
পরিকল্পনা কমিশনের চাপাচাপিতে রোহিঙ্গা উন্নয়ন প্রকল্পের ১৮ খাতে ব্যয় কমছে। এসব খাতে বেশি খরচের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ‘ইন্টিগ্রেটেড সার্ভিস অ্যান্ড লাইভলিহুড ফর ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পিপল অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটিস ইমপ্রুভমেন্ট’ নামের নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫২ কাটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ২৩২ কোটি ২৮ লাখ এবং অনুদান ৩০৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গাদের পানি সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধান হবে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এটিসহ মোট ১৫টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬৮৬৮ কোটি টাকা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুমোদন পেলে আগামী মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে রোহিঙ্গা উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ বিষয়ে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, এই পদ্ধতি মান্ধাতার আমলের। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বেশি ব্যয় ধরবে আর পরিকল্পনা কমিশন কমিয়ে দেবে। এটা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। এক্ষেত্র ব্যয় র্যাশনালাইজেশন করা দরকার। সেটি না করে ব্যয় কমানোতে কোনো ক্রেডিট নেই। অর্থাৎ দেখতে হবে মন্ত্রণালয় যে প্রস্তাব করেছে সেটি আসলেই লাগবে কিনা। এখন সেটি না করে যদি ব্যয় কমিয়ে দেওয়া হয় তবে কাজের মান খারাপ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোয় লাভের চেয়ে লোকসানের শঙ্কা থাকে। তবে যদি সত্যিই তারা প্রকৃত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রস্তাব দেয় তবে অবশ্যই তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। কেননা এভাবেই প্রকল্পে অনিয়ম ও অপচয় হয়ে থাকে।
জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ অব্যাহত রাখা, ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, উখিয়ায় ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণাগারের উন্নয়ন এবং টেকনাফ পৌরসভায় নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য পাইপলাইন তৈরি হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় ১৮ খাতে ব্যয় বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন খাতের খরচ কমিয়ে ধরে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ সে অনুযায়ী ব্যয় কমিয়েছে। খাতগুলো হলো-কন্টিনজেন্ট স্টাফ খাতে প্রস্তাব ছিল ৫০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০ লাখ টাকা কমিয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। হায়ারিং চার্জ খাতে দেড় কোটি টাকা থেকে ৬৫ লাখ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ৮৫ লাখ টাকা। সেমিনার ও কনফারেন্স খাতে ১৮ লাখ থেকে ১০ লাখ কমিয়ে করা হয়েছে আট লাখ টাকা। রেন্টাল অব আদার অ্যাসেট খাতে ২০ লাখ থেকে ১৫ লাখ কমিয়ে করা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। প্রকাশনায় ৫০ লাখ থেকে ৩০ লাখ কমিয়ে করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। অফিস ভবন ভাড়া খাতে ৫০ লাখ থেকে ২০ লাখ কমিয়ে করা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। টেস্টিং ফির ক্ষেত্রে ২০ লাখ থেকে ১০ লাখ কমিয়ে করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এভাবে অন্যান্য খাতের খরচও কমানো হয়েছে।
একনেকে উঠতে যাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো-উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ (দ্বিতীয় পর্যায়), সাতটি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট মাদকাশক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ, নবনির্মিত চারটি মেরিন একাডেমিতে সিমুলেটর ও সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এক্সেস টু জাস্টিস ফর উইমেন : স্ট্রেনদেনিং কমিউনিটি ডিসপুট রেজল্যুশন অ্যান্ড ইমপ্রুভিং কেস ম্যানেজেমেন্ট প্রকল্প। আরও আছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন, সার সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ, কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকার ও প্রতিরোধ সমন্বিত সেবা জোরদারকরণ, দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম, উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ, ইমপ্রুভমেন্ট অব দ্য পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, প্রকিউরমেন্ট মডার্নাইজেশন টু ইমপ্রুভ পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি এবং স্ট্রেনদেনিং পাবলিক অডিট থ্রো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ক্যাপাসিটি প্রকল্প।