
এম আবদুল্লাহ
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের একটি খবর জানিয়ে দিই। উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে দ্বিতীয়বারের মতো পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে যান। এই নির্বাচনের সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এতে ভোটাররা আসলে প্রার্থী পছন্দের সুযোগ পান না। ব্যালটে কেবল একজন প্রার্থীর নামই থাকে। সেই ব্যালট হাতে নিয়ে প্রকাশ্যে ব্যালট বাক্সে ভরতে হয় ভোটারকে। আর তারপর ভোটকেন্দ্রের প্রাঙ্গণে গিয়ে ভোট দিতে পারার জন্য নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলেই বিপত্তি।
পঞ্চাশের দশকে কোরিয়া ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এর পর থেকে কিম পরিবার উত্তর কোরিয়া শাসন করে আসছে। উত্তর কোরিয়ার সব নাগরিককে কিম পরিবারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করতে হয়। উত্তর কোরিয়ায় তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। দলগুলোর মধ্যে একটি কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি। পার্লামেন্টে এই দলটিই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাকি কয়েকটি আসন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও কনডোইস্ট চঙ্গু পার্টির ‘দখলে’ থাকে। দল তিনটি হলেও এসব দলের কাজের ধরন একই। তার ওপর এই ‘পুতুল পার্লামেন্টের’ কোনো ক্ষমতাই নেই।
উত্তর কোরিয়ার ভোটারের পছন্দের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি টানলাম এ কারণে যে, বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, ততই নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ১১ মাস আগে অপরিমেয় রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠীর পতন ও পলায়নের ঘটনা ঘটলেও অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতিকদের মনস্তত্ত্বে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। চব্বিশের ফেব্রুয়ারিতে যে ভোটাভুটির আলাপ হচ্ছে, তা সুষ্ঠু ও অবাধ হবে কি না, এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ক্ষমতাপ্রত্যাশী দলগুলোর হালের চরিত্র বিশ্লেষণ করে আশ্বস্ত হওয়ার চেয়ে উদ্বেগ দানা বাঁধছে। পতিত আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচনেও মাঠ সমতল থাকবে, এমনটা হলফ করে বলার সময় আসেনি। সংঘাতপূর্ণ কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হলে তাতে আওয়ামী লীগের হাতে থাকা অস্ত্র ও অর্থ সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দেবে। বিএনপি ও জামায়াত বা ছাত্রদের দল এনসিপি যদি জয় পাওয়ার জন্য মরিয়া ভূমিকা নেয় এবং নিজ নিজ প্রভাবিত এলাকায় সহাবস্থানের পরিবর্তে যেনতেনভাবে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে দুর্বিনীত আচরণ করে, তাহলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন-আকাঙ্ক্ষা অধরাই থেকে যাবে। দলনিরপেক্ষ সরকারের পক্ষেও পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে।
আরেকটি উদ্বেগজনক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে পরাস্ত ও পর্যুদস্ত আওয়ামী লীগের অপরাধকে লঘু করার মিশন নিয়ে নেমেছেন অনেকেই। পত্রিকার নিবন্ধে ও টকশোর আলোচনায় বর্তমান সরকারের সময়ে সংঘটিত ছোটখাটো বিচ্যুতিকে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের চেয়েও বড় করে দেখানো হচ্ছে অবলীলায়। টকশোর আলোচক ও কলাম লেখকদের একটি অংশ অবাধ স্বাধীনতার সুযোগকে অপব্যবহার করছেন। আগে যাদের বিবেক বন্ধক ছিল গণভবনে, তাদের অনেকেই কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকার পর এখন সরব হচ্ছেন। নতুন করেও অনেকে একই পথে হাঁটছেন। তাদের পেছনে এরই মধ্যে লুটের টাকা লগ্নি করা শুরু হয়েছে, এমন তথ্যও আসছে। সংবাদমাধ্যমে পুরোনো মিত্র ও বশংবদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে পলাতক দুর্নীতিবাজ আওয়ামী নেতৃত্ব। তাদের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে রাজনীতি ও নির্বাচনে ফেরানো।
এ নিবন্ধ যখন চূড়ান্ত করব তখন যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত সাময়িকী ইকোনমিস্টের একটি নিবন্ধ নজরে আসে। তাতে ড. ইউনূস সরকারের ১১ মাসের শাসনকাল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে দীর্ঘ নিবন্ধে যে বিষয়টি সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে তা হলো আওয়ামী লীগকে জায়গা করে দেওয়া। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়েছে—‘রাজনৈতিক সংহতি গড়ার চেয়ে প্রতিপক্ষকে আক্রমণেই বেশি ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে।’ লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আইন বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে ইকোনমিস্ট বলেছে, ‘স্থায়ী পরিবর্তন আনতে হলে শাস্তি দেওয়া নয়, পুরো জাতিকে এক করতে হবে—এই মূলনীতি দরকার।’ এক জরিপের ফলাফল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের ১৪ শতাংশ ভোটারকে বাইরে না রাখারও নসিহত করে ইকোনমিস্ট। দলটির ভোটের এ পার্সেন্টেজ প্রকৃতপক্ষে আরো বেশি বলেও মন্তব্য করা হয় নিবন্ধে।
নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির পক্ষে সহানুভূতি সৃষ্টি ও জনমত তৈরির এ ধরনের প্রবণতা আরো জোরদার হবে বলেই ধারণা করি। ফলে এখন থেকে আট মাসের মাথায় বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনী আবহ কোন দিকে ঝুঁকে পড়বে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।
নতুন বাংলাদেশে সবাই নির্ভেজাল গণতন্ত্রের প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু সেটা কীভাবে? গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলতে জনগণ কর্তৃক গোপন ভোটে তাদের পছন্দ অনুযায়ী শাসক নির্বাচন করার পদ্ধতি বা ব্যবস্থাকে বোঝায়। জনগণই স্বাধীন পছন্দের মাধ্যমে নির্ধারণ করবে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী তথা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরামে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কে বা কারা বসবে। এককথায় জনগণই তাদের প্রতিনিধি বা শাসকশ্রেণি নির্বাচিত করবে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে অস্ত্র ও পেশিশক্তিবলে নিজ দেশের জনগণকে অবদমিত করে নয়, উত্তরাধিকারের দাবি খাটিয়েও নয়, রাজপথে লড়াইয়ের দোহাই দিয়ে নয়—শুধু ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা, সুশাসনের অঙ্গীকারের মাধ্যমে জনগণের ভালোবাসা-লব্ধ ‘ম্যানডেট’কে ভিত্তি করেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত ব্যক্তিরা দেশ শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মধ্যে নিখাদ উদার গণতন্ত্র সর্বোত্তম ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত। এই শাসনব্যবস্থার কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিশদ পর্যালোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিশেষত্বগুলো নির্ণয় করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণধর্মী সুষ্ঠু নির্বাচন, অর্থবহ কার্যকর সংসদ, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার, স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ প্রশাসন ও বিচার বিভাগ, ঐকমত্যের সরকার ব্যবস্থা, পরমতসহিষ্ণুতা, ভিন্নমতের প্রতি সাধারণ শ্রদ্ধাবোধ, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষণ, প্রতিহিংসামূলক আচরণ পরিহার, সু-আইনের সুশাসন, জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা, দুর্নীতিমুক্ত দায়িত্বশীল ন্যায়াচরণ প্রভৃতি।
বাংলাদেশে সর্বশেষ চব্বিশের জানুয়ারিতে যে ‘আমি-ডামি’র দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তামাশা হয়েছে, তখনো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আওয়াজ দেওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ ও সাবেক সিইসিদের সঙ্গে সংলাপ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুপারিশ গ্রহণ করেছিল হাবিবুল আউয়াল কমিশন। তখন প্রায় ৪০০ সুপারিশ জমা হয় আউয়াল কমিশনের হাতে। সে সুপারিশ বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তির দাপট ঠেকাতে আরপিওতে আটটি ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। আইন লঙ্ঘনকারী ও নির্বাচনী কাজে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান ছিল। কিন্তু সব উদ্যোগই নিষ্ফল হয়, কারণ হাসিনা জামানায় উত্তর কোরিয়ার মতো একক প্রার্থীর পরিবর্তে প্রার্থী ও প্রতীক একাধিক থাকলেও ভোটারদের সামনে অপশন ছিল একটাই। নৌকার বাইরে সিল মারার বা ইবিএমের বাটন টিপার সুযোগ ছিল না। নৌকা প্রতীক পেলে জয় অবধারিত হয়ে ওঠে। ফলে উচ্চ বিনিয়োগে নৌকার টিকিট নিয়েছে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অন্যান্য লুটেরা শ্রেণি।
