
মাহমুদুর রহমান
গাজায় জায়নিস্ট ইসরাইলের বর্বর সেনাবাহিনীর চলমান গণহত্যা নিয়ে গত সপ্তাহে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলাম। তখন জানতাম না, বিশ্বশান্তির জন্য ক্রমেই হুমকি হয়ে ওঠা আরেকটি দেশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে এক ভয়ংকর পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার দিকে ঠেলে দিতে যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থনে ইসরাইল সারা বিশ্বে এমন একটি দুর্বিনীত ও অচ্ছুত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যেটি কোনো আন্তর্জাতিক আইনের কোনোরকম পরোয়া করছে না।
ইসরাইলি গণহত্যায় পশ্চিমা মিডিয়ার প্রচ্ছন্ন সমর্থন নিয়ে আমার লেখাটি গত সপ্তাহে যেদিন প্রকাশিত হয়েছিল, ঠিক সেদিন গভীর রাতে আঞ্চলিক হেজেমনিক রাষ্ট্র ভারত তার আজন্ম শত্রু পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও কাশ্মীরে বিনা উসকানিতে মিসাইল এবং বোমা হামলা করেছে। অবাক করার মতো বিষয় হলো, হামলার লক্ষ্যবস্তু পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনা ছিল না। একাধিক মসজিদসহ বেসামরিক স্থাপনায় ভারতের সেই নিন্দনীয় হামলায় শিশুসহ পাকিস্তানের প্রায় ১০০ বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে।
একমাত্র বর্বর ইসরাইল ব্যতীত বিশ্বের কোনো দেশ ভারতের এই আগ্রাসনকে সমর্থন জানায়নি। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলার জন্য দেশটির সরকার পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করলেও সেই অভিযোগের পক্ষে তারা এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। ইসলামাবাদ সেই সন্ত্রাসী ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাব দিলে সেটাও দিল্লির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
দেশটির কট্টর হিন্দুত্ববাদী সরকারের কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে বিরক্ত হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় হামলাকে প্রথম দিনই ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল, এবার আর হঠকারী দিল্লি পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে কোনো সমর্থন পাচ্ছে না। বিশাল কূটনৈতিক পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়করভাবে দাম্ভিক ভারতকে যুদ্ধক্ষেত্রেও পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।
গভীর রাতে অত্যাধুনিক ‘৪.৫ জেনারেশন’ ফরাসি ফাইটার জেট রাফালসহ ভারতের যুদ্ধভান্ডারে যত আধুনিক বিমান ছিল, সেগুলো দিয়ে অতর্কিতে হামলা চালানো হলেও পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর প্রশংসনীয় আগাম প্রস্তুতি ছিল। তারা তাদের বিমানবাহিনী দিয়ে সীমান্তরেখার অভ্যন্তর থেকেই আগুয়ান ভারতীয় বিমান বহরকে লক্ষ করে পাল্টা ‘এয়ার টু এয়ার’ মিসাইল হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, দেশটির প্রতিরক্ষামূলক পাল্টা হামলায় সে রাতে ভারতের তিনটি রাফালসহ মোট পাঁচটি বিমান ভূপাতিত হয়।
আমার মন্তব্য প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভারত তার বিমানবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সরাসরি স্বীকার বা অস্বীকার না করলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া অন্তত তিনটি ভারতীয় বিমান ধ্বংসের খবর নিশ্চিত করেছে। সীমিত যুদ্ধের পরবর্তী তিন দিনে ভারতের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ইসরাইল থেকে তাদের ক্রয় করা ড্রোনের বধ্যভূমিতে পরিণত হয় পাকিস্তানের ভূখণ্ড। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ১০০ অস্ত্রসজ্জিত ভারতীয় ড্রোনকে ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়।
