Image description
এম আবদুল্লাহ

দেশের রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। আওয়ামী লীগমুক্ত মাঠ রাজনীতির প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে নতুন করে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের আভাস মিলছে। মধ্যম ও পেছনের সারির রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে অবহেলা-অনাদরের শঙ্কা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিএনপি-জামায়াতের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপড়েনে গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত ছোট রাজনৈতিক দলগুলো কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। দুই তরফ থেকেই তারা বেশ কদর পাচ্ছিল। গত সপ্তাহে বিলাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বৈঠকের পর রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করেছে।

নির্বাচনের সময় ও সংস্কারের পরিধি প্রশ্নে আসন্ন নির্বাচন ও ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দল ভিন্ন মেরুতে ছিল। ‘বিলাতি মিট’ তাদের অনেকটাই কাছাকাছি নিয়ে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আগের অবস্থান বদল করে জামায়াত এখন চব্বিশের মধ্য-ফেব্রুয়ারির আগেই নির্বাচন চায়। রমজানের আগে ভোট চায়। আগামী রমজান শুরু হবে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহান্তে। এ ছাড়া শুক্রবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ার কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে জানান দিয়েছেন, জাতীয় ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত একসঙ্গে থাকবে। আবার বিএনপিও ঘোষণা করেছে, যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। এ সবই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যে প্রত্যাশিত ঐক্যের সুঘ্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যদিও জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনায়কদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব ক্রমেই বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

গতকাল শনিবারের বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রায় অভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বিএনপি সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে। মূলত ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়ের জন্য এ চাপ বাড়ানো হবে বলে প্রতিবেদনগুলোয় উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এটি কোনো নতুন খবর নয়। দ্রুত নির্বাচনের পথে যেতে ড. ইউনূস সরকারকে বরাবরই চাপে রেখেছে বিএনপি। এখন ‘ডিসেম্বর কাট-অফ’ জানান দিয়ে ভোট আদায়ে হার্ড লাইনের আভাস দিয়েছে মাত্র।

এদিকে নির্বাচনের সময় নিয়ে ‘স্পষ্ট’ হওয়ার জন্য বিএনপি যেদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে ‘খুবই অসন্তুষ্টি’ জানাল, সেদিনই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, সরকারের প্রশাসন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে। ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছে, এ প্রশাসন নিয়ে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে না। এনসিপির আহ্বায়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচন দিলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সে ধরনের নির্বাচনে এনসিপি অংশ নেবে কি না, তাও দলটি ভেবে দেখবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আবার শুক্রবার একটি সংবাদমাধ্যমকে এনসিপির আরেক শীর্ষ নেত্রী সামান্তা ইসলাম বলেছেন, শুধু প্রশাসন নয়, পুরো অন্তর্বর্তী সরকারই বিএনপির হয়ে কাজ করছে। এ ধরনের সুস্পষ্ট ও সরাসরি অভিযোগ এটিই প্রথম।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গঠিত দলটির নেতারা বরাবরই সংস্কারের গুরুত্ব দিয়ে মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য চাইছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষমতাকাঠামো এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এ ব্যবস্থা সংবিধানের মাধ্যমে সমর্থিত হওয়ার কারণেই শেখ হাসিনার সরকার দুর্বিনীত ও ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পেরেছিল। ফলে কোনো বড় রাজনৈতিক দল যদি রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোকেন্দ্রিক সংস্কারের বিরোধিতা করে অন্য সব সংস্কারে রাজিও হয়, তাতে জুলাই অভ্যুত্থানে আত্মদান বৃথা যাবে এবং জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।

মৌলিক সংস্কার বলতে এনসিপির শীর্ষ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কিছু প্রস্তাবের কথা বলছেন। সব প্রস্তাবই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার সঙ্গে যুক্ত। তার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হওয়ার সুযোগ বন্ধ করা, একজন ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ, সাংবিধানিক বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী, সরকারি দল ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিসহ জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি গঠন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে নিম্নকক্ষে সংসদীয় আসন ও উচ্চকক্ষ আনুপাতিক ভোটভিত্তিক নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার।

এনসিপি বলছে, জুলাই ’২৪-এর আন্দোলনে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে। এখনো জুলাই হত্যার বিচার পাননি তারা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। দেশটাকে স্বপ্নের মতো সাজানোর সুযোগ এসেছে; কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জোর দিয়ে সংস্কারকাজ ব্যাহত করতে চাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ সেটি চান না।

প্রশাসনে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব নিয়ে এনিসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বিস্ফোরক মন্তব্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার অভিযোগের সত্যতা ও যথার্থতা নিয়েও কানাঘুষা চলছে। এটা সত্য, গত ১৬ বছরে প্রশাসনকে এতটাই দলীয়করণ করা হয়েছে যে, মোটামুটি পেশাদারিত্ব বা নিরপেক্ষতার আশা করা যায় এমন কর্মকর্তার সংখ্যাও একেবারেই হাতে গোনা। চাইলেই শেখ হাসিনা সরকার বা আওয়ামী লীগের অনুগত কর্মকর্তাদের সরিয়ে উপযুক্ত বিকল্প কর্মকর্তা দেওয়া যাচ্ছে না। গত আট মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে এ নিয়ে অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে।

আওয়ামী দলবাজ বা অনুগত কর্মকর্তা সরিয়ে যাদের বিবেচনায় নেওয়া যায়, তারা কোনো না কোনোভাবে বিএনপি-ঘনিষ্ঠ বা দলটির প্রতি অনুগত হিসেবে পরিচিত। ফলে মাঠপ্রশাসন থেকে শুরু করে যেখানেই কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে, সেখানে বিএনপি সুবিধা পেয়েছে। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি প্রায় নিশ্চিতভাবে ক্ষমতায় আসছে Ñ এমন বদ্ধমূল ধারণার কারণে সুবিধাবাদী চরিত্রের আমলারা ইতোমধ্যেই বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। অনেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগাতে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের শরণাপন্ন হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জনপ্রশাসন কার হাতে থাকতে পারে, এমন ধারণার ভিত্তিতে একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী আমলা সুসম্পর্ক গড়তে মরিয়া ভূমিকায় রয়েছেন।

৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার শপথ গ্রহণের আগেই বিএনপি নেতৃত্বের পছন্দ ও প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন হয়েছে। সরকারে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই অরাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ায় প্রশাসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে পরামর্শ নিতে হয়েছে। জাতীয় পার্টির ৯ বছরের শাসন বাদ দিলে স্বাধীন বাংলাদেশের বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। ফলে প্রশাসন মোটাদাগে দুই আদর্শে বিভক্ত। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোন সরকারের সময়ে কারা বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তা সংশ্লিষ্টদের নখদর্পণে। ফলে আওয়ামী লীগের বিকল্প খুঁজতে গেলেই বিএনপি-ঘনিষ্ঠ ছাড়া বিকল্প অপশন নেই বললেই চলে।

বলা হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশিরভাগ জেলার দায়িত্বে থাকবেন ২০০৮ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। সংস্কারের মাধ্যমে অন্যরকম সিদ্ধান্ত না হলে আগামী নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) বড় একটা অংশ হবেন ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া অন্য সময় নিয়োগ পাওয়া দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন কিছু জেলায়। তবে ডিসি-এসপির পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে যারা থাকবেন, তারা সবাই শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত। এ ক্ষেত্রে বিকল্প নেই বললেই চলে।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে মাঠপ্রশাসন সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। জেলার সার্বিক অবস্থা বুঝে নিতে আগেভাগেই পদায়নের কথা ভাবা হচ্ছে। যারা নির্বাচন দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন এমন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক তথ্যসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাইবাছাই চলছে। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদায়নের চূড়ান্ত তালিকা (ফিটলিস্ট) তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই মাস সময় নিয়ে ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের সাক্ষাৎকার শেষ করেছে। ২৮তম ব্যাচের সাক্ষাৎকার শুরু হয়নি। জানা যাচ্ছে, সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনে ডিসি ও আইনশৃঙ্খলার এসপির দায়িত্বে বেশিরভাগ থাকবেন ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। ২০০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় নভেম্বর মাসে এই ব্যাচের কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছিলেন চাকরিতে। ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়েও কিছুটা বিতর্কের জায়গা রয়েছে। বিএনপি আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের সময় প্রথম ভাইভা দিয়ে উত্তীর্ণদের বিরুদ্ধে দলীয় অভিযোগ তুলে সেটি বাতিল করে মইন-ফখরুদ্দীন সরকার। তাদের নিয়োগকৃত ড. সা’দত হুসাইন পিএসসির চেয়ারম্যান থাকাকালে ২৭তম ব্যাচ আবার দ্বিতীয় ভাইভা দিয়ে নিয়োগ পান। বর্তমানে ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে আছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় এসপির দায়িত্বে আছেন ১৭ কর্মকর্তা। এর বাইরে ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও আছেন, যারা ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া।

যতটা জানা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবে মূলত তিনটি ব্যাচ। ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের হাতে থাকবে পুরো জেলায় নির্বাচনের দায়িত্ব। এই তিনটি ব্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকবেন ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া বিএনপির সময়ে নিয়োগ পাওয়া ২৫তম এবং আওয়ামী লীগ সময়ে যোগদান করা ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও থাকবেন স্বল্পসংখ্যক। অবশ্য মাঠপ্রশাসনের অন্য সব কর্মকর্তাই থাকবেন শেখ হাসিনার শাসনে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগকৃতরা।

প্রশাসন ঢেলে সাজানো নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো স্বস্তির জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। প্রায়ই অভিযোগ আসছে, পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো বহাল আছেন এবং পোস্টিংও পাচ্ছেন। মূলত দলবাজির তকমামুক্ত পেশাদার কর্মকর্তার সংকট রয়েছে প্রশাসনে। ফলে সরকার চাইলেই আওয়ামী অনুগত কর্মকর্তাদের পরিবর্তে দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারছেন না। ১৬ বছরে প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা অবসরেও চলে গেছেন। বঞ্চনার শিকার এসব কর্মকর্তার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বর্তমান সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে।

গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ করে কমিটি। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত ১০ ডিসেম্বর ৭৬৪ জনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি প্রদান করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিবঞ্চিত হন আরো ৭৭৬ কর্মকর্তা। তারা সবাই পদোন্নতির জন্য আবার আবেদন করেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাচের চার শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন। আবেদনে তারা একদিকে যেমন পদোন্নতির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন, অপরদিকে তারা গত ডিসেম্বর মাসে দেওয়া ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির বেশ কিছু অনিয়ম ও অসংগতির কথা উল্লেখ করেন।

উল্লেখ করা বাহুল্য, নিরপেক্ষ নির্বাচনী প্রশাসন একটি আপেক্ষিক বিষয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে পুরোপুরি নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে কখনোই জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যেকটি নির্বাচনেই যে দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রশাসন কম-বেশি সে দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ভূমিকা রেখেছে। সুবিধাপ্রত্যাশী আমলারা না চাইতেও ক্ষমতার সিঁড়িতে থাকা দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে এসেছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতার দাবিদার দল হিসেবে বিএনপি সে সুযোগ লুফে নেবে এটাই স্বাভাবিক। আমলাশ্রেণি মতলববাজি ও দলবাজিতে যাতে রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি না দেয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা সংশ্লিষ্ট সবারই দায়িত্ব।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট