শাহরিয়ার কবির ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠার নেপথ্য নায়ক ছিলেন
শাহরিয়ার কবির ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠার নেপথ্য নায়ক ছিলেন
আলী আহমদ মাবরুর
·
শাহরিয়ার কবির সাহেবকে আমি খুব কাছ থেকে টানা একটি মাস দেখার সুযোগ পেয়েছি। তাকে নিয়ে স্টাডি করেছি। তার মনস্তত্ত্ব ও বডি ল্যাংগুয়েজ পর্যবেক্ষণ করেছি। কারণ তিনি ট্রাইবুনালে আমার শহীদ পিতার মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের স্টার উইটনেস ছিলেন।
আমরা সবাই জানি, তিনি ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠার নেপথ্য নায়ক ছিলেন। ২০১০ সালে এই ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠারও প্রায় দুই যুগ আগে থেকে তিনি পুস্তক রচনা, গবেষণা, গোলটেবিল, সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে এই বিষয়ে কাজ করেছেন, জনমত গঠন করার কাজ করেছেন।
যে কোনো টপিকে আলোচনা করতে দিলেও সেটাকে টেনে যুদ্ধাপরাধের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার অসামান্য সক্ষমতা ছিল তার।
যাই হোক, ট্রাইবুনালে আমাদের দায়িত্বশীলদের বেশ কয়েকজনের মামলায় তার নাম সাক্ষী হিসেবে দেওয়া ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কার মামলায় তিনি আসবেন বা সাক্ষী হিসেবে বক্তব্য দেবেন তা আমরা নিশ্চিত ছিলাম না। আমাদের আইনজীবীরা বলতেন, তিনি যেহেতু ট্রাইবুনালের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড, তাই ওনারা যে মামলাকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর মনে করে, সে মামলায় তিনি আসবেন। আবার কেউ কেউ বলতো, ভারত যে মামলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়, ঐ মামলায় তিনি আসবেন।
এরকম একটা পরিস্থিতিতে হঠাৎ জানতে পারি, আমাদের মামলার প্রথম সাক্ষীই তিনি। অর্থাৎ তার জবানবন্দি দিয়েই আমাদের কেসের সাক্ষ্যগ্রহন শুরু হবে। আইনজীবীরা কয়েক দফা বৈঠক করলেন। ঠিক হলো, এডভোকেট মিজানুল ইসলাম তাকে জেরা করবেন।
নির্ধারিত দিনে শাহরিয়ার কবির সাহেব আসলেন। ছোট্ট একটা বিচার কক্ষ। অভিযুক্তের কাঠগড়ায় শহীদ আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ আর সাক্ষীর কাঠগড়ায় জনাব শাহরিয়ার কবির। অদ্ভুত এক দৃশ্য। তিনি বিশাল একটা জবানবন্দি দিলেন। আব্বার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ করলেন না। তবে তাত্ত্বিকভাবে পুরো মামলাটি এস্টাবলিশ করলেন।
এডভোকেট মিজান তখন খুব ব্যস্ত। জেরা করার প্রস্তুতি নেয়ার মতো সময়ও তার নেই। আমাকে তিনি অনুরোধ করলেন, শাহরিয়ার কবির সম্বন্ধে স্টাডি করার জন্য। আমি দিন কয়েকের ভেতর তার সবগুলো বই পড়লাম। তার বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার থেকে তথ্য নিয়ে মিজান ভাইকে দিলাম।
তিনিও সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে বেশ লম্বা জেরা করলেন। সাক্ষ্যগ্রহন ও জবানবন্দি শেষ হতে প্রায় মাসখানেক লেগে গেলো। শাহরিয়ার কবির আব্বার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট কথা না বললেও জামায়াত, ছাত্রসংঘ, মাওলানা মওদূদীসহ সাবেক দায়িত্বশীলদের নিয়ে অনেক কিছু বলেছিলেন। তাই তাকে জেরার সুযোগও ছিল অনেক।
আমি এই পুরোটা সময় ট্রাইবুনালে ছিলাম এবং ঐতিহাসিক এসব ঘটনাবলীর সাক্ষী হয়েছিলাম। গতকাল শাহরিয়ার কবিরের আটক হওয়ার কথা জেনে পুরনো সব স্মৃতি মনে এসে ভীড় করলো।
২০০১ সালে চার দলীয় জোট দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। ঠিক যেমনটা এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরও হয়েছে। শাহরিয়ার কবির সেই ক্যাম্পেইনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন। এটি তিনি নিজে স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের সবচেয়ে বড়ো পৃষ্ঠপোষক তিনি। ভারতীয় সংস্কৃতি ও ভারতীয় হেইজমোনি প্রতিষ্ঠা তার নিত্যদিনের এজেন্ডা। ভারত বিরোধী ও ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের নাজেহাল করা তার জীবনের মিশন।
যেহেতু বরাবরের মতোই দুর্বল মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, তাই এই বিগফিশকে আদৌ উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা, তা নিয়ে আমার সংশয় আছে। তবে আমার জায়গা থেকে আমি তার বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়ে রাখলাম।