ভারতের আক্রমণের তিন দিনের মধ্যেই বোঝা যাচ্ছিল, হেজেমনিক চরিত্রের দেশটি তার থেকে অনেক ক্ষুদ্রকায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা ব্যতিরেকে আকস্মিক আক্রমণ থেকে কোনো কৌশলগত ফায়দা তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। চতুর্থ দিন পাকিস্তান ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পাল্টা জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ান উম মারসুস’, অর্থাৎ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ‘সিসা-ঢালা দেয়াল’ আরম্ভ করে।
এই চার দিনের অনর্থক যুদ্ধে হামলা ও পাল্টা হামলায় পাকিস্তান এবং ভারতের প্রায় ২০০ সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়। পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক পাল্টা আক্রমণের ঘোষণায় সম্ভাব্য সর্বাত্মক যুদ্ধের পটভূমিতে দক্ষিণ এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষের নিরাপত্তা প্রচণ্ড হুমকির মুখে পড়লে সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোদি সরকারকে সংযত হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। সেই চাপ উপেক্ষা করা হাস্যকরভাবে ‘বিশ্বগুরু’র দাবিদার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলে ভারতের সার্বিক বিপর্যয়ের ষোলো কলা পূর্ণ হয়।
১৯৪৭ সাল থেকেই ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত সাত দশকে দিল্লি প্রতিবেশী প্রায় সব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। তবে তাদের সেই হেজেমনিক চেষ্টায় সাধ্যমতো বরাবর বাদ সেধেছে পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে ভারতের কাছে যুদ্ধে পাকিস্তান পর্যুদস্ত হলে অন্তত বছর কয়েকের জন্য প্রকৃত অর্থেই ভারত আঞ্চলিক প্রভুত্ব কায়েম করতে পেরেছিল।
এরপর খানিকটা আশ্চর্যজনকভাবে ক্ষুদ্র দেশ শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতের পরাজয় আরম্ভ হয়। ১৯৮৯ সালে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রে ভারতের আর এক যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীরই সৃষ্টি করা তামিল টাইগারের কাছে প্রচণ্ড মার খেয়ে ইন্ডিয়ান মিলিটারি পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়। ১৯৯১ সালে তামিল টাইগারের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ইন্দিরা গান্ধীর বড় ছেলে রাজীব গান্ধীও নিহত হন।
এক দশকের মধ্যে ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হয়ে যাওয়ার ফলে এই অঞ্চলকে কব্জায় নেওয়ার ভারতীয় স্বপ্নের এক ধরনের সমাপ্তি ঘটে গেছে বলা যেতে পারে। কারণ একই অঞ্চলে দুই দেশ পরমাণু বোমার অধিকারী হলে সেই অঞ্চলে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে একক হেজেমনি প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।
দুই পারমাণবিক শক্তির মধ্যকার সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে শেষ পর্যন্ত বিজয় উপভোগ করার জন্য কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। সমস্যা হলো, ভারতের বর্তমান শাসকশ্রেণির অতি জাতীয়তাবাদী প্রচারণার ফলে দেশটির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ কট্টর হিন্দু জনগোষ্ঠী মুসলমানের রক্তপিপাসায় এতটাই উন্মত্ত হয়ে উঠেছে যে, প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্রটির পারমাণবিক শক্তির বাস্তবতা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল।
পাকিস্তানের এক মসজিদে ভারতীয়দের মিসাইল হামলায় জইশ-ই-মোহাম্মদের নেতা মাসুদ আজহারের বড় বোন ও শিশুসমেত তার পরিবারের ১০ জন নিহত হওয়ায় উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মিডিয়ার কাছে উল্লাস প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। কোনো বেসামরিক পুরুষ, নারী ও শিশু হত্যার ঘটনায় এই ধরনের বিকৃত আনন্দ প্রকাশ আমরা ভারতের বাইরে কেবল ইসরাইলি নেতাদের মুখ থেকে শুনে থাকি।
