
উপদেষ্টা পরিষদের আজকের বৈঠকটি অন্য যে কোন বৈঠকের চেয়ে একটু ভিন্ন এবং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠক শেষে যে বিবৃতি রিলিজ করা হয়েছে তাতে দেশের জনগণ এবং বিভিন্ন পক্ষের প্রতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত রয়েছে বলে নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া যায়।
১। বৈঠক থেকে বিভিন্ন পক্ষকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দেয়া হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তাদের মিটিং এখনো হয়নি, তথাপি রাজনৈতিক দলগুলোসহ বিভিন্ন পক্ষকে তারা কিভাবে ডিল করবেন, নীতিগতভাবে বৈঠকে তা ঠিক করে নেয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
২। এই প্রথম উপদেষ্টা পরিষদ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বকে স্পষ্ট করে একটি ফ্রেমের মধ্যে নিয়ে এসে বলেছেন- মূলত তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব হলো তিনটি : নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার। মনে হচ্ছে বিএনপিকে খুশি করতেই নির্বাচনকে আগে লেখা হয়েছে। কারণ, অন্যদলগুলো এখনো দৃশ্যমান 'সংস্কার ও বিচার'কেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তারা একটা যেনতেন নির্বাচন নয়, সুষ্ঠু নির্বাচন চান।
৩। বিভিন্ন দাবি দাওয়ার নামে আন্দোলন করে সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন। এ থেকে বিরত থাকতে পরোক্ষভাবে আহবান জানানো হয়েছে।
৪। বৈঠকে 'বৃহত্তর ঐক্য' নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে এই ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ। যদিও, এ ঐক্য কিভাবে হতে পারে তার কোন ইঙ্গিত এখানে নেই। তবে কি
একটি জাতীয় সরকার তথা বিভিন্ন দল থেকে কয়েকজনকে উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্তির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে? সম্ভবত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপের পরই এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
৫। সরকারের কাজকে অসম্ভব ও কষ্টকর করে তুলতে যারা কাজ করছেন, তারা পরাজিত শক্তি তথা আওয়ামী লীগের ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তা করছেন বলে সরকার মনে করছে।
৬। সরকার শেষ পর্যন্ত কাজ করতে না পারলে যে কোন সময় তারা চলে যেতে পারেন। তবে যাবার আগে কাজ করতে না পারার কারণ বা কোন কোন পক্ষ থেকে কিভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে যাবেন।
এটা সরকারের একটা বোল্ড স্ট্যাটমেন্ট। নিজেদের গায়ের সাইজ ও শক্তি বলে যে পক্ষগুলো সরকারকে অসহযোগিতা করছেন, এটা তাদের জন্য একপ্রকার পরোক্ষ সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
৭। সরকারকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালনে ধারাবাহিকভাবে বাঁধা দিয়ে তাদের কাজকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
এটাও সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পক্ষকে আরেকটা সতর্কবাণী। যদিও 'জনগণকে সঙ্গে নিয়ে' বলতে সরকার কি বুঝিয়েছে তা পরিস্কার নয়। তবে বাঁধা দিলেই যে তারা সরে যাবেন না বা কাজ থামিয়ে দেবেন না তার একটা প্রচ্ছন্ন ইশারা হয়তো দেয়া হয়েছে এখানে। একটা বিপ্লবী বিপ্লবী ভাব আছে এখানে। এমনও হতে পারে যে সরকার দীর্ঘ সময় থেকে যাবার জন্য ভিন্ন কোন পরিকল্পনা নিয়েও আগাতে পারে তখন।
ফলে যারা আজ অন্যসব বাদ দিয়ে সকাল বিকাল নির্বাচন নির্বাচন বলে অস্থির হয়ে গেছেন, তারা আম-ছালা দুটিই হারাতে পারেন। অথবা জাতিকে একটা অন্ধকার চোরাগলিতে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেরা এ প্রজন্মের রাজাকার হিসেবে আজীবনের জন্য চিহ্নিত হয়ে যেতে পারেন।
আবু সালেহ ইয়াহিয়া ২৪ মে ২০২৫
লন্ডন, যুক্তরাজ্য