
বাংলাদেশের মিডিয়ার বৃহত্তর অংশ ভারত ও মুসলমান প্রশ্নে বিতর্কিত অবস্থান গ্রহণ করে। তারা হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসনকে দেখতে পায় না। এ কারণে ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নিধন চলছে সে ব্যাপারে তারা চুপ। অন্য দিকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে হইচই ফেলে দেয়। যেখানে এ ধরনের বেশির ভাগ ঘটনা বোগাস প্রচারণা ছাড়া অন্য কিছু নয়। রাজনৈতিক ইসলামকে কুপোকাত করতে এরা অগ্র সেনানী হিসেবে কাজ করেছে। যে অপরাধ মুসলমানরা করেনি তার দায়ও মিডিয়া মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। গুম, খুন, গুপ্ত কারাগার তৈরি করে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে নিষ্ঠুর কায়দায় হাসিনা দমন করতে পেরেছেন মিডিয়াকে সহচর হিসেবে পাওয়ায়। এরাই মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ যত হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প আছে তার পৃষ্ঠপোষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে বাংলা বর্ষবরণে পশুপাখির মুখোশ পরে ঢোল তবলা বাজিয়ে কল্যাণ চেয়ে নৃত্যের তালে যাত্রা দেখা যেত। এতে ব্যবহৃত মূর্তি ও মুখোশ নিছক শিল্প বা সৌন্দর্য প্রকাশে প্রদর্শন করা হতো না। প্রতিটি প্রাণী ও মূর্তির সাথে পৌত্তলিক বিশ্বাস গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি বহন করা একটি মুখোশ ছিল পেঁচা। হিন্দুধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, পেঁচা মঙ্গলের প্রতীক, এটি তাদের অন্যতম দেবী লক্ষ্মীর বাহন। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, পেঁচার মুখোশ বহন করলে লক্ষ্মী আসবে, মঙ্গল আসবে, কল্যাণ আসবে। ইঁদুর গণেশের বাহন, হনুমান রামের বাহন, হাঁস সরস্বতীর বাহন। হাতি, বাঘ ও সিংহ দুর্গার বাহন। গাভী রামের সহযাত্রী। ময়ূর কার্তিকের বাহন। ষাঁড় শিবের বাহন।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় এসব প্রাণীর মুখোশ বহন করা হতো। সূর্য হিন্দুদের এক দেবতা, যে কারণে শোভাযাত্রায় সূর্যের আকৃতির মানুষের মাথা বেশি বেশি দেখা যেত। মঙ্গল শোভাযাত্রা তাই কোনোভাবে সর্বজনীন উৎসব ছিল না, শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব ছিল। কৌতূহলের বিষয় হলো হিন্দু সম্প্রদায় বারো মাসে তেরো পূজায় পুরো বছরে যা করত, চারুকলায় একদল মুসলমানের নেতৃত্বে তারা তা এক দিনে করিয়ে নিত। ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে পয়লা বৈশাখ প্রধান উৎসব। হিন্দুরা অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে এটি পালন করে। চারুকলার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীন কিছু ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর ভর করে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে একটি হিন্দু সাম্প্রদায়িক উৎসবকে ঢাকা তথা সারা দেশের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে।
বাবুদের প্ররোচনায় একশ্রেণীর মাথামোটা মুসলমান হিন্দুদের ধর্মাচারকে সর্বজনীন উৎসব হিসেবে গ্রহণ করে বাহবা দিয়ে প্রমোট করেছে। এ সুযোগে ভারতও তাদের ওপর সওয়ার হয়ে স্বার্থসিদ্ধি করে নিয়েছে। মুসলমানদের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খর্ব করার কাজে জুতসইভাবে একে তারা কাজে লাগিয়েছে। এ জন্য এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। মানুষকে ফাঁকি দিতে ‘স্বৈরাচার অমঙ্গল’ এই যুক্তি সামনে এনে স্বৈরাচার ঠেকানোর বিষয় সামনে রাখা হয়। এরশাদ তথা স্বৈরাচার জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু এই বলে প্রচার চালানো হয়। বাস্তবে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত একটি প্রতীকের মধ্যেও সেই বার্তা কখনো দেখা যায়নি। মঙ্গল শোভাযাত্রায় কখনো এরশাদের ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে তার নজির নেই। এরশাদকে নিয়ে বহু ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন রয়েছে। পটুয়া কামরুল হাসানের আঁকা ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ রেখাচিত্রের আদলে কখনো কোনো মুখোশ মঙ্গল শোভাযাত্রায় স্থান পায়নি। অথচ মঙ্গল শোভাযাত্রায় বেগম খালেদা জিয়া ও জামায়াত নেতাদের দানবীয় প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে।