ভারতীয় মিডিয়ায় যোগী আদিত্যনাথকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম দাবিদার হিসেবে প্রচার করা হয়ে থাকে। ভারতে মোদি ও যোগীর মতো রাজনৈতিক নেতাদের অমানবিকতা ও দাম্ভিক আচরণের ফলেই পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে ভারতীয় মিডিয়ার দায়িত্বজ্ঞানহীন মিথ্যাচার দেশটির বিভ্রান্ত জনগণের ভেতরে এক ধরনের পাশবিক গণ-হিস্টিরিয়ার জন্ম দিয়েছে। তারা ক্রমেই বাস্তবতা-বিবর্জিত কল্পরাজ্যের বাসিন্দা হয়ে এক নেশাগ্রস্ত যুদ্ধবাজ জাতিতে পরিণত হয়েছে। বলিউডের উদ্ভট ও ইতিহাস-বিবর্জিত কাল্পনিক সব সিনেমা ভারতীয়দের আরো নেশাতুর করে তুলছে।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের কাছে পৃথিবীতে একমাত্র আদর্শ রাষ্ট্র হচ্ছে জায়নিস্ট ইসরাইল। আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু যেভাবে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছেন, ঠিক একই পন্থায় ভারতীয় উগ্র হিন্দুরাও পাকিস্তানে গণহত্যা চালাতে চায়। তারা ভুলে গেছে, ভারত ইসরাইল নয় এবং পাকিস্তানও অসহায় গাজা নয়। এটা সত্য, কোনো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে তুলনামূলকভাবে কম সম্পদশালী দেশ পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে টিকে থাকতে পারবে না।
কিন্তু পরমাণু বোমা পাকিস্তানকে এমন এক প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েছে, যাকে উপেক্ষা করা বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব নয়। উপরন্তু পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীও যে যথেষ্ট শক্তিশালী, সেটা মাত্র চার দিনেই প্রমাণিত হয়েছে। গত এক দশকে নরেন্দ্র মোদির যে কথিত ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতিওয়ালা কঠোর নেতার ভাবমূর্তি বিজেপি-সমর্থক মিডিয়ার কল্যাণে গড়ে উঠেছিল, তার সম্ভবত এবার অবসান ঘটতে চলেছে। এতদিন ভারতের একটি বহুল প্রচারিত পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক ডকট্রিন ছিল, দিল্লির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে কোনো তৃতীয় পক্ষকে সম্পৃক্ত হতে না দেওয়া।
এবার সেই ডকট্রিনকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বভাবসুলভ কায়দায় তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজে টুইট করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদি যতই বুক চাপড়ে নিজের কাল্পনিক শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করুক না কেন, ভূরাজনীতির মাপকাঠিতে ভারতের ও পাকিস্তানের অবস্থান সমপর্যায়ের। ভারত এখনো উন্নয়নশীল এমন একটি রাষ্ট্র, যার অবস্থান বিশ্ব রাজনীতির খেলায় এক অনুগামীর মাত্র, কোনো নেতার নয়। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা-সংক্রান্ত যার যার টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিও যা লিখেছেন, তার সারকথা নিম্নরূপ—
১. ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
২. যুদ্ধবিরতিতে উভয় দেশকে সম্মত করাতে সেক্রেটারি অব স্টেট, যুদ্ধবিরতি-পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় পাকিস্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছেন।
৩. যুদ্ধবিরতির পর ভারত ও পাকিস্তান একটি নিরপেক্ষ তৃতীয় দেশে সব বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করবে।
৪. ভারত ও পাকিস্তানের দুই প্রধানমন্ত্রীর বাস্তব জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রশংসনীয়।
মাত্র দুটি টুইটের কয়েক লাইন বিবৃতির মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বের তর্কাতীতভাবে সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি অব স্টেট ভারতের ৭০ বছরের কথিত আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের ‘মিথ’-এর বেলুন ফুটো করে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য একটি টুইটেই তার বক্তব্য সীমিত করেননি। বিশ্ব ভূরাজনীতিতে ভারতকে তার প্রকৃত অবস্থান বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরো একটি বেশ দীর্ঘ টুইট করেছেন। তিনি সেখানে মূলত তিনটি বার্তা দিয়েছেন—
১. ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে খুবই আনন্দিত হয়েছেন।
