Image description

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাব নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা এই সমাজের বাস্তবতা ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। তার মতে, এটি একটি "অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক" উদ্যোগ, যা পশ্চিমা চিন্তাধারাকে অন্ধভাবে এদেশে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা মাত্র।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, "যারা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন, তাদের পেছনের প্যাথেটিক ইতিহাস আমরা সবাই জানি। অধিকাংশ নারী প্রতারণার শিকার হয়ে, কারো খপ্পরে পড়ে বা বাধ্য হয়ে এই পথে এসেছেন। তারা নিজেরাই এই অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তি চান। তাদের শ্রমিকের স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ, প্রকৃতপক্ষে, এই সাপ্লাই চেইনের দালালদের স্বীকৃতি দেওয়া।"

তিনি বলেন, “আপনি যদি ইতালিতে গিয়ে পাস্তা বা পিজ্জা খান, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে এসে যদি মানুষকে ভাত-মাছের পরিবর্তে পিজ্জা খাওয়ার পরামর্শ দেন এবং তা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন, সেটা হাস্যকর হবে। আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি, কালচার ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রয়েছে।”

শায়খ আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টাও পশ্চিমা আইডিওলজির অন্ধ অনুকরণ। তার মতে, “বাংলাদেশের ১৮-২০ কোটি মানুষের মধ্যে এ পর্যন্ত কয়টি বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে? এই ধরনের অভিযোগ প্রমাণ করাও কঠিন। এই ধারণা সমাজে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে, পরিবার ধ্বংসের পথ তৈরি করতে পারে।”

তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম অনুযায়ী, একজন স্বামীর কোনও অধিকার নেই স্ত্রীর প্রতি জুলুম করার। কোনো স্ত্রী যদি অসুস্থ হন বা শারীরিকভাবে অক্ষম হন, তাহলে জোর করে সম্পর্ক স্থাপন করা অনৈতিক, ধর্ম বিরুদ্ধ এবং সভ্যতার পরিপন্থী। কিন্তু এ বিষয়টিকে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ নামে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা পরিবার ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেবে।”

তিনি বলেন, “নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে আমাদের পরিবার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেসব বিষয় নিয়ে এই সমাজে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান – চার ধর্মের কারো মধ্যেই মতভেদ নেই, যেমন পতিতাবৃত্তি – সেগুলোকে অধিকার আখ্যা দিয়ে সমাজে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ এসবের কারণে এইডসসহ বিভিন্ন রোগ ছড়াচ্ছে, সমাজ ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়ছে।”

শেষে তিনি বলেন, “এই কমিশন পুনর্গঠিত হওয়া উচিত, যাতে এমন ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত হন, যারা দেশের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও বাস্তবতা বুঝেন। তাহলেই নারীর প্রকৃত অধিকার রক্ষা হবে এবং তাদের প্রতি সমাজের বঞ্চনা দূর করা সম্ভব হবে।”