চারুকলার আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রার ঘোষিত অমঙ্গল ‘এরশাদ স্বৈরাচার’ হলেও মুসলমানদের রাজনৈতিক শক্তি ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে অমঙ্গল হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে। এরশাদকে দিল্লির অধীনস্থ এক সামরিক স্বৈরাচার হিসেবে এ দেশের মানুষ বিবেচনা করে। জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ভারতের ক্রীড়নক দলই ছিল বাংলাদেশের। অথচ স্বৈরাচারে বিরুদ্ধে ‘মঙ্গল’ আনতে পয়লা বৈশাখ পালনের নামে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। প্রথম দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় জামায়াত ইসলামের নেতাদের বিকৃত প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়। তাদের দেখানো হয় মন্দ শক্তি অসুর হিসেবে। মুসলমানদের টুপি-দাঁড়িকে সেঁটে দেয়া হয় তাদের দৈত্যাকার দেহাবয়বে। বাদবাকি মুসলমানও তাদের কাছে মন্দ ও দানবীয় শক্তির ছানাপোনা।
মঙ্গল শোভাযাত্রা যে ভারতীয় আগ্রাসনের হাতিয়ার তা পরিষ্কার হয়ে যায়, যে দিন এতে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিকৃতি বহন করা হয়। ২০১৯ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রায় দেখা যায়, গোলাপি শাড়ি পরা এক নারীর প্রতিকৃতি। তার হাতে ছিল পেট্্রলবোমা। ২০১৮ সালের নিশি রাতের নির্বাচনের আগে আন্দোলন দমাতে সরকারি ষড়যন্ত্রের একটা অংশ ছিল আন্দোলকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। ওই সময় পেট্রলবোমা মেরে যাত্রীসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ জন্য দায়ী করা হয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে। অথচ গান পাউডার দিয়ে গাড়িসমেত যাত্রী পুড়িয়ে মারার বহু প্রমাণ রয়েছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে । দেখা গেল তার পরের বছর মঙ্গল শোভাযাত্রায় পেট্রলবোমাসমেত খালেদা জিয়ার দানবীয় প্রতিকৃতি। তিনি বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন করে কখনো হারেননি। প্রতিবার সর্বাধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে তার। ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলাদেশী এই নেত্রীকেও মঙ্গল শোভাযাত্রায় অমঙ্গলের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়। আনন্দ শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে যারা একে মঙ্গল শোভাযাত্রা বানিয়েছেন, তারা এ উৎসবকে সর্বজনীন বলতে খুবই উৎসাহী। তারা কখনো এ ব্যাখ্যা দেন না, কেন সেখানে রাজনৈতিক ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্টদের দৈত্যাকারে উপস্থাপন করা হয়। কেন খালেদা জিয়ার প্রতিকৃতি অমঙ্গলের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। খালি চোখে যা দেখা যায় সেটা হচ্ছে এরা ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা।
আনন্দ শোভাযাত্রাকে মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম দিয়ে যারা ভারতীয় আধিপত্য ও হাসিনার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চান, তাদের বড় একটি চক্র বাংলাদেশে রয়েছে। এ অশুভ চক্রের কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক এলিটরা থাকলেও রাজনীতি ও মিডিয়ায় এরা শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ছায়ানট উদীচীসহ সারা দেশে সাংস্কৃতিক সংগঠনের আড়ালে মাঠপর্যায়ে এরা কাজ করে। বাম রাজনৈতিক দলগুলো এদের সমর্থন দিয়ে অবস্থান জোরালো করে। তবে এদের একটা অংশ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ভেতরও রয়েছে। নানাভাবে এরাও আধিপত্যবাদের অবস্থান পোক্ত করতে কাজ করে যায়। এদের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে মিডিয়া। বাম দলগুলোর জনসমর্থনের অভাব পুষিয়ে নিতে মিডিয়া অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকার রাখছে তাদের পক্ষে।