২০২৪ সালের নির্বাচন ‘ডামি’ ছিল বলে আদালতে কবুল করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল ‘ডামি’ নির্বাচন। এটি ছিল প্রহসনের নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ার কারণেই ২০২৪ সালে ‘ডামি’ নির্বাচন হয়েছে।
হাবিবুল আউয়ালের এমন স্বীকারোক্তির পর আদালত তাকে প্রশ্ন করেন, তাহলে তিনি পদত্যাগ করলেন না কেন? এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। হাবিবুল আউয়াল বলেন, অতীতে কোনো সিইসি পদত্যাগ করেননি। পরে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রসঙ্গ আদালতে তুলে নিজের পাপ লঘু করার প্রয়াস পান ধূর্ত স্বভাবের আউয়াল।
আরেক সিইসি নুরুল হুদা অবশ্য রাতের ভোটের দায় এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত স্বীকার করেননি। জনরোষে আটক হয়ে জুতার আঘাত ও মালা নিয়ে নির্বিকার বদনে পুলিশে সোপর্দ হন তিনি। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের কারিগরদের এ পরিণতিতে অনেকে উষ্মা প্রকাশ করলেও বেশিরভাগ মানুষ তাদের ভোটাধিকার হরণকারীদের প্রতি দয়া-মায়া দেখানোর ঘোর বিরোধী।
আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক শক্তি হিসেবে দেখা যাবে তারুণ্যকে। এক-তৃতীয়াংশ ভোটার তরুণ। এরা যে ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তা নিশ্চয় করেই বলা যায়। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি এই ভোটাররা অন্ধ দলীয় আনুগত্যে ভোট দেবেন, নাকি ব্যক্তি-প্রার্থীর গুণাগুণ কষ্টিপাথরে যাচাই করে তাদের প্রথম রায় দেবেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি অনুধাবন করে তারুণ্য-আকর্ষণে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে থাকবে, তারাই নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে পারবে।
বিতর্কহীন একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হবে বলেও আশ্বস্ত করছেন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা বাংলাদেশে খুবই দুরূহ। ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচনও এ দেশে সূক্ষ্ম ও স্থূল কারচুপির তকমা পেয়েছে। অনেকে যুক্তি দেখান, ভোট সুষ্ঠু না হলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করত, অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি আসনে যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন না হতো এবং অনিয়ম-কারচুপির মধ্যেও নির্বাচনে যদি বিএনপি ‘সম্মানজনক’ আসন পেত, তাহলে সেই নির্বাচন কোনো না কোনো মাত্রায় ‘গ্রহণযোগ্যতা’ পেত।
আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে বিএনপিকে অন্তত সম্মানজনক সংখ্যার আসনে জিততে দেওয়া হলে রাজনীতির গতিপথ ভিন্নও হতে পারত। আওয়ামী লীগ সে পথে পা বাড়ায়নি; বলেছে, বিএনপি কোথায়? তাদের নেতা কোথায়? প্রধানমন্ত্রী কে হবে? তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। দেশটাকে নিজেদের জমিদারি জ্ঞান করে প্রতিপক্ষ নির্মূলে সবই করেছে। পরিণাম ভোগ করতে সময় লেগেছে, এড়াতে পারেনি।
অনেকে শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে স্থানীয় পর্যায়ের ওপর দলের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কাজ করেনি। সরকারি দলের প্রার্থী ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসন মিলেমিশে কাজ সেরে ফেলেছে। আগামী নির্বাচনেও বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটে কি না, সে আশঙ্কা করছেন অনেক বিশ্লেষক। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার হুঁশিয়ার ও সতর্ক করার পরও মাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন কমই। দেশে ফিরলে তার শারীরিক উপস্থিতি কতটা প্রভাব ফেলবে, এখন সেটিই দেখার বিষয়।
অতি উৎসাহী আমলারা সক্রিয়। ভবিষ্যতের ক্ষমতাসীন দল হিসেবে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের গুডবুকে স্থান করে নিতে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। তারাও মাঠপর্যায়ে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে পারেন বলে অনেকের আশঙ্কা। জামায়াতও বসে নেই। তারাও মাঠপ্রশাসনে সমমনা লোক বসানোর জন্য তৎপর রয়েছে। আংশিক সাফল্য পাচ্ছে বলে চাউর আছে। সরকার-ঘনিষ্ঠ এনসিপি নতুন দল হওয়ায় তাদের মতাদর্শের বা আস্থাভাজন আমলা প্রশাসনে থাকার কথা নয়। তবে সুবিধাবাদী আমলারা বসে থাকেন না, ফায়দা তোলেন। পছন্দের লোক দিয়ে প্রশাসন সাজানোর এই প্রবণতা সুষ্ঠু ও ‘ইতিহাসের সেরা’ নির্বাচনের জন্যে সহায়ক কি না, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক