Image description

ড. মোহাম্মদ আবদুর রব

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় মিয়ানমার সরকারের জাতিগত নির্মূলপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়েও তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে পারেনি। মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যকার যুদ্ধের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও মানবিক সহায়তার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য এক নতুন বাস্তবতা হিসেবে হাজির হয়েছে। কিছু দিন ধরে রাখাইন রাজ্যে মানবেতর জীবনযাপন করা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই করিডোরের জন্য আগেই অনুরোধ জানানো হয়েছে। রাখাইনে মিয়ানমারের জান্তা শাসক ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয় থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য সহায়তা পাঠানো জরুরি। এই মানবিক করিডোরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।

মানবিক করিডোর হলো একটি নিরাপদ পথ বা এলাকা, যা যুদ্ধ, সংঘাত, দুর্যোগ বা সংকটপূর্ণ অবস্থায় আটকে পড়া বেসামরিক মানুষ, অসুস্থ ও আহত ব্যক্তি বা ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের জন্য অস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই করিডোর সাধারণত সংঘর্ষরত পক্ষগুলোর পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়, যাতে নিরীহ মানুষ নিরাপদে স্থানান্তরিত হতে পারে এবং জরুরি ত্রাণসামগ্রী বা সাহায্য পৌঁছানো যায়। সিরিয়া বা ইউক্রেনের যুদ্ধ চলাকালে মানবিক করিডোরের মাধ্যমে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোরের প্রস্তাবনা দেয়। এ সম্পর্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত, কারণ এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, সেই বিস্তারিত বিষয়ে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ এদিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘রাখাইনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ তাতে কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহী আছে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের সহায়তায় মানবিক সহায়তার মাধ্যমে রাখাইনে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যা শরণার্থীদের ফেরার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ এবং সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। তবে মানবিক সহায়তার রুটের বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে, যা নিয়ে নানা পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।’

অন্যদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে, সরকার তথাকথিত মানবিক করিডোর নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। সরকার মনে করে, যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের বক্তব্যের মধ্যে একধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় ঠিক কী রয়েছে এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী কী শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাও এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

‘অপারেশন ১০২৭’-এর আওতায় রাখাইন রাজ্যে জোরালোভাবে অভিযান করে জান্তা বাহিনীকে পিছু হটিয়ে দেয় আরাকান আর্মি। বর্তমানে রাখাইনের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। অন্যদিকে জান্তা বা তাতমাদো রাখাইন রাজ্য অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ফলে সেখানে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রাখাইন অঞ্চলের বর্তমান অবস্থার প্রভাব প্রতিবেশী বাংলাদেশের ওপরও পড়বে। রাখাইনকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নানা ধরনের মেরূকরণের সূচনা হতে পারে।

রাখাইনের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে, তা নিয়ে এখানে চারটি সম্ভাবনা বিবেচনা করা যেতে পারে—এক. রাখাইন মিয়ানমার থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন দেশ বা বিশেষ ব্যবস্থায় পরিচালিত একটি ভূখণ্ডে পরিণত হতে পারে। যেহেতু রাখাইনের ৯০ ভাগ এলাকা আরাকান আর্মির দখলে, তাই পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র হলে সে রাষ্ট্র আরাকান আর্মির নেতৃত্বে থাকবে। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশাবাদী হওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই, কারণ জান্তার মতো আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গা হত্যা ও তাদের উচ্ছেদের সঙ্গে জড়িত।

দুই. মিয়ানমারের জান্তা সরকার রাখাইন পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বা আলোচনার ভিত্তিতে। সেক্ষেত্রেও রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে ফেরত যাওয়ার আশা দুরূহ। যদি শেষ পর্যন্ত রাখাইন পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়, আরাকান আর্মি পিছু হটে, তবে মিয়ানমারের জান্তা সরকার বাংলাদেশের করিডোর প্রদানের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাবে, এটাই স্বাভাবিক।

তিন. জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপে রাখাইনে নিরাপদ অঞ্চল গঠন করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সদিচ্ছা খুবই জরুরি, যদিও আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো এ ভূমিকা রাখবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। চার. রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য বা প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করা। এ চার ধরনের পরিণতির কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশকে কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

রাখাইনের বেশিরভাগ ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। মিয়ানমার জান্তার হাত থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা দখলে নিলেও রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করা বন্ধ হয়নি, তাই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসাও বন্ধ হয়নি এবং সাম্প্রতিক সময়ে আরো এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সর্বশেষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল এবার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন থেকে নয়, বরং জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাত থেকে পালিয়ে আসছে। অতীতের দমন–পীড়নের জন্য পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে না গিয়ে রোহিঙ্গারা এখন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিদ্রোহীদের হামলা এতটাই নিষ্ঠুর যে রোহিঙ্গা মিলিশিয়ারা এখন তাদের পুরোনো দমনকারী, অর্থাৎ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর পাশাপাশি আরাকান আর্মির মধ্যেও রোহিঙ্গাবিদ্বেষ রয়েছে। মিয়ানমার সরকারকে দিয়ে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করানো গেলেও আরাকান আর্মি এ শব্দটি এখনো বলতে নারাজ। ১৩ এপ্রিল আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সরকারকে সাতটি শর্ত দিয়ে যে পত্র পাঠিয়েছে, সেখানে তারা রোহিঙ্গাদের অভিহিত করেছে ‘বাংলাদেশের (চট্টগ্রামের) মুসলিম শরণার্থী’ হিসেবে। রোহিঙ্গাদের যদি রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, তাহলে আরাকান আর্মির দখলকৃত স্থানে রোহিঙ্গারা কীভাবে নিরাপদ থাকবে? আরাকান আর্মি সক্রিয় তিন রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীকে (আরসা, আরএসও, এআরএ) নিষ্ক্রিয় করতে বলেছে বাংলাদেশ সরকারকে, যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

