Image description

 আহমেদ খিজির

ফেলানীর ঝুলে থাকা লাশের আজ ১৪ বছর। 

বাংলাদেশের মানুষের কাছে চরম লজ্জার, অপমানের, গ্লানির এক নাম ফেলানী খাতুন। চোদ্দ বছরের কিশোরীর নিথর মৃতদেহ সীমান্তের কাটাতারে ঝুলেছিলো যেন বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে। গত দেড় দশক বাংলাদেশে যে স্বৈরাচারী দৈত্য এদেশের উপর ভর করেছিলো, যারা ক্ষমতার জন্য প্রতিবেশীর কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছিলো, তাদের নতজানু গ্লানির, এদেশের লজ্জার প্রতীক আমাদের ছোট্ট মেয়ে ফেলানী। 

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি। বাবার সঙ্গে ভারত থেকে দেশে ফিরছিল মেয়েটি। সীমান্ত পার হওয়ার সময় কাঁটাতারের বেড়ায় তার কাপড় আটকে যায়।  ভয়ে চিৎকার করে উঠে সে। অথচ সেই ভীত, নিরস্ত্র মেয়েটির বুকে নির্মমভাবে গুলি চালায় ভারতের সীমান্তরক্ষী  বিএসএফ। 

ঠান্ডা মৃতদেহটা বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে ঝুলে থাকে দুই দেশের সীমানায়। 

আজও ফেলানী হত্যার বিচার পাননি তার বাবা নূরু ইসলাম, গোটা বাংলাদেশ। 

“পাখির মতো গুলি করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখেছিল আমার মেয়ে ফেলানীকে। আমার সামনে পানি পানি বলে চিৎকার করেছিল। বিএসএফ কিছু করতে দেয় নাই। 

“কাঁটাতারে পাঁচ ঘণ্টা ঝুলিয়ে রেখে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আমার মেয়েকে। আমি কতবার বিচারের জন্য গিয়েছি। আমাকে শুধু আশ্বাস দিয়ে রেখেছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আমাদের এত চাপে রেখেছে, কোনো দিন এবিষয়ে কথাও বলতে দেয় নাই।"

ফেলানীর নির্মম হত্যাকান্ড নিয়ে খোদ ভারতসহ দেশ বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১৩ অগাস্ট কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। কিন্তু পরে ভারতীয় আদালত অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়।

এই লজ্জাজনক বিচারে ভারতের নাগরিক কবিয়াল কবির সুমন প্রতিবাদে গেয়ে উঠেছিলেন

 

বেকসুর ছুটি পেয়েছে সেপাই

খুনিরা যেমন পায়

ভেবে দেখো মেয়ে ওই খুনিটাও

বাংলায় গান গায়।

 

তুমিও গাইতে গুনগুন করে

হয়তো সন্ধে হলে

তোমারই মতন সেই সুরগুলো

কাঁটাতার থেকে ঝোলে।

 

শোনো বি এস এফ শোনো হে ভারত

কাঁটাতারে গুনগুন

একটা দোয়েল বসেছে যেখানে

ফেলানি হয়েছে খুন।

 

রাইফেল তাক করো হে রক্ষী

দোয়েলেরও ভিসা নেই

তোমার গুলিতে বাংলার পাখি

কাঁটাতারে ঝুলবেই।

ফেলানী মরে গিয়ে আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছিলো এই স্বাধীন দেশের স্বৈরাচারী সরকার কতোটা নতজানু। যতবার আমরা ফেলানীর ছবিটা দেখেছি, ততোবার লজ্জায় আনত হয়েছি। হয়তো ভেতরে ভেতরে দৃঢ়প্রতিজ্ঞও হয়েছি যে, এই গ্লানি থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। স্বৈরাচারকে হটাতে হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে বোঝাতে হবে যে, আমাদের সম্পর্ক সমতার। 

ফেলানীর সুষ্ঠু বিচার হতেই হবে। বাংলাদেশ হাসিনাশাহীর পতন ঘটিয়েছে। এখন বাংলাদেশকে, গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে নিশ্চিত করতে হবে ফেলানীর বিচারের। আর কোনো ফেলানী নিষ্ঠুরতা যাতে না হয়। 

তা না হলে, ফেলানীর ঝুলে থাকা লাশ আমাদের অক্ষমতা আর অসভ্যতাকে নগ্ন করতে থাকবে।