বাংলাদেশের মিডিয়ার বৃহত্তর অংশ ভারত ও মুসলমান প্রশ্নে বিতর্কিত অবস্থান গ্রহণ করে। তারা হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন দেখতে পায় না। এ কারণে ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নিধন চলছে সে ব্যাপারে তারা চুপ। অন্য দিকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে হইচই ফেলে দেয়। যেখানে এ ধরনের বেশির ভাগ ঘটনা বোগাস প্রচারণা ছাড়া অন্য কিছু নয়। রাজনৈতিক ইসলামকে কুপোকাত করতে এরা অগ্র সেনানী হিসেবে কাজ করেছে। যে অপরাধ মুসলমানরা করেনি তার দায়ও মিডিয়া মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। গুম, খুন ও গুপ্ত কারাগার তৈরি করে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে নিষ্ঠুর কায়দায় হাসিনা দমন করতে পেরেছেন মিডিয়াকে সহচর হিসেবে পাওয়ায়। এরাই মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ যত হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প আছে তার পৃষ্ঠপোষক।
অন্তর্বর্তী সরকার এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের হাত থেকে রক্ষা করে একে আনন্দ শোভাযাত্রা নাম দিয়ে উদযাপন করেছে। আধিপত্যবাদের মিলিত চক্র মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন এবং তাদের কর্তৃত্ব খর্ব হওয়া মেনে নিতে পারেনি। বামপন্থী কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ও বিচ্ছিন্ন কিছু ব্যক্তি নাম পরিবর্তনের সমালোচনা করেছে। এদের সমালোচনার কোনো সারবত্তা নেই। কেন নাম পরিবর্তন করা যাবে না তার যুক্তি না দিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কারওয়ান বাজার থেকে প্রকাশিত পত্রিকা যুগল গুরুত্বের সাথে এদের ক্ষোভ তুলে ধরেছে। বাংলা পত্রিকাটি ‘অশনিসঙ্কেত বলছে ছাত্র ফ্রন্ট’ নামে প্রকাশিত খবরে বলছে, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নববর্ষের নামকরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। ছাত্র ফ্রন্ট এক বিবৃতিতে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পাল্টানোর সিদ্ধান্তকে মুক্ত সংস্কৃতির চর্চার জন্য অশনিসঙ্কেত হিসেবে আখ্যায়িত করে।
ইংরেজি পত্রিকাটি নিজ থেকে উদ্যোগ নিয়ে বাম নেতা প্রফেসর আনু মুহাম্মদ, জুনায়েদ সাকিসহ আরো কয়েকজনের বক্তব্য এনে শূন্যমাঠে যেন কিছুটা প্রতিরোধ খাড়া করানোর চেষ্টা করল। অথচ এরা কখনো একটা সংবাদ করেনি মঙ্গল শোভাযাত্রায় কেন ইসলামী রাজনীতিক ও জাতীয়তাবাদ নেতাকে দানবায়ন করা হলো তা নিয়ে। হিন্দুধর্মের মঙ্গলের প্রতীক পেঁচা, ইঁদুর, গণেশ, হনুমান, হাঁস, ষাঁড়, বাঘ, সিংহ, ময়ূর ও হাতির মুখোশ নিয়ে করা শোভাযাত্রা কিভাবে সর্বজনীন উৎসব হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেনি। উল্টো বিপুল প্রচারণা চালিয়ে সারা দেশের মানুষকে এই চাপানো সংস্কৃতি গ্রহণে উঠেপড়ে লেগেছিল।
এ পত্রিকা দুটো একই দিন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের এ-সংক্রান্ত বিবৃতি ছাপায়নি। যেখানে সংগঠনটি একটি গুরুতর দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, হিন্দুদের জন্মাষ্টমীর ধর্মাচার মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে বাংলাদেশে সবার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলা বর্ষবরণকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আড়াল নিয়ে যেভাব পালন করা হচ্ছিল সেটি জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানের সাথে অনেকটাই মেলে। এ দিন শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণ হলেন সনাতন ধর্মের সর্বোচ্চ দেবতা। হেফাজত আনন্দ শোভাযাত্রাকে পরবর্তীতে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ দেয়াকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আগ্রাসনবাদী এ সাংস্কৃতিক অভিজাতরা মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইউনেস্কোর কালচারাল হেরিটেজ অন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হয়। হেফাজত ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পুনর্বিবেচনা ও ভুল সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। এ জন্য তারা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার প্রতি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিবৃতিতে।
