Image description
সাঈদ ইফতেখার আহমেদ

সংলাপের মধ্য দিয়ে সংকট আরো ঘনীভূত হল। ৫ আগস্টের পর থেকে রাজনীতিতে যে মেরুকরণ ঘটেছে তার স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে আজকের সংলাপে। এ মেরুকরণের এক পাশে রয়েছে প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে এনজিও এলিটদের সমন্বয়ে গঠিত সরকার এবং ইসলামবাদী দলসমূহ, এনসিপি, এবি পার্টি ইত্যাদি। তারা সবাই চাচ্ছে নির্বাচন প্রলম্বিত হোক। নির্বাচন দেরিতে হলে সেটা তাদেরকে রাজনৈতিক সুবিধা দেবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

 

এনসিপি এবং ইসলামবাদীরা প্রফেসর ইউনূসের সরকারকে নিজেদের সরকার বলে মনে করে। তাদের কর্মী, সমর্থকদের আচরণ এবং বক্তব্যে বিষয়টা স্পষ্ট। ইসলামবাদীদের উপলব্ধি হল, বর্তমান সময়ে তাঁরা যতটা মুক্ত পরিবেশে, স্বাধীনভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন, সেটা স্বাধীন বাংলাদেশে এর পূর্বে কখনো সেভাবে সম্ভব হয়নি। তাদের আশংকা হল, নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হলে তাদের আজকের যে অবস্থান, সেটা ব্যাহত হতে পারে।

এর বিপরীতে বিএনপি এবং সিপিবির অবস্থান হচ্ছে খুব বেশি দেরি করতে হলে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তারা শুরু থেকেই ইসলামবাদীদের মতো অন্তর্বর্তী সরকারকে নিজেদের সরকার ভাবতে পারেনি।

বিএনপির প্রাথমিক মূল্যায়ন ছিল ইউনূসের সরকারও পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো হবে, যাদের প্রাথমিক কাজ হবে শুধু নির্বাচন করা। তারা প্রথমে যে বিষয়টা বুঝতে পারেনি সেটা হল যে, এটি তত্ত্বাবধায়ক নয় বরং গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার। এ দুটো বিষয়ের মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে।

এদিকে সিপিবিসহ বামপন্থীরা উদ্বিগ্ন এ ভেবে যে, ইসলামবাদের রাজনীতির প্রতি বর্তমান সরকারের একটা সহানুভূতির দৃষ্টি রয়েছে। এ ধরনের একটা চিন্তার জায়গা থেকে তারা মনে করছে নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটা হলে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। ফলে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বিএনপির সাথে সিপিবির যোগাযোগ বাড়ছে।

বিএনপির পাশাপাশি সেনাবাহিনীও এখন ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে। সেনাপ্রধানকে অপসারণ প্রচেষ্টা, মানবিক/ত্রাণ করিডোর, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দুবাইভিত্তিক কোম্পানিকে লিজ দেয়া ইত্যাদি আরো কিছু বিষয় নিয়ে সেনাবাহিনীর সাথে সরকারের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

যেকোনো সরকারকে টিকে থাকবার জন্য দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রথমটি হল একটি বড় রাজনৈতিক দলের সমর্থন; আর দ্বিতীয়টি হল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিশেষতঃ সেনাবাহিনীর সমর্থন।

এখন অধ্যাপক ইউনূস যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে রাজি না হন—যেটা সরকারের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে মনে হচ্ছে—তাহলে বিএনপি এবং সেনাবাহিনী, দুই তরফ থেকেই সরকার সহযোগিতা হারাতে পারে। আর দুই পক্ষ সমর্থন এবং সহযোগিতা তুলে নিলে সংকট শুধু গভীরতম হবে না; ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন পক্ষের দ্বন্দ্ব বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাতারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই সংকট উত্তরণে দ্রুততম সময়ে যেটি  প্রয়োজন সেটি হল, একটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

 

লেখক: ফ্যাকাল্টি মেম্বার, আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেম; সাবেক ইন্সট্রাকটর, নর্দার্ন অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটি; সাবেক লেকচারার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।  

[লেখকের নিজস্ব মতামত, লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]