তাতমাদোবিরোধী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর সঙ্গে ভারতের সীমান্ত আছে, চীনের আছে, থাইল্যান্ডের আছে—সেখানে মানবিক করিডোর হচ্ছে না কেন? রাখাইনের সমুদ্র উপকূল কিংবা অন্য সীমান্ত দিয়ে মানবিক করিডোরের প্রস্তাব না দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে করিডোরের প্রস্তাব নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এর দ্বারা বাংলাদেশ নিজেকে এ অঞ্চলে/দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে কেন একটি রণক্ষেত্র তৈরি করতে উদ্যোগী হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর বাংলাদেশকে খুঁজতে হবে। মানবিক করিডোর দিলে তখন দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া রাখাইন অঞ্চলের লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানসহ হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারীদেরও বাংলাদেশে ঢুকতে তাদের সীমান্তে জড়ো হওয়া এড়ানো যাবে। মানবিক করিডোরের মাধ্যমে নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হলেও হতে পারে।

করিডোরের সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধা বা ঝুঁকিও রয়েছে। রাখাইনের মানবিক করিডোর বাংলাদেশকে অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে মারিওপোলের করিডোরে সম্মত হয়েও রাশিয়া শেষ পর্যন্ত সেখানে হামলা করে। সোভিয়েতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান যেই সীমান্তগুলোয় তালেবানকে সহযোগিতা করেছিল, সেই সীমান্তে এখনো যুদ্ধাবস্থা চলছে। জান্তা সরকারের কৌশল ও চীন-ভারতের স্বার্থ বিবেচনায় এই করিডোর আরাকান আর্মিকে শক্তিশালী করবে, যা সীমান্তে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়াবে, কারণ আরাকান আর্মির সাপ্লাই জান্তা বাহিনী বা তাতমাদো বন্ধ করেছে, যাতে তারা দুর্বল হয়। করিডোর দিয়ে যা-ই পাঠানো হোক, সেটা রাখাইনের ৯০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মিকেই সাহায্য করবে। এখন বাংলাদেশ হয়ে যে ত্রাণ যাবে, তা রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের কাছে পৌঁছাবে, নাকি আরাকান আর্মি সেগুলোকে দখলে নেবে, তার নিশ্চয়তা ঢাকার কাছে নেই। ফলে এই করিডোর জান্তার একটা সম্ভাব্য লক্ষ্যে পরিণত হওয়া খুবই সম্ভব। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক করিডোর হলে এবং সেখানে কোনো পক্ষ থেকে আঘাত এলে সামরিক ঝুঁকি তৈরি হবে। অতীতে মিয়ানমারের শান রাজ্যে এমনটি হয়েছে।

রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান সহযোগী ছিল আরাকান আর্মি। রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতিগত নিধনে জান্তা সরকারের প্রত্যক্ষ অংশীদার আরাকান আর্মি যখন গৃহযুদ্ধে পর্যদুস্ত, তখন ‘মানবিক করিডোর’ দিলে এর মাধ্যমে জান্তা সরকার কর্তৃক আবদ্ধ আরাকান আর্মির জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এই এলাকা জান্তা বাহিনী দ্বারা যদি কখনো পুনর্দখল করা হয়, তখন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব নাও হতে পারে। এ ছাড়া মাদক চোরাচালান, অস্ত্র পাচার ও জ্বালানি চোরাচালানের জন্যও এই করিডোর ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। মানবিক করিডোরে কোনো ধরনের হামলা বা অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

মানবিক করিডোরের মতো একটি স্পর্শকাতর, জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা উচিত। বাংলাদেশের কৌশল হতে হবে, রাখাইনের যেকোনো ধরনের পরিণতি থেকে বাংলাদেশ কী ধরনের সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে, তার হদিস করা। এরই সঙ্গে ঝুঁকির বিষয়গুলোও বিবেচনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ করিডোর বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তুরস্কর মতো দেশ যুক্ত করতে পারে। এটা হবে বাংলাদেশের আলোচনা শুরু করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। রাখাইন আরাকান আর্মি কিংবা অন্য যার দখলেই থাকুক—রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসিত হওয়ার পরে তাদের মানবাধিকার রক্ষার কোনো শর্ত ভবিষ্যতে লঙ্ঘন করলে তার পরিণতি কী হবে, সে কৌশলও জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশকেই নিতে হবে।

বাংলাদেশের উচিত এমন প্যাসেজের জন্য বঙ্গোপসাগর, সিতওয়ে ও মংডুর ওপরের দিকের রুট ব্যবহার করে সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের ভূমির ওপর দিয়ে মানবিক করিডোর তৈরি করার বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া। এটি হতে পারে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প করিডোরের প্রস্তাবনা। এতে সীমান্তের নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি হবে না এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ ও নিরাপদ হবে। রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল (সেইফ জোন) বা স্বায়ত্তশাসিত রোহিঙ্গা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। রাখাইনে উপর্যুক্ত পরিণতির কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশকে কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। রাখাইনে মিয়ানমারের জান্তা শাসক ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয় থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য সহায়তা পাঠানো যেমন জরুরি, তেমনি বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও অত্যাবশ্যক।