
ইরানিয়ান একটি প্রবাদ আছে : ‘A good neighbour is better than one’s relatives’ আমার ধারণা, ইরানিয়ানরা এই প্রবাদটির মর্মার্থ যতটা বুঝেছেন, তার চেয়ে ঢের বেশি বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বুঝে যাচ্ছেন কখনো সীমান্তের কাঁটা তারে ঝুলন্ত লাশ হয়ে, কখনো পাখির মতো গুলি খেয়ে, কখনো শৃগাল কুকুরের মতো টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া লাশ হয়ে, কখনো বন্দি হয়ে, কখনো বা আহত হয়ে। আর এমনটি হরহামেশাই ঘটছে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে ও মানচিত্রে বিরল অথচ সে দেশটি বলে বাংলাদেশ নাকি তাদের বন্ধুদেশ।
জুলাই ৩৬-এর শিক্ষার্থী ও জনতার বিপ্লবের পর দিল্লি প্রচার করে বাংলাদেশ তাদের জন্য ‘সিকিউরিটি থ্রেট’। এটি পুরোপুরি ইসরাইলি বয়ান। সাম্প্রদায়িক, বর্ণবাদী ও জেনোসাইডাল। ইসরাইলের কাছে ফিলিস্তিন মাত্রই ‘সিকিউরিটি থ্রেট’। এ জন্য এই থ্রেট’কে কনটেইন করার জন্য তারা অসলো চুক্তির মাধ্যমে একটা বশংবদ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (Palestine Authority) পশ্চিমতীর ও গাজায় বসিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের ২২ ভাগকে ফিলিস্তিন হিসেবে প্রচার করা (যেন ৭৮ ভাগ ইসরাইল নিয়ে কোনো কথা না ওঠে) এবং ওই ২২ ভাগের দৈনন্দিন বেসামরিক লোকপ্রশাসনিক কার্যক্রম ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে দিয়ে করানো আর জলস্থল অন্তরিক্ষের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা। এটাকেই আমরা বলতে পারি জিওগ্রাফি মাইনাস ডেমোগ্রাফি (Geography minus Demography)।
আইরনিটা হলো, তারা ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড নিজেদের করায়ত্তে রাখবে কিন্তু ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর কোনো দায়িত্ব নেবে না। চিন্তার বিষয় হলোÑ অবিকল না হলেও এই মডেলের সঙ্গে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের বেশ কিছু মিল দেখা যায়। তারা এখানে একটা আজ্ঞাবহ সরকার বসাতে সব সময়ই প্রাণান্তকর কোশেশ করে যাচ্ছে, যা হবে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের মতো পৌর কর্তৃপক্ষ। আর নিরাপত্তা হুমকির নামে বাংলাদেশের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে রাখতে চায়। বস্তুত, আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছিল ইন্ডিয়ার পিএলও টাইপ কর্তৃপক্ষ।
পাঠক খেয়াল করুন দিল্লি এখন কী কী করছে, তারা নিজেদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ দাবি করছে অথচ একজন পতিত ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশবিরোধী হরেক রকমের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছে। এটা শুধু বিজেপিই নীতি নয়, কংগ্রেসেরও নীতি। আপনি যদি কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের কথা খেয়াল করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নাকি দিল্লির ঐতিহাসিক রিলেশনশিপটা কেমন। এখন তাদের ‘ঐতিহাসিক বন্ধু’ হাসিনা বিপদে পড়েছে, তাই তাকে আশ্রয় দিয়ে বিজেপি সরকার নাকি ভারতীয় গণতন্ত্রের ‘মান’ রক্ষা করেছে! একজন গণহত্যাকারীকে জায়গা করে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে দিল্লির এস্টাবলিশমেন্ট উষ্মা ও ক্ষোভ তৈরি করছে। এরপর তারাই আবার তাদের সিজোফ্রেনিক (schizophrenic) গোদি মিডিয়াগুলোয় প্রচার করছে বাংলাদেশের জনগণ ‘ভারতবিরোধী’।
আদতে বাংলাদেশের জনগণ ইন্ডিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে নয়; দিল্লির এস্টাবলিশমেন্টের বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। গণহত্যাকারীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া কি ভারতীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য? এটাই কি দিল্লির তথাকথিত ‘স্ট্যান্ডার্ড’? আপনারা বাংলাদেশকে ‘সিকিউরিটি থ্রেট’ হিসেবে বিবেচনা করবেন অথচ হাসিনাকে আশ্রয় এবং প্রতিবিপ্লবী কাজ করতে দিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংকট তৈরি করবেন আর বলবেন বাংলাদেশের মানুষ ভারতবিরোধী। বাংলাদেশ কোনোভাবেই ইন্ডিয়ার ‘সিকিউরিটি থ্রেট’ নয়; বরং প্রতিবেশী। বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি করে, দিল্লিকে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইলে এটা আপনাদের বন্ধ করতে হবে।
যাই হোক, বাংলাদেশের আগের যেকোনো সরকারের চেয়ে কাঠামোগতভাবে ইউনূস সরকার কিছুটা আলাদা। কাগজে-কলমে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। কিন্তু এই স্লোগানের বাস্তবায়ন হয়নি কখনো। আর হওয়ার সম্ভাবনাও কম, কারণ রাষ্ট্র থাকলে শত্রুও থাকবে। এটাই তো স্বাভাবিক।
শেখ মুজিবের সরকার চীনা ব্লক, সৌদি ব্লককে কাছে টানতে পারেনি; জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সরকার সোভিয়েত আর ভারতের বিপক্ষে ছিল, এরশাদের সরকার অবশ্যই ভারতবিরোধী ছিল না। হাসিনা সরকার পাকিস্তানকে কাছে টানতে চায়নি, ভারতের অন্যায় আবদার রাখতে গিয়ে সার্ক ধ্বংস করে দিয়েছে। আর যেভাবে বাংলাদেশকে তিনি ভারতের উপনিবেশে পরিণত করেছিলেন সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ব্যর্থতা।
ড. ইউনূস স্বাভাবিকভাবেই ওনাদের চেয়ে বেশ আলাদা, কারণ ওনার মতো কেউ কখনো বড় বাংলার মসনদে বসেনি।
ড. ইউনূস ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব ঘটেছে, যা বাংলাদেশে বিগত ৫৩ বছরে ও দেখা যায়নি। যেমন : উনি ক্ষমতায় আসার পর পূর্ব-পশ্চিমের বড় দেশগুলো থেকে অভিনন্দন এসেছে। একেবারে মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে লাতিন আমেরিকাÑ কোন দেশ এই অনির্বাচিত ইউনূস সরকারকে নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি। দেশ-বিদেশে সবার গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় পররাষ্ট্রীয় চ্যালেঞ্জ, যেটা তারা খুব ভালোভাবেই উতরে গেছে।
আর দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে ড. ইউনূস স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন মোদিকে। হিন্দুদের নির্যাতন নিয়ে কথা হয়েছে। এমনকি অতিসম্প্রতি তিনি কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াকে ইন্টারভিউ দিয়েছেন এবং সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে, বলেছেন বাংলাদেশ হিন্দু নির্যাতন হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, ধর্মীয় কারণে নয়।
তা ছাড়া, পাকিস্তানের সঙ্গে গত ১৫ বছর আমাদের অপ্রয়োজনীয় দূরত্ব সৃষ্টি করে রেখেছিল ফেসিস্ট হাসিনা সরকার। ৫৪ বছর আগের যুদ্ধ দিয়ে ইতিহাস চলে, জাতীয় চেতনা বা সংস্কৃতি চলে, পররাষ্ট্রনীতি চলে না। মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে হাসিনা সরকার অযৌক্তিকভাবে আমাদের স্বাভাবিক ট্রেড পার্টনার পাকিস্তানকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। ইউনূস পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে সবার সামনেই বললেন, ‘আমরা সার্ক পুনরুদ্ধার করতে চাই’। উল্লেখ্য যে, এর আগে ২০১৬ সালের সার্ক সামিট ইসলামাবাদে হওয়ার কথা ছিল। হাসিনা আর মোদি তখন প্ল্যান করে যেতে রাজি হননি। তখন থেকেই সার্ক অকার্যকর। মূলত হাসিনা মোদির রসায়নে সার্ক অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর বাইরে ইউনূস সরকার পাকিস্তান থেকে অস্ত্র কিনতে যাচ্ছে, ড. ইউনূস অস্ত্র গোপনে কিনতে পারতেন, কারণ অস্ত্রের চালান বেশিরভাগ সময় গোপনে আসত। কিন্তু ইউনূস পাকিস্তান থেকে প্রকাশ্যে অস্ত্র কিনছেন। এর উদ্দেশ্য ভারত আর মিয়ানমারকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া।