একই দিন পয়লা বৈশাক সামনে রেখে ‘জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের’ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছিল। সংগঠনটি নববর্ষে দিনব্যাপী উদযাপনের একটি ঘোষণা দেয়। চারুকলার মতো তারাও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করে। ‘বাঙালি মেজবান’ নামে খানাপিনা ও দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল তাদের। দুটো পত্রিকাই খবরটি এড়িয়ে গেছে।
নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিতর্কিত ছায়ানটের বিস্তারিত খবর দিয়েছে তারা গুরুত্বের সাথে। চারুকলায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’, ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ পরিবর্তিত হওয়ায় অধিপত্যবাদের যে পরাজয় ঘটেছে তা ছায়ানটের অনুষ্ঠানে উসুল হচ্ছে। ছায়ানটের অনুষ্ঠানে থাকছে ‘আলোর পথের যাত্রার আহ্বান’। হাসিনার ফ্যাসিবাদ যে চূড়ান্ত অন্ধকার ছিল এটি তারা স্বীকার করেন না। বাংলাদেশের ছাত্র নাগরিকরা তকে পরাস্ত করেছেন। ছাত্র নাগরিকরা মূলত অন্ধকার দূর করে আলো এনেছেন। ছায়ানটের ‘আশার আলো’ কোনটা বাংলাদেশের মানুষ জানে না।
ছায়ানট উদীচীসহ আরো কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের রাজনৈতিক ও মিডিয়া উইং এক হয়ে তাদের কাক্সিক্ষত পথে বাংলদেশকে নিয়ে যেতে চায়। তারা এমন সব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অনুভূতিকে আঘাত করে। ছায়ানটের সনজিদা খাতুন কিছু দিন আগে মারা গেছেন। তার শেষকৃত্য হয় রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে। হিন্দুদের শেষকৃত্যও এভাবে হয় না। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব সাহিত্যের এক নক্ষত্র। কিন্তু তিনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। তিনি জমিদার ছিলেন। প্রজা শোষণের অভিযোগ থেকে মুক্ত ছিলেন না। আবার তিনিও হিন্দু ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন না। জীবনের একপর্যায়ে তিনি ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী হন। এ দিকে সনজিদা তার মুসলমান নামটি পরিবর্তন না করে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে জীবনের ইতি টেনেছেন। তিনি তার নাম পরিবর্তন করে এমনটি করলে মুসলমানরা হৃদয়ে আঘাত পেতেন না। বাংলাদেশে একশ্রেণীর মুসলমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে; তারা প্রকৃত মুসলমান কি না। না তারা একটি মুসলমান নাম গ্রহণ করে এ ধর্মকে হেয় করতে নিজেদের ব্যবহার করে চলেছেন?
রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে তার পরিচয় শনাক্ত করতে হবে। এ পরিচয় ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে কাউকে ছোট বা হেয় করবে না; এক সূত্রে বাঁধবে। সুনির্দিষ্ট করে বললে এক লাখ ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের জনগোষ্ঠীর পরিচয় হবে বাংলাদেশী। এত দিন আধিপত্যবাদ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সাথে মিলে আমাদের ওপর হিন্দুত্ববাদ চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে। ছাত্র নাগরিকরা এই মিলিত অপশক্তিকে ৫ আগস্ট উৎখাত করেছে। তবে এদের পক্ষে মাঠে যারা কাজ করেছে তাদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক অক্ষত রয়ে গেছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এরা আবার এই অপশক্তির আগমনের পথ রচনা করতে পারে।
আওয়ামী লীগ নেই কিন্তু তাদের সহযোগী বামরা রয়ে গেছে। মাগুরার শিশু ধর্ষণের উছিলায় তারা মাঠে নেমেছিল। তার চেয়েও অনেক বেশি শক্তি নিয়ে ফ্যাসিবাদ সহযোগী মিডিয়া রয়ে গেছে। যারা বাংলাদেশপন্থী সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হাতছাড়া করে না। চারদলীয় জোট সরকার যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি করেনি সেগুলোকেও কূটকৌশলে এই মিডিয়া তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল; অথচ ব্যাংক লুট, মুদ্রা পাচার করে দেশ দেউলিয়া করে দেয়া, গুম, খুন ও গুপ্ত কারাগার তৈরিসহ সীমাহীন মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে চিহ্নিত এই মিডিয়া হাসিনাকে কোনো প্রশ্ন করেনি। দেশকে শান্তি স্থিতিশীল ও উন্নতির মসৃণ পথে নিতে হলে ফ্যাসিবাদী শক্তির সহযোগীদের অপকর্মকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে; অন্যথায় আবার আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ তাদের সহযোগীদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।