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ মেনে নেওয়ার ফলে পুরস্কারস্বরূপ ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তান ও ভারতকে অতিরিক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করবে।
৩. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার মধ্যস্থতা করে সেই ১৯৪৭ সাল থেকে চলে আসা কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তিন নম্বর বার্তাটি ভারতের সব গরিমা একেবারে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। এতদিন কাশ্মীর প্রশ্নে কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা গ্রহণ করা তো দূরের কথা, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করতেও দিল্লি সম্মত ছিল না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার টুইটে ভারতের একগুঁয়েমিকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। এখন ভারত সরকারের ‘স্পিন ডক্টররা’ দেশটির কূটনৈতিক ও সামরিক পরাজয় ঢেকে রাখার জন্য যতই চেষ্টা করুক না কেন তাতে কোনো ফায়দা হবে না।
নরেন্দ্র মোদির মাত্র চার দিনের বেকুবির ফলে ফ্রান্স থেকে বিপুল ব্যয়ে সংগৃহীত রাফাল বিমানের সঙ্গে হেজেমনিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারত নিজেও ভূপাতিত হয়েছে। পারমাণবিক শক্তি অর্জন করলে একটি রাষ্ট্রের যে অধিক দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয়, এই গুরুত্বপূর্ণ কথাটি অতি দম্ভে ভারতের শাসকশ্রেণি বিস্মৃত হয়েছিল। এই বিস্মৃতির জন্য অবশ্য দেশটির ‘হাইপার ন্যাশনালিস্ট’ মিডিয়াও কম দায়ী নয়।
বাংলাদেশে হাসিনার ফ্যাসিবাদের উত্থানে মিডিয়া যেমন সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে, ঠিক একইভাবে ভারতেও নির্লজ্জ তোষণের মাধ্যমে একজন নিম্ন মেধার প্রচণ্ড দাম্ভিক ও চরম মুসলমানবিদ্বেষী রাজনীতিবিদকে বিশ্বনেতা বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। চার দিনের একেবারেই সীমিত যুদ্ধকালে ভারতের মিডিয়া পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ দখল, করাচি বন্দর ও শহর ধ্বংস, দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে গ্রেপ্তার এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের আত্মসমর্পণের মতো উদ্ভট সংবাদ প্রচার করে আন্তর্জাতিক জোকারে পরিণত হয়েছে।
হাসিনার বাংলাদেশ ব্যতীত পৃথিবীর কোনো দেশে ‘মেইন স্ট্রিম’ মিডিয়া নিজেদের এতখানি খেলো করেনি। এমনকি জায়নিস্ট দেশ ইসরাইলেও হারেৎজ ও আরো দু-একটি মিডিয়া সাংবাদিকতার খানিকটা মানদণ্ড বজায় রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু ভারতের মূলধারার কোনো মিডিয়ার কোনোরকম বিশ্বাসযোগ্যতা আর অবশিষ্ট নেই। মোদির আশ্রিত বোঝানোর জন্য ভারতে ‘মেইন স্ট্রিম’ মিডিয়াকে এখন লজ্জাজনকভাবে ‘গোদি মিডিয়া’ নামে ডাকা হয়।
উপরোক্ত ভারত সেদেশে আমার দেশ পত্রিকার ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। এর অর্থ হলো, বাংলাদেশের কোনো কোনো বৃহৎ রাজনৈতিক দল আমার সহকর্মীদের ফ্যাসিবাদ এবং ভারতীয় হেজেমনির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াইয়ের মর্ম বুঝতে না চাইলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় হুমকি ভারত কিন্তু সেটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক পশ্চিম বঙ্গের একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকা সম্পর্কে বলেছিলেন, ওই পত্রিকাটি যতদিন তার নিন্দা করবে, বাঙালি মুসলমানকে ততদিন বুঝতে হবে যে, তিনি সঠিক পথেই আছেন। আজ ভারত সরকার ইউটিউব চ্যানেল ব্লক করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, আমার দেশ-এর মাস্ট হেডে লেখা, ‘স্বাধীনতার কথা বলে’ নিছক একটি স্লোগান নয়।
সেই ২০০৮ সাল থেকে আমরা প্রকৃতপক্ষেই সর্বশক্তি দিয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। আমার দেশ-এর কাছে ভারত সরকারের এই ‘ইনটেলেকচুয়াল’ পরাজয় যেকোনো পদকপ্রাপ্তির চাইতে আমার কাছে অধিক সম্মানের। মৃত্যু পর্যন্ত মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমার ঈমান ইস্পাতকঠিন দৃঢ় রাখেন।