ড. ইউনূস আসিয়ানের সভাপতি দেশ মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন উনি বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য করতে চান। তা ছাড়া মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রয়েছে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং মালয়েশিয়ায় সাতটি ইউনূস সেন্টার রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বাংলাদেশে এসেছেন ৫৩ সদস্যের এক বিশাল বহর নিয়ে এবং সেখানেও আলোচনা হয়েছে আসিয়ানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বলে মনে করি। এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মুক্তির পথ। এর কারণটা জিওপলিটিক্যাল।
বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটস্থ প্রতিবেশী হলো উলফলেন্ড (ভারত)। ভারতেরও সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশ। ভারত আর বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে দুটো আলাদা সত্তা হতে পারে কিন্তু ভূগোল, জাতি, ইতিহাস, রাজনীতি বিবেচনায় এই দুটো মিলে একটাই দেশ। এর সঙ্গে যুক্ত নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান । এগুলো প্র্যাকটিক্যালি সব এক দেশ। এই একটা দেশের মধ্যে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা, কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া মানে অত্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়, বরং দেশের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রকে অস্বীকার করা।
দেশভাগ এই স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রকে অস্বীকার করেছে। ফলে ভারত ছাড়া বাকি সব দেশ, এমনকি নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাও ছোট ছোট খাঁচায় পরিণত হয়েছে। এই খাঁচাগুলোর আকার ছোট। যার কারণে কেউ কোনো দিন স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে না। প্রত্যেকটা খাঁচা ভারতের উপনিবেশ। এই অবস্থার জন্য মোদি, হাসিনা, খালেদা বা অন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না। ভূগোলটাই এ রকম যে এই খাঁচাগুলোর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে।
ভারতনির্ভরতা না কাটালেও ভারতের প্রভাব অন্তত অর্ধেকে নামিয়ে আনার, আমাদের দেশকে অর্থনৈতিক আর সাংস্কৃতিকভাবে মুক্ত করার একটা পথ হতে পারে আসিয়ান। আমরা আসিয়ানের ঠিক বর্ডারে বাস করি। সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের কোনো মিল না থাকলেও অর্থনৈতিকভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোগতভাবে অনেক মিল আছে।
আসলে যেকোনো আঞ্চলিক সহযোগিতার প্ল্যাটফরমে যদি একটা দানব বাস করে, তাহলে সে প্ল্যাটফরম কাজ করে না। যে কারণে চীন, রাশিয়া বা আমেরিকা নিয়ে কোনো আঞ্চলিক জোট করা যায়নি। এ একই কারণে সার্কও খুব একটা কাজ করবে বলে মনে হয় না । কারণ ভারতও একটা দানবের নাম ।
ইইউ আর আসিয়ান ঠিকই কাজ করছে, কারণ দুটোতেই সদস্যদেশগুলোর আয়তন, জনসংখ্যা, ক্ষমতার একটা ভারসাম্য আছে, যা সার্কের মধ্যে নেই আর পরিষ্কার করে বললে সার্কের বাকি সব দেশ এক করে দিলেও ভারতের অর্ধেক হবে।
