Image description
 

১৮ থেকে ২২ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। অনেকটা সামনের সারিতেই ছিলাম। ভয়ংকর পরিস্থিতি ছিলো তখন। আন্দোলন অনেকটা ঝিমিয়ে যায়। কারফিউ শিথিল হচ্ছিল। অফিস আস্তে আস্তে খোলা হচ্ছিল। তখন অনেকটা হতাশ হয়ে ঢাকা থেকে আমার বাসা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চলে আসি ২৪ জুলাই। বাসাতেই ছিলাম দুদিন।

 

২৬ জুলাই (শুক্রবার) রাতে আমি আর আমার ছোট ভাই ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ রাতে দরজায় বাহির থেকে শব্দ করছে। তখন ঘুম ভাঙলে ফোনটা এক পলক হাতে নিয়ে দেখি রাত ১:১৩ বাজে। আমার ঘুম ভাঙার সাথে সাথে আমার ছোট ভাইয়ের ঘুম ভাঙে, তখন ছোট ভাই বলে ভাই দরজা খুলবো, তখন বুঝতে পারি যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আসছে। কেননা, মেইন গেইটে তালা দেওয়া আর সেই তালার চাবি আমার কাছে। তখন ছোট ভাই দরজা খুলে বলে আপনারা কারা, গেইটে তালা দেওয়া কিভাবে ডুকছেন তখন বলে ভেতরে আসামি আছে বলেই আমার ছোট ভাইকে ধাক্কা দিয়ে কয়েকজন রুমে প্রবেশ করে।

 

আমি তখনও বিছানায় শুয়ে আছি একজন আমার হাতে ধরে বলে তোর ফোন কই, নাম কি আমি নাম বলার পর সে আমার বালিশের নিচ থেকে মোবাইল নিয়ে বলে তোর নাম্বার বন্ধ কেন। তখন রুমের ভেতর ৮ থেকে ১০ জন সবাই বিছানার নিচে, সামনে থাকা টেবিলে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে ছিল, এ সময়ের ভেতরে পাশের রুমে থাকা মা এবং বোন জেগে উঠে। কিন্তু কয়েকজন আমার মাকে আলাদা নিয়ে যায়। আমার তখন লুঙ্গিপরা, ওরাই একটা প্যান্ট আর শার্ট দেয়, আমাকে আর আমার ভাইকে তাদের সাথে যেতে বলে। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে বলে আইনের লোক। রুম থেকে বের হওয়ার পর রুমের সামনে এবং বাসার সামনে কমপক্ষে ৩০-৪০ জন লোক সবাই সাদা পোশাকে। পুরো বাসা ঘেরাও করেছিল। এমনকি বাসার সামনের এবং রুমের সামনের লাইটও তারা খুলে ফেলে। আমাকে এবং আমার ছোট ভাইকে বাসা থেকে নিয়ে যায়। তখন ভয় কাজ করছিল কারণ আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে গেলে তো বিপদ, কেননা এমন কেউ নাই যে খোঁজ করবে আমাদের।

 

বাসা থেকে মেইন রোড ২ থেকে ৩ মিনিটের দূরত্ব। মেইন রোডে তাদের মাইক্রোবাস ছিল। মাইক্রোবাসে তোলার সময় একজন বলছিল আরেকটা কই, তখন একজন বললো আসামি একটাই ওইটা ছেড়ে দিছি, তখন কিছুটা সাহস কাজ করছিল। মাইক্রোবাসে উঠানোর পর যখন পেছনের সিটে যেতে বলে তখন দেখি পিছনের সিটে দুজন র‍্যাবের ড্রেসপরা তখন বুঝলাম যে তারা র‍্যাবের লোক। তারপর আমার চোখ বেঁধে ফেলে। সাদা পোশাকে নিয়ে যাওয়ায় আমার পরিবার ভেবেছিল তারা ডিবি। এরপর কোথায় নিয়ে যায় জানি না। একসময় গাড়ি থামার পর একটা রুমে নিয়ে যায়, তা দেখলেই বুঝা যায় টর্চার সেল। সেখানে অনেকক্ষণ আমাকে চোখ, হাত বেঁধে নির্যাতন করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা বার বার বলছিল তাদের প্রশ্নের উত্তর দিলে আমাকে ছেড়ে দিবে। এরপর রাত ৩টায় একটা রুমে নিয়ে যায়। সেখানে ছোট একটা লেখা চোখে পড়ে র‍্যাব ১১ আদমজীনগর, তখন বুঝতে পারি এটা নারায়ণগঞ্জ। তখন একটা ভয় কাজ করছিল যদি ক্রসফায়ার দিয়ে দেয়।

 

ছোট একটা রুমে একা একা আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। ২৪ ঘণ্টা র‍্যাবে রাখার পর তারা শনিবার রাত ১টায় নারায়ণগঞ্জ ডিবিতে হস্তান্তর করে আমাকে। সেখানে ডিবি ২০ ঘণ্টা রেখে রাতে কোর্টে না তুলেই রোববার রাত ৯টার দিকে কারাগারে পাঠায়। আটক থাকাবস্থা র‍্যাব ও ডিবিকে বার বার বলছিলাম আমার পরিবারকে জানাতে তারপরও তারা পরিবারকে জানায়নি। নিখোঁজ দুদিন বোন আর ভাই নারায়ণগঞ্জ থানায়, ডিবিতে, ঢাকার সিএমএম কোর্ট, ডিবির হেডকোয়ার্টারে ঘুরেছে আমার সন্ধানে। কিন্তু কেউ কোনো সন্ধান দেয়নি। তখন সবচেয়ে টেনশন ছিল পরিবার নিয়ে। কেননা, তারা তো জানে না, আমি কোথায় আছি। কারাগারের অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্য এক সময় লিখব।

 

আবু হানিফ

লেখক: উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক

গণঅধিকার পরিষদ।