ে ওঠা এই মানুষটি পরবর্তীতে হন দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে এক অবিচ্ছেদ্য নাম।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্রিকেটকে রাজনীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নেন কোকো। ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্থানে থেকেও বোর্ড সভাপতির আসন গ্রহণ না করে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় হাই পারফরম্যান্স ইউনিট, যা থেকে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, শুভাগত হোম, এনামুল হক জুনিয়রের মতো খেলোয়াড় উঠে আসেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বর্ষাকালীন স্থবিরতা থেকে মুক্ত করতে ২০০৪ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট ভেন্যুতে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন তিনি। আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম স্থাপন করে স্টেডিয়ামটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেন। যা ২০১১ সালের বিশ্বকাপের স্বাগতিক মর্যাদা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া ক্রিকেট বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগে সিলেট, খুলনা, বগুড়া ও রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের পরিকল্পনা করেন। বগুড়ার স্টেডিয়ামের নাম নিজের পিতার নামে না রেখে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ চান্দুর নামে নামকরণ করে ক্রীড়াক্ষেত্রে এক অনন্য নজির স্থাপন করেন।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার হন কোকো এবং ২০০৮ সালে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় মাত্র ৪৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। দেশে ফেরার সুযোগ না পাওয়া এই নীরব নিবেদিত প্রাণের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় প্রায় কারফিউ পরিস্থিতির মধ্যে, যেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। যা প্রমাণ করে তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে আরাফাত রহমান কোকো স্মরণীয় থাকবেন একজন নীরব অথচ দূরদর্শী ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে, যিনি প্রচারের আলো থেকে দূরে থেকে কাজ করেছেন দেশের ভবিষ্যৎ ক্রীড়াবিদ গড়ে তোলার জন্য। তাঁর অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্ম অনুপ্রেরণা জোগাবে।
শরিফুল রোমান