তাই ভারতনির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে খালেদা জিয়ার সরকার ‘লুক ইস্ট’ পলিসি হাতে নিয়েছিল, যা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। লুক ইস্ট বাস্তবায়ন হলে বা আমরা আসিয়ানে ঢুকতে পারলে কী হবে? আপনি হানিমুনে আর কাশ্মীর যাবেন না। কারণ বাই রোড অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে আপনি ব্যাংকক যেতে পারবেন, ৫০ হাজার টাকা খরচে ইন্দোনেশিয়া ঘুরে আসা যাবে। চিকিৎসা করাতে আর চেন্নাই যাবেন না, গরিব হলে ব্যাংকক, মালয়েশিয়া যাবেন, বড়লোক হলে সিঙ্গাপুর। এমনকি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি সফরে এসে বাংলাদেশিদের দাওয়াতও দিয়ে গেছেন মালয়েশিয়ায় সস্তায় চিকিৎসা নেওয়ার জন্য।
আর সুবিধা হলো, চীনের সঙ্গে আমাদের বিআইসিএম করিডোর হওয়ার কথা ছিল গত দশকে। এটা হলে কলকাতা, ঢাকা, মিয়ানমারের মান্ডালায় এবং চীনের কুনমিং সড়কপথ ও পরে রেলপথ যুক্ত হতো, আমরা অনেক সহজে চীন যেতে পারতাম, চীন থেকে পণ্য আনতে পারতাম। এই ভয় থেকেই ভারত বিআইসিএম বাতিল করে নতুন প্রকল্প নিয়েছে যেখানে চীন, মিয়ানমার, ভারত আছে কিন্তু বাংলাদেশ রাখেনি ।
বর্তমান সরকারের কল্যাণে বাংলাদেশিরা ইতোমধ্যে চীনের কুনমিং থেকে চিকিৎসাসেবা নেওয়া শুরু করেছে, যদিও বাংলাদেশের উচিত নিজের স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করা যেন বাংলাদেশিদের কোথাও গিয়ে চিকিৎসা নিতে না হয়। চীনের বিআরআই প্রকল্প তখন বঙ্গোপসাগরকেও যুক্ত করতে পারবে। এবার আর আকিয়াব দিয়ে না, পায়রা আর মোংলা এতে যুক্ত হতে পারবে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে আমাদের শ্রমবাজার প্রসারিত হবে। প্রযুক্তির দিক থেকে বহুপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়বে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, হিন্দুত্ববাদ বা ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে শুরু হয়নি, বরং এ লড়াইটা শুরু হয়েছে প্রায় তিন হাজার বা সাড়ে ৩ হাজার বছর আগ থেকে। আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশে অস্ট্রিক, নিগ্রোদের পরে আসেন দ্রাবিড়রা তৎকালীন ইলাম বা বর্তমান ইরান থেকে প্রায় ৭০০০-৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বে। আমরা মূলত অস্ট্রিক এবং দ্রাবিড়দের মিশ্রণে গড়ে ওঠা একটা জাতি। অস্ট্রিকরা মূলত দ্রাবিড়দের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। দ্রাবিড়রাই সিন্ধু সভ্যতা স্থাপন করেছিল।
এই সিন্ধু সভ্যতাকে ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে ধ্বংস করেছিল ককেশাস অঞ্চল থেকে আসা আর্যরা, তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল বেদ। এ জন্যই ইতিহাসে তাদের সময়টাকে আর্য যুগ বা বৈদিক যুগ বলা হয়ে থাকে, এরপর তারা পুরা ভারতবর্ষটাকে আট ভাগে ভাগ করেছিল এবং ভারতবর্ষের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে বর্তমান বাংলাদেশের দিকে ঢুকতে চেয়েছিল, কিন্তু আমাদের বীর পূর্বপুরুষরা তাদের সঙ্গে টানা ৫০০ বছর যুদ্ধ করে পরাজিত করেছে।
পরাজিত হয়ে ভাগীরথী নদীর ওপারে তাদের সীমানা নির্ধারণ করল, যার নাম দিল আর্যাবর্ত বা আর্যদের পবিত্র ভূমি। সুতরাং এ দেশের মানুষ পরাজিত হব না। হিন্দুত্ববাদীদের হেজিমনির বিরুদ্ধে কাউন্টার হেজিমনি তৈরি হবে এবং ব্রাহ্মণ্যবাদীদের গ্রেন্ড-নেরেটিভ ও মেটা-নেরেটিভের ডমিন্যান্ট ডিসকোর্সগুলো ভেঙে চুরমার করে ইউনিভার্সিলিটির দিকে এ দেশ এগিয়ে যাবে।
শাহীদ কামরুল
লেখক : সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক ও গবেষক ফ্রাই ইউনিভার্সিটি বার্লিন